কলকাতা: গঙ্গা ভাঙনের সমস্যা আর তার স্থায়ী সমাধানের ব্যাপারে কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে সরব হয়েছিলেন। কিন্তু দিল্লির মৌনব্রত অবস্থানে বিচলিত মুখ্যমন্ত্রী এবার চিঠি দিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। বৃহস্পতিবার নরেন্দ্র মোদিকে লেখা ওই চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, গঙ্গা-পদ্মা নদীর একাধিক জায়গায় ভাঙ্গন (Ganga Erosion) হচ্ছে। মালদা, মুশিদাবাদ ও নদিয়া জেলার একাধিক জায়গায় ভাঙ্গনের সমস্যা ক্রমেই গুরুতর আকার নিচ্ছে।
অত্যন্ত বিপজ্জনক ওই সমস্যার সমাধানে মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব অবিলম্বে ফারাক্কা ব্যারেজ প্রজেক্টের (Farakka Barrage) আরও প্রসার বা ব্যাপ্তি বাড়ানো উচিত। প্রধানমন্ত্রীকে (Prime Minister) লেখা চিঠিতে পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ আকার নিচ্ছে তাও বিস্তারিত আকারে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি ওই চিঠিতে তাঁর পরামর্শ সমস্যা মেটানোর জন্য কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের উচিত পরিস্থিতির পর্যালোচনা করা। প্রয়োজনে ওই বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফে যৌথভাবে পর্যালোচনা করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ওই চিঠিতে।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝাতে মুখ্যমন্ত্রীর চিঠিতে উঠে এসেছে গঙ্গা ও ফুলহার নদীর ভাঙনের প্রসঙ্গ। বিশেষত মানিকচক ব্লকের বিলাইমারি গ্রামের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে জানানো হয়েছে, লাগোয়া এলাকায় ব্যাপক নদী ভাঙনের জেরে গঙ্গা এবং ফুলহার নদীর মধ্যবর্তী সমতলের পরিধিও ক্রমশ কমছে। ২০০৪ সালে দুই নদীর মধ্যে ৪ কিলোমিটার দূরত্ব ছিল। বর্তমানে তা কমে হয়েছে মাত্র দেড় কিলোমিটার। এর ফলে সংলগ্ন এলাকার মানুষ বিপদের সম্মুখীন হচ্ছেন। নদীর দূরত্ব ক্রমশই কমে আসছে। যে দূরত্ব একসময় ছিল অন্তত ৪ কিলোমিটার সেই দূরত্ব এখন ক্রমাগত ভাঙ্গনের জেরে কমতে কমতে দেড় কিলোমিটার হয়ে গিয়েছে।
ভাঙন যে কতটা বিপজ্জনক তা বোঝাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই চিঠিতে জানিয়েছেন, এই ভাবে চলতে থাকলে ১৩১এ জাতীয় সড়কেও সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে। আর ওই জাতীয় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে যথেষ্ট সমস্যায় পড়বে রাজ্যের মূল দুই অংশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থায়। কারণ ওই জাতীয় সড়কটি উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ কে যুক্ত করেছে। চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি অন্য একটি চিঠিতে ফরাক্কা ব্যারেজ সংক্রান্ত সমস্যায় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রের জল শক্তি মন্ত্রকের তরফে তার উত্তরে জানানো হয়েছিল ৩৪২ কোটি টাকা খরচ করে ২০০৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ফরাক্কায় ভাঙন-বিরোধী সংস্কারের কাজ করা হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ, ওই একই এলাকায় তার পরেও বহু বার নদীর পাড় ভেঙেছে। আর এজন্যই সমস্যার স্থায়ী সমাধান চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।