বুধবার নারদ মামলার শুনানির শুরুতেই সওয়াল পাল্টা সওয়ালে সরগরম হয়ে ওঠে শুনানি পর্ব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে হলফনামা দিতে চান প্রবীণ আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী। বিরোধিতা করেন সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা। অনুমতি না দিলেও সওয়াল পর্বে হলফনামার বিষয়টি উত্থাপন করা যাবে বলে জানিয়ে দেন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল।
বুধবার শুরুতেই নারদ মামলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী হলফনামা জমা দেওয়ার আবেদন জানান। সিবিআইয়ের আইনজীবী তুষার মেহতা বলেন, মাই লর্ড, আমি মিঃ দ্বিবেদীর আবেদনের বিরোধিতা করছি।
মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী বলেন, গত ২ জুন সিবিআই অতিরিক্ত হলফনামা দাখিল করেছে। সেখানে আমাদের সংযুক্ত করা হয়েছে। তাহলে আমরা কেন হলফনামা পেশ করতে পারবো না?
ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল বলেন, আমরা এর অনুমোদন দিচ্ছি না। একপক্ষের সওয়াল এরই মধ্যে সম্পূর্ণ হয়েছে। তাই আমরা এই হলফনামা গ্রহণ করছি না। সওয়ালের সময় হলফনামার বিষয় উল্লেখ করবেন।
অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, আইন অনুযায়ী হলফনামা জমা দেওয়ার জন্য চার সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়।
সিবিআইয়ের আইনজীবী তুষার মেহতা বলেন, ‘আমার বক্তব্য পেশ করার সময়ে আমি বলেছিলাম যে প্রতিবাদী নেতাদের মামলায় সংযুক্ত করা হলেও কেউ হলফনামা পেশ করেননি। এখন তাঁরা নিজেদের খামতি পূরণ করছেন।’
মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী বলেন, নতুনভাবে যাঁরা মামলায় সংযুক্ত হয়েছেন তাঁদের হলফনামা জমা দেওয়ার সময় দিতে হবে। আমরা মাত্র ৭ দিনের মধ্যে হলফনামা পেশ করেছি। প্রয়োজন হলে সিবিআইকে আরও সওয়াল করার জন্য অতিরিক্ত সময় দেওয়া হোক।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল বলেন, ‘মিঃ দ্বিবেদী, আমরা এরই মধ্যে এই মামলা এক সপ্তাহ ধরে শুনছি। আপনি কি চান আমরা আবার একই বিষয় শুনি? আপনি আদালতের সঙ্গে এটা করতে পারেন না।’
বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘যখন আপনাদের এই মামলায় সংযুক্ত করা হয়েছে তখনই আপনারা হলফনামা জমা দেওয়ার অনুমতি চাইতে পারতেন।’
সিবিআইয়ের আইনজীবী তুষার মেহতা বলেন, আদালত পরিচালনার একটা নিয়ম আছে, মর্যাদা আছে। যা হচ্ছে তা অভূতপূর্ব। আদালত অবিলম্বে পদক্ষেপ করে একটা উদাহরণ তৈরি করুক।
অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, হ্যাঁ সত্যিই অভূতপূর্ব{ সিবিআই একটা চিঠি দিয়ে মামলা স্থানান্তরের আবেদন করছে।
অভিযুক্তের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি বলেন, মামলাকারীরা যদি এই পদ্ধতিতে আদালতে আসা শুরু করেন, তাহলে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সিবিআই কি শেখাচ্ছে? সিবিআই নিজেদের অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড তকমা দেওয়ার চেষ্টা করছে। মামলা স্থানান্তরের আবেদন করতে গেলে তার সঙ্গে হলফনামাও দাখিল করতে হয়। এখন মজার বিষয় হচ্ছে, সিবিআইয়ের ইমেল কী করে মামলা স্থানান্তরের আবেদন হিসাবে বিবেচ্য হবে?
তিনি আরও বলেন, তৃণমূল নেতাদের জামিন মঞ্জুর করার সময় বিচারক সজ্ঞানেই ছিলেন। তিনি তাঁর রায়ে উল্লেখ করেছেন। অভিযোগ দায়ের হওয়ার ৬ বছর পরে এই চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং সেটাও এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে। একটা সাধারণজ্ঞান তো থাকবে। সব পক্ষের সওয়াল নথিবদ্ধ করার পরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক তাঁর রায়দান করেছেন। শুধুমাত্র বিক্ষোভের কারণে তাঁর রায়কে ত্রুটিপূর্ণ বলা যায় না। রায়ের সপ্তম পৃষ্ঠায় মাননীয় বিচারক কি কোথাও বলেছেন যে তাঁকে ভয় দেখানো হয়েছে?
সওয়ালের শেষে অভিষেক মনু সিংভি বলেন, মামলা স্থানান্তর করা হলে অভিযুক্তদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। তাই সিবিআইকে এটা প্রমাণ করতে হবে মারাত্মক চাপের কারণে এই মামলা স্থানান্তর করা প্রয়োজন।
এদিন মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতিরা জানান আদালত প্রয়োজন বোধ করলে ১৭ মের সিসিটিভি ফুটেজ সিবিআইয়ের কাছে থেকে চাইবে। সেই ফুটেজ ক্ষতিয়ে দেখবে আদালত। বিচারপতিদের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তুষার মেহতা জানান তাঁরা প্রস্তুত আছেন। বৃহস্পতিবার ফের শুনানি মামলার।