কলকাতা: একজন সকাল থেকে দৌড়ে বেড়ালেন গোটা বিধানসভার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। বুথ পরিদর্শন থেকে শুরু করে পুলিশের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। কোনও কিছুই বাদ রাখলেন না। অন্যজন সকাল থেকে কার্যত অন্তরালেই ছিলেন। সকাল ৭টায় ভোটগ্রহণ শুরু হলেও বেলা ৩টে ১৫-তে দেখা মিলল তাঁর। হাসিমুখে গাড়ি থেকে নেমে মিত্র ইনস্টিটিউটে ভোট দিলেন। কয়েক সেকেন্ডের জন্য শয়ে শয়ে ক্যামেরা ফোকাস ছিল তাঁর দিকেই। গাড়ি থেকে নামলেন, ভোট দিলেন, বেরিয়ে গেলেন।
প্রথম জন ভবানীপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। দ্বিতীয়জন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা থেকেই সবার নজর ছিল ভবানীপুর কেন্দ্রের দিকে। নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর কাছে সামান্য ভোটে পরাজিত হওয়ার পর ভবানীপুর উপনির্বাচন কার্যত মমতার কাছে প্রেস্টিজ ফাইট। প্রিয়াঙ্কার কাছে এই লড়াই দাগ কাটার। বিধানসভা নির্বাচনে এন্টালিতে স্বর্ণকমল সাহার কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছিল তিনি।
আরও পড়ুন: ভবানীপুরে ভুয়ো ভোটারের অভিযোগ বিজেপি প্রার্থীর, উত্তেজনা খালসা স্কুলের বুথে
মিত্র ইনস্টিটিউশনে বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দৌড়ে বেড়ালেন প্রিয়াঙ্কা। ভবানীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে বুথ পরিদর্শন করলেন বিজেপি প্রার্থী। তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে কমিশনে নালিশও জানালেন। খালসা স্কুলের বুথে ঢুকে ‘ভুয়ো’ ভোটারও ধরলেন। ‘চোর চোর’ বলে তাড়াও করলেন তাঁকে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকাল থেকেই অন্তরালে। পথে তাঁর সেনাপতি ববি, সুব্রত, অরূপ, মদনরা। গোটা প্রচারপর্বে বিধানসভার নানা এলাকার সভা করেছেন। বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানেও গিয়েছেন।
ভবানীপুরে দাঁড়িয়েই বেশ কয়েকটি সভায় মমতা বলেন, ‘আমি না জিতলে অন্য কেউ মুখ্যমন্ত্রী হবেন। আমাকে মুখ্যমন্ত্রী রাখতে ভোট দিন। আমার কাছে প্রতিটা ভোট দামি। আপনারা আবার আমাকে আশীর্বাদ করুন, যাতে ভবানীপুরেই থাকতে পারি।’ নির্দিষ্ট বোতাম টিপে ভোট দেওয়ার আবেদনও জানান। নন্দীগ্রামের নির্বাচনের একটি বুথে গেলেও ভবানীপুরে উপনির্বাচনের অন্তরালে থাকলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: ঘড়ির কাঁটায় ৩.১৫, মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভোট দিলেন মমতা
ভোট দিয়ে বেরোচ্ছেন মমতা
এর কারণ ঠিক কী? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ভবানীপুর মমতার গড়। ২০১১-র উপনির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে ৫০ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছিলেন তিনি। ২০১৬-তে ব্যবধান অর্ধেকে নেমে আসলেও ভোটে জেতার মার্জিন নেহাত কম ছিল না। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে মার্জিন আরও বাড়ান শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তৃণমূলের দুর্গ ভবানীপুরে জয় কার্যত সময়ের অপেক্ষা, তা বিলক্ষণ জানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সে কারণেই ময়দানে ‘খেলোয়াড়’দের নামিয়ে ঘরে বসেই ‘খেলা’ পরিচালনা করলেন মমতা। মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভোট দিতে আসার সময়ও মমতার চোখে মুখে ছিল আত্মবিশ্বাসের সুর। সাংবাদিকদের দিকে বেশ কয়েকবার হাতও নাড়েন তিনি। ভোট দিয়ে বেরিয়ে তৃণমূল প্রার্থী হাসিমুখে উঠে গেলেন গাড়িতে। একদলের ক্যাপ্টেন মাঠে-ময়দানে ঘুরে নজর কাড়ার চেষ্টা করলেন। অন্যদলের ননপ্লেয়িং ক্যাপ্টেন কয়েক মিনিটের জন্য মাঠে নেমেই ক্যামেরার ফোকাস নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন। কে জিতবেন, অপেক্ষা আর ৩ দিনের!
আরও পড়ুন: ভোট না দিলে আমায় পাবেন না, মুখ্যমন্ত্রী অপরিবর্তিত রাখার আর্জি মমতার