১৯৯০-এর মাঝামাঝি উত্থান। আগে থাকত সোনারপুরের বাগেরখোলে। বাবার কাজের সূত্রে টালিগঞ্জে, আনোয়ার শাহ রোডে আসা। সেখানেই মুসলিম বস্তিতে বেড়ে ওঠা। অপরাধের হাতেখড়ি তৎকালীন যাদবপুর এলাকার আনোয়ার শাহ রোডে। বস্তিতে থাকাকালীন শাহাজাদার কাছে হাতেখড়ি শেখ বিনোদের। একের পর এক অপরাধ শাহাজাদার সঙ্গে হাত মিলিয়ে। একটা সময় সেই শাহাজাদাই হয়ে ওঠে তার প্রতিদ্বন্দ্বী। শাহাজাদার থেকে আলাদা হয়ে নিজেই তৈরি করে দল। মূলত পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এলাকা যাদবপুর, সোনারপুর থানা এলাকাতেই অপরাধের শুরু শেখ বিনোদের।
অন্যান্য জায়গাতে লাগাতার অপরাধ চালিয়ে গেলেও চারু মার্কেট থানার দিকে অপরাধ করত না শেখ বিনোদ। পরবর্তীকালে বিনোদ নিজেকে ও দলকে শক্তিশালী করে লেক, টালিগঞ্জ থানা এলাকা থেকেও তোলাবাজি শুরু করে দেয়। ১৯৯৭-তে তোলাবাজিতে অতিষ্ট হওয়ায় বিনোদের গ্যাংকে ঘিরে ফেলে এলাকার লোকজন। বিনোদের দলের ছ’জনকে গণপিটুনি দিয়ে মেরেও ফেলা হয়। সেই সময় পালিয়ে যায় বিনোদ। সঙ্গে ছিল শিউ কুমার।
আরও পড়ুন : চার কন্যাকে প্রার্থী করে পুরভোটে চমক দিতে পারে তৃণমূল
ঘটনার বেশ কিছুদিন পর শিউকে নিয়ে বাগুইআটিতে ডেরা বাঁধে বিনোদ। সেই সময় বিনোদের স্ত্রী প্রসবযন্ত্রণায় হাসপাতালে ভর্তি। স্ত্রীকে দেখতে গিয়েই কলকাতা পুলিশের গুন্ডা দমন শাখার হাতে ধরা পড়ে যায় বিনোদ। বছর কয়েক জেলও খাটে। জেল থেকে বেরনোর অপেক্ষা। ফের দক্ষিণ শহরতলিতে শুরু হয় তোলাবাজি। তৃণমূল জমানায় ২০১১-তে বিনোদ পাল্টে ফেলে নিজের অপারেশনের জায়গা। নেতাজি নগর, গরফা, রিজেন্ট পার্ক অর্থাৎ যেখানে প্রোমোটিং বাড়ল, সেখানে সেখানেই জাল বিস্তার করতে শুরু করল বিনোদ।
যে সমস্ত জায়গায় বিনোদ তোলাবাজি করতে যেত সেখানে পুলিশ পৌঁছনোর আগেই খবর বিনোদের কান অবধি পৌঁছে যেত। তাকে ধরাও হয়ে যেত মুশকিল। বহু মামলায় সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যায় বিনোদ। ২০১৭-তে টালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে গড়িয়া পর্যন্ত দু’দিকে সাম্রাজ্য বিস্তার করতে শুরু করে। সেই সময় সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউতে এক রেস্তোরাঁ চালু হয়। হামলা চালায় বিনোদ বাহিনী। মোটা অঙ্কের টাকা চেয়ে হুমকি দেয় রেস্তোরাঁর মালিককে। বলে, ‘এবার শূন্যে গুলি করলাম, এরপর বডিতে লাগবে।‘ রেস্তোরাঁর মালিক পুরো ঘটনা তৎকালীন পুলিশ কমিশনার ও মুখ্যমন্ত্রীকে জানান। খোঁজ করা হলেও পালিয়ে যায় বিনোদ।
টানা চার বছর লুকিয়ে থাকার পর যেখানে ডেরা বেঁধেছিল সেখান থেকে পালিয়ে যায় একেবারে। চার বছরে বিনোদের নামে অভিযোগও কমে এসেছিল অনেকটাই। তার পর অন্য ভাবে অপরাধের শুরু হয় শেখ বিনোদের।