আগুন লেগেছে তেলে। সোমবার কলকাতায় লিটার প্রতি ডিজেলের দাম ৯০ টাকা ছাড়াল। ২৯ পয়সা বেড়ে ডিজেলের দাম হল ৯০ টাকা ১২ পয়সা। পেট্রোলের দাম ২৮ পয়সা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৬ টাকা ৩৪ পয়সা। সারা দেশেই পেট্রোপণ্যের দাম হু হু করে বেড়ে চলেছে। দেশের কোনও কোনও শহরে তেলের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। কোথায় গিয়ে এই অগ্নিমূল্য থামবে, কেউ জানে না।
বিরোধীরা অনেকদিন ধরেই দাবি করছেন, কেন্দ্রীয় সরকার উৎপাদন শুল্ক কমিয়ে মানুষকে অন্তত কিছুটা স্বস্তি দিক। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধীদের দাবি কানেই তুলছে না। বরং তেলের ওপর কর কমানোর দায় মোদী সরকার রাজ্য সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে।
তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরব কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি প্রায়ই ট্যুইট করে থাকেন পেট্রোপণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে। রাহুল কটাক্ষ করতে ছাড়েন না কেন্দ্রীয় সরকারকে। এবার রাহুলকে বিঁধে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বললেন, রাহুল গান্ধী আগে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিতে করের হার দেখুন। ওই সব রাজ্য কেন তেলের ওপর থেকে কর কমানো হচ্ছে না। মহারাষ্ট্রেও তো করের হার যথেষ্ট চড়া। উল্লেখ্য, মহারাষ্ট্রে সরকার চালাচ্ছে কংগ্রেস, এনসিপি এবং শিবসেনা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ইঙ্গিত মহারাষ্ট্র, রাজস্থান ও পঞ্জাবের দিকে।
রবিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তেলের দাম বৃদ্ধির সাফাইও গেয়েছেন। তিনি বলেন, তেলের চড়া দামে সাধারণ মানুষের অসুবিধা হচ্ছে ঠিকই। তবে এটাও তো দেখতে হবে, দেশের মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দিতেই এক লক্ষ কোটি টাকা খরচ করছে কেন্দ্র। এ ছাড়া স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর কথাও ভাবতে হবে।
পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম প্রথম ১০০ টাকা ছুঁয়েছে রাজস্থানের শ্রীগঙ্গানগরে। রাজস্থানের যুক্তমূল্য কর বা ভ্যাট তার অন্যতম কারণ। রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব ছাড়া বিজেপি শাসিত অনেক রাজ্যেও পেট্রোল, ডিজেলের দাম বেশ চড়া। ওই সব রাজ্যেও যুক্তমূল্য করের কারণেই তেলের দাম বেশি। ধর্মেন্দ্র প্রধান সেই সব রাজ্যের কথা কেন উচ্চারণ করলেন না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
মোদী সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন পেট্রোল, ডিজেলে লিটারপিছু উৎপাদন শুল্ক ছিল যথাক্রমে ৯ টাকা ৪৮ পয়সা এবং ৩ টাকা ৫৬ পয়সা। এখন তা দাঁড়িয়েছে ৩২ টাকা ৯০ পয়সা এবং ৩১ টাকা ৮০ পয়সা। এই কেন্দ্রীয় কর নিয়েও একটি কথা শোনা যায়নি পেট্রোলিয়াম মন্ত্রীর মুখে। বিরোধীরা এই প্রশ্নেই কেন্দ্রকে দুষছে। তাঁদের অভিযোগ, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম যখন পড়তির দিকে ছিল, তখন কেন্দ্র উৎপাদন শুল্ক কমায়নি। এখন অশোধিত তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পর সেই শুল্ক কমানোর কথা বেমালুম চেপে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। কংগ্রেস আরও মনে করিয়ে দিচ্ছে, ইউপিএ জমানায় তেলের দাম বাড়লেই কেন্দ্রের সমালোচনায় সরব হতেন তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এখন তেলের দাম যখন লিটারে ১০০ টাকা, তখন কেন্দ্র নীরব, নীরব বিজেপি নেতারা। বিরোধীরা তেলের অগ্নিমূল্য নিয়ে দেশজুড়ে আন্দোলনের কথা ভাবছেন। তবে করোনা আবহে সেই আন্দোলন কতটা দূর নিয়ে যাওয়া যাবে, সেটা নিয়েই সন্দিহান বিরোধী নেতারা।