এটিকে মোহনবাগান–২ ইস্ট বেঙ্গল–০
(স্লাভকো, দিমিত্রি)
নাঃ কোনও অঘটন নয়। যা গত তিন বছর ধরে চলছে তাই হয়েছে। টানা আটটা ডার্বিতে এটিকে মোহনবাগান হারিয়ে দিল ইস্ট বেঙ্গলকে। এবং ডার্বিরিচ রঙ হয়ে রইল সবুজ মেরুনই। মোহনবাগানের এই জয় কোনও রকম জোড়াতালি দিয়ে জয় নয়। ভাল খেলে , প্রচুর সুযোগ তৈরি করে মাথা উঁচু করা জয়। ইস্ট বেঙ্গল যখন দশ নম্বর দল হয়ে মাথা নীচু করে আই এস এল শেষ করল, মোহনবাগান তখন তিন নম্বর দল হয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা জিইয়ে রাখল। আপাতত তারা তিন নম্বর। কুড়ি ম্যাচে তাদের পয়েন্ট হল ৩৪। সেমিফাইনালে যাওয়ার জন্য তারা প্লে অফ খেলবে ওড়িশা এফ সি-র সঙ্গে। দুই বিদেশির গোলে বাগানের এই জয় তাদের টিমের গভীরতরাই পরিচয়। তাদের মধ্যে এই স্লাভকো দামজানোভিচ বলে মন্টেনেগ্রেরির যে ছেলেটা প্রথম গোলটা করলেন, এটা তাঁর প্রথম ডার্বি। খেলেন সেন্টার ব্যাকে। এই রকম একটা হেভিওয়েট ম্যাচে ডিফেন্স সামলে কর্নারের সময় উঠৈ এসে গোল করে টিমের জয়টা অনেকটাই এগিয়ে দিলেন। আর সেটাকে সুনিশ্চিত করলেন দিমিত্রি পেত্রাতোস। সব মিলিয়ে তাঁর নয়টা গোল হয়ে গেল এবারের লিগে। আর ইস্ট বেঙ্গল? তাদের কপাল ভাল, আরও বেশি গোলে হারতে হয়নি। অবশ্য আরও গোল খেলেই বা কি বলার থাকত? দশ নম্বর টিম তিন নম্বরের কাছে হারবে এটাই তো স্বতঃসিদ্ধ। এটাই তো তিন বছর ধরে চলছে। একশো তিন বছরের ইতিহাসে ইস্ট বেঙ্গলের এই কলঙ্কজনক অধ্যায় যে কবে শেষ হবে কে জানে?
ম্যাচের শুরু থেকেই মোহনবাগানের দাপট ছিল বেশি। বল পজেশন থেকে শুরু করে আক্রমণ সবেতেই তারা টেক্কা দিয়ে গেছে লাল হলুদকে। ম্যাচের শেষে দেখা গেল বাগান কর্নার পেয়েছে ১১টা, ইস্ট বেঙ্গল সেখানে মাত্র একটা। বাগান একটা নির্দিষ্ট স্ট্র্যাটেজি নিয়ে খেলছিল। ইস্ট বেঙ্গলের বাঁ দিকটা তারা বেছে নিয়েছিল আক্রমণের জন্য। লেফট আউট আশিক কুরুনিয়ন, হুগো বুমো এবং দিমিত্রি পেত্রাতোসরা বার বার আক্রমণ করে গেছেন বাঁ দিক দিয়ে। এবং সেগুলো থেকে হয়তো গোল হয়নি , কিন্তু গোলের গন্ধ ছিল। একবার তো আশিকের পাস থেকে দিমিত্রির প্লেসিং গোলে না ঢুকে পোস্টকে চুমু খেয়ে বাইরে চলে গেল। মাঝ মাঠে গ্লেন মার্টিন্সের আক্লান্ত পরিশ্রম এবং বুদ্ধিদীপ্ত ফুটবল ইস্ট বেঙ্গলকে তেমন জায়গা দেয়নি। আর ইস্ট বেঙ্গল আক্রমণে সব চেয়ে ধারালো ফলা যে ছেলেটা সেই নাওরম মহেশ সিং তো খেলতেই পারলেন না। বেশি ভাল খেলার মানসিকতা নিয়ে মাঠে নেমে তিনি কি নার্ভাস হয়ে পড়লেন? ডান দিকে ভি পি সুহের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাঁর খেলায় দৌড় আছে, মাঝ মাঠে ড্রিবল আছে কিন্তু ফাইনাল পাস বাড়ানো নেই। আর লাল হলুদের দুই স্ট্রাইকার না হোমে, না যজ্ঞে। ক্লেটন সিলভা এক ডজন গোল করেছেন। এদিন সারাক্ষণ দু আনি কুড়োলেন। আর জাক জার্ভিসের ফুটবল ? কইবেন না কর্তা, ঘুড়ায় হাসব।
এ রকম একটা দরকচা মারা টিম যে ৬৮ মিনিট পর্যন্ত গোল খায়নি এটাই যথেষ্ট। তার জন্য ডিফেন্সের দুই প্রহরী লাল, কিরিয়াকুর ধন্যবাদ প্রাপ্য। তাই গোলটার জন্য তাদের দোষ দেওয়া যাবে না। ফেদরিকো গালেগোর কর্নারের ফ্লাইটটা মিস করলেন গোলকিপার কমলজিৎ। স্লাভকোর হেডটাই গোলে ঢুকে যাচ্ছিল। পোস্টে লেগে ফিরে আসার পর স্লাভকোই আবার হালকা পুশে গোলে বল রাখলেন। ৯০ মিনিটে কিয়ান নাসিরির পাস থেকে দিমিত্রি পেত্রাতোস গোল করে ম্যাচের উপ মোহনবাগানের নামটা শিল করে দিলেন। মোহনবাগানের যা টিম তাতে সল্ট লেক স্টেডিয়ামে ওড়িশাকে হারাতে বেগ পাওয়ার কথা নয়। তাদের আসল লড়াই সেমিফাইনালে।