নয়াদিল্লি: মহাত্মা গান্ধি (Mahatma Gandhi) সাভারকরকে (Savarkar) ব্রিটিশ সরকারের কাছে ক্ষমা চাওয়ার পিটিশন (Mercy Petition) দায়ের করতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন ৷ আর মার্কস ও লেনিনের আদর্শে বিশ্বাসী মানুষজন সাভারকরকে ফ্যাসিস্ট বলে দাগিয়ে ভুল অভিযোগ করেন ৷ গত মঙ্গলবার “বীর সাভারকর : দ্য ম্যান হু কুড হ্যাভ প্রিভেন্টেড পার্টিশন” বইয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেছিলেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং (Rajnath Singh) ৷
রাজনাথের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে ৷ কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এর বিরোধিতা শুরু করে ৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদে থেকে বিনায়ক সাভারকরের মাহাত্ম্য প্রচারের জন্য রাজনাথ সিংকে কার্যত তুলোধনা করেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল (এআইএমআইএম) প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি । তাঁর মতে, এভাবে চলতে থাকলে, মহাত্মা গান্ধির পরিবর্তে খুব শীঘ্র সাভারকরকেই ভারতের ‘জাতির জনক’ ঘোষণা করবে বিজেপি ।
আরও পড়ুন-‘একটা গাছ কাটলেই আদিবাসীরা অপরাধী, উন্নয়ের নামে হাজার হাজার গাছ কাটলে প্রশংসা’
রাজনাথ ঠিক না ভুল বলেছেন, সেটা আলোচনার আগে সাভারকর কে, তার সম্পর্কে দু-চার কথা আলোচনা করে নিতে হয় ৷ আদতে, বীর সাভারকরের জীবনের দুটি পর্ব । গৌরবময় বিপ্লবীপর্ব এবং পরে ধিক্কৃত প্রতি-বিপ্লবীপর্ব।
১৮৫৭-এর মহাবিদ্রোহের আদর্শেই, শুরুতে তিনি সশস্ত্র আন্দোলনে বিশ্বাস করতেন । লন্ডনে বসে ১৯০৫-এর রুশ-বিপ্লবের আগুন তাঁকে উদ্দীপ্ত করে । নানাবিধ বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের জন্য ১৯১০-এ ব্রিটিশ সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে । পরের বছর আন্দামানের কুখ্যাত সেলুলার জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । এর পর বীর সাভারকরের জীবনের দ্বিতীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ পর্ব । কুখ্যাত মুচলেকা পর্ব ।
আরও পড়ুন-বুর্জ খলিফায় বিরাটদের বিলিয়ন চিয়ার্স জার্সি
১৯১১ সালে জেলে ঢুকে, কয়েক মাসের মধ্যেই, ব্রিটিশ-শাসকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে লেখেন তাঁকে যেন নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মুক্তি দেওয়া হয় । আন্দামানে সেলুলার জেলে থাকাকালীন এইভাবে একাধিক বার ব্রিটিশরাজের কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন। সরকার কান দেননি যথারীতি। এগারোর পর ১৯১৩ সালে আবার লেখেন। ১৯২১-এ তাঁকে দ্বীপভূমি থেকে ভারতীয় মূল ভূখণ্ডের জেলে স্থানান্তরিত করার আগে পর্যন্ত বারবার ব্রিটিশ-প্রভুর কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন এক সময়ের এই বিপ্লবী। মুচলেকায় স্পষ্ট লেখা ছিল, তিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে সরে দাঁড়াবেন এবং চিরকাল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রভুর জো-হুজুর হয়ে থাকবেন ।
সেই প্রসঙ্গ তুলেই বিতর্ক তৈরি করেছিলেন ৷ রাজনাথ তাঁর বইতে লিখেছেন, সাভারকর এই মুচলেকা দিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধির নির্দেশে ৷ কিন্তু, ইতিহাস বলছে, সাভারকরের মুচলেকার ঘটনা ঘটেছিল ১৯১১ ও ১৯১৩ সালে। গান্ধি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেন ১৯১৫ সালে । সুতরাং, সাভারকরকে পারমর্শ দেওয়ার কোনও সুযোগই ছিল না গান্ধির কাছে ৷
আরও পড়ুন-ষষ্ঠী-সপ্তমী-অষ্টমী, সতর্কতা উড়িয়ে বেপরোয়া ভিড়ের সঙ্গে বাড়ল করোনা গ্রাফ
যদিও, এই তথ্য উড়িয়ে সাভারকরের এক বংশধর রঞ্জিৎ সাভারকর দাবি করেছেন, সাভারকরকে ব্রিটিশের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার পরামর্শ মহাত্মা গান্ধিই দিয়েছিলেন, প্রমাণ তাঁর কাছে রয়েছে । রঞ্জিৎ বলেছেন, “আমার কাছে এমন নথি রয়েছে যাতে প্রমাণ হয়ে যাবে যে, গান্ধিজি সাভারকরকে পিটিশন দায়ের করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।”
সন্দেহ নেই, রাজনাথের মন্তব্যের পর থেকেই চলছে বিতর্কে ৷ এখন দেখার ইতিহাসের আসল তথ্য সামনে আসে কি না ৷