নয়াদিল্লি: কিংফিশার এয়ারলাইন্স (Kingfisher Airlines) অর্থাভাবে ধুঁকছিল, অথচ সংস্থার মালিক বিজয় মালিয়া (Vijay Mallya) বিদেশে ৩০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের সম্পত্তি কিনেছেন। মুম্বইয়ের একটি কোর্টে সিবিআই (Central Bureau of Investigation – CBI) সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট (Supplementary Chargesheet) দাখিল করেছে, সেখানে মালিয়ার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, ২০১৫-১৬ সালে ইংল্যান্ড (England) এবং ফ্রান্সে (France) ৩৩০ কোটি সম্পত্তি কিনেছিলেন ভারতের তথাকথিত লিকার ব্যারন (Liquor Baron)। বর্তমানে তিনি পলাতক (Fugitive) এবং ঋণ জালিয়াতির মামলায় (Loan Fraud Case) অভিযুক্ত। আশ্চর্যের বিষয় হল, যে সময় তাঁর সংস্থা চরম অর্থ সঙ্কটের (Cash Crunch) মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল, সেই সময় এই বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি কিনেছিলেন তিনি। এই বিষয়টাই স্পেশ্যাল সিবিআই কোর্টের (Special CBI Court) নজরে আনার চেষ্টা করেছে।
আরও পড়ুন: Air India | Iconic Building | মূল্য ১,৬০০ কোটি, বিক্রি হচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়ার নরিমান পয়েন্টের অফিস
কিংফিশার এয়ারলাইন্সের নামে মালিয়া আইডিবিআই ব্যাঙ্ক থেকে ৯০০ কোটি টাকারও বেশি ঋণ নিয়েছিলেন। সেই টাকা তিনি শোধ দেননি। ব্যাঙ্ক তাঁর কাছ থেকে ঋণের অর্থ আদায় করার আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন মালিয়া। নতুন দাখিল করা সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে আগের চার্জশিটে উল্লিখিত ১১ জন অভিযুক্তের নাম রয়েছে। পাশাপাশি, আইডিবিআই ব্যাঙ্কের প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর (Buddhadev Dasgupta, Former General Manager, IDBI Bank) নামও যুক্ত করা হয়েছে।
তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত তাঁর পদের অপব্যবহার করছেন। সিবিআই’য়ের অভিযোগ, আইডিবিআই ব্যাঙ্কের অধিকারিকদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র (Conspiracy) করেছিলেন তিনি। ২০০৯ সালের অক্টোবরে বিজয় মালিয়াকে ১৫০ কোটি টাকার স্বল্প-মেয়াদী ঋণ (Short-Term Loan – STL) মঞ্জুরি ও বিতরণ (Sanction and Disbursement) করা হয়েছিল।
১৫০ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছিল, সেটা বুদ্ধদেব দাশগুপ্তরই পরিকল্পনা ছিল। বলা হয়েছিল, বিমান সংস্থা আগে যে ৭৫০ কোটি টাকার যে ঋণ নিয়েছিল, তার সঙ্গেই এটি শোধ দেওয়া হবে। কিন্তু, ঋণ দেওয়ার পর দেখা যায়, ক্রেডিট কমিটিকে (Credit Committee) দেওয়া প্রস্তাবে এটি আলাদা ঋণ হিসেবে দেখানো হয়েছে এবং মোট ঋণের সঙ্গে এটি আদায় করা হতে পারে। এইভাবে আইডিবিআই ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া বিজয় মালিয়ার ৭৫০ কোটি টাকার ঋণ পরিণত হয় ৯০০ কোটি টাকায়।
সিবিআই আদালতের দেওয়া অনুমতির ভিত্তিতে, তদন্ত চলাকালীন সিবিআই ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য (United Kingdom – UK), মরিশাস (Mauritius), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (United States of America – USA) এবং সুইজারল্যান্ড (Switzerland) লেটার্স রোগাটরি (Letters Rogatory – LR) পাঠিয়েছে। লেটার্স রোগাটরি হল, অনুরোধ চিঠি (Letter of Request)। এই চিঠির মাধ্যমে এক দেশের আদালত অপর দেশের আদালতকে সংশ্লিষ্ট দেশে বিচার প্রশাসনের সাহায্য চায়। সিবিআই আদালতে দাখিল করা চার্জশিটে বিদেশে তদন্তের যাবতীয় তথ্য উল্লেখ করেছে।
২০১৫-১৬ সালে ব্রিটেনে ৮০ কোটি টাকার (১২-১৩ মিলিয়ন গ্রেট ব্রিটেন পাউন্ড) সম্পত্তি এবং ফ্রান্সে ২৫০ কোটি টাকার (৩৫ মিলিয়ন ইউরো) সম্পত্তি কিনেছিলেন মালিয়া। চার্জশিটে এটাও বলা হয়েছে, ২০০৮ এবং ২০১৬-১৭ সালে মালিয়ার হাতে পর্যান্ত অর্থ ছিল, কিন্তু তাও তিনি কিংফিশার এয়ারলাইন্সের পিছনে ঢালেননি কিংবা ঋণ পরিশোধের চেষ্টাও চালাননি।
সিবিআই ছাড়াও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটও (Enforcement Directorate – ED) মালিয়ার বিরুদ্ধে অর্থ তছরুপের মামলায় পৃথক তদন্ত চালাচ্ছে। ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারি বিজয় মালিয়াকে পলাতক (Fugitive) হিসেবে ঘোষণা করেছে মুম্বইয়ের বিশেষ আদালত। পলাতক অর্থনৈতিক অপরাধী আইন (Fugitive Economic Offenders Act) অনুসারে কেউ পলাতক ঘোষিত হলে, তদন্তকারী সংস্থার হাতে ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে অভিযুক্তের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত (Confiscate) করার।