কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: মাস দুয়েক আগে মুকুন্দপুর রেল বিহার আবাসনে প্রাতঃভ্রমণ করতে বেরিয়েছিলেন জয়জিৎ চক্রবর্তী। সেই সময় তিনি দেখেন একটি গাড়ির তলায় পড়ে রয়েছে রক্তমাখা বিড়াল ছানা। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাকে নিয়ে যান তার বাড়িতে সেখানে ছিলেন তার স্ত্রী মোহনা চক্রবর্তী। দেখেন যে চিকুকে পরম স্নেহে রোজ তারা খেতে দিতেন সেই আদরের চিকুর রক্তারক্তি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তার দুটো থাইয়ের কাছে আড়াআড়িভাবে চেরা এমন ভাবে চেনা যে তার ভেতরের অংশ বেশ খানিকটা বেরিয়েছিল।
বেশকিছুদিন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ এর কাজ করেছেন মোহনা তাই তিনি বুঝেছিলেন এই কাজ কোন সাধারণ মানুষের নয়। কোন চিকিৎসা কি ধারালো কিছু দিয়ে এইভাবে ফালাফালা করেছে তার আদরের চিকু কে। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় বেশকিছু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান তিনি। দুজন চিকিৎসা কি হাল ছেড়ে দেন একজন কোনক্রমে কিছুটা জায়গা সেলাই করে দিলেও বাড়িতে নিয়ে আসার পর সেই সেলাই আবারো খুলে যায়।
আরও পড়ুন- শিশুদের মধ্যেই ইশ্বরকে খুঁজে পেয়ে চিকিৎসা করেন জনপ্রিয় ‘ঘন্টা ডাক্তার’
মোহনা দাবির অভিযোগ এ শহরে ভেটেনারি চিকিৎসার হাল যে বেহাল তা তিনি পড়তে পড়তে বুঝতে পেরেছেন সেদিন। কথায় বলে রাখে হরি মারে কে। আর চিকুর বেঁচে থাকার আপ্রাণ ইচ্ছাতেই বোধ হয় সেইদিন এক চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় মোহনা দেবীর। শ্যামল গুহ অবশেষে বিড়ালটি ড্রেসিং করেন। প্রায় প্রত্যেক দিন ড্রেসিং করতে হয়েছিল চিকুর। অবশেষে মাস দুয়েক পর কিছুটা ভালো আছে চিকু বেশির ভাগটাই জুড়ে গিয়েছে তার।
চিকিৎসকের বক্তব্য এরকম ধরনের ঘটনা তিনি আগে কখনো দেখেননি রীতিমত অবাক হয়েছেন তিনি। কোন কাঁচা হাতে যে এই কাজ হয়নি একই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন সেটাও। জয় জিৎ বাবুর অভিযোগ বিগত ৪৫ বছর ধরে প্রত্যেক বছর নিয়ম করে বেশ কিছু বিড়াল উধাও হয়ে যায় এই রেল বিহার থেকে।
আরও পড়ুন- কাবুল এয়ারপোর্টের ভাইরাল ‘বেবি’ চিকিৎসার পর ফিরে এল বাবা মায়ের কোলে
বিশেষ করে মেয়ে বিড়ালদের বেছে বেছে গায়েব করার প্রবণতা দেখা যায়। তিনি আরো বলেন এই বিড়াল চিকুকে মেয়ে বিড়াল ভেবেই তার বন্ধাত্বকরণ করার চেষ্টা করেছিলেন কেউ। সেটি ব্যর্থ হয়েছে। যদিও যেখানে কেটে বিড়ালের বন্ধাত্বকরণ করা হয় এই কাটা সেই স্থানে ছিল না বলেও দাবি করেছেন তিনি। অর্থাৎ এই কাজ যেই করুক সে আর যাই হোক পশুচিকিৎসক নন বলেই মনে করেন চিকিৎসক শ্যামল গুহ ।
অথচ এই ঘটনার পর কেটে গিয়েছে বহুদিন। এখনো সেই ঘটনা তদন্ত শুরু করেন এই রেল বিহার আবাসনের কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনা বারবার ঘটতে থাকলেও প্রায় চোখ বন্ধ করে রয়েছে রেল বিহার কর্তৃপক্ষ। প্রশ্ন উঠছে কেন? তাহলে কি কাউকে আরল করার চেষ্টা চলছে। কর্তৃপক্ষের জবাব উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া এই প্রসঙ্গে কিছুই তারা করতে পারবেন না। এখন প্রশ্ন হলো কেউ যখন অপরাধ করেন তখন কি কারো সামনে সাক্ষী রেখে করেন তাহলে প্রমাণ মিলবে কি করে? এই প্রশ্নই বারংবার করছেন পশুপ্রেমী দম্পতি।
এই ঘটনার অভিযোগ মানেকা গান্ধী সোসাইটিতে করা হলেও সেখান থেকেও কোনো রকম সহযোগিতা পাননি এই দম্পতি। এখন পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছে রেল বিহারে বিড়ালরা আসতে ভয় পাচ্ছে। অন্যত্র চলে যাওয়াই নিরাপদ মনে করছে তারা। এই পরিস্থিতিতে জয় জিৎ ও মোহনা চক্রবর্তীর কাতর অনুরোধ অসহায় প্রাণীগুলোর পাশে দাঁড়ানোর জন্য সকলকে। মিলিত ভাবে প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। আবাসনের আবাসিকদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের পাশে সরে দাঁড়ালেও অনেকেই এই ঘটনায় মুখ ফিরিয়ে রেখেছেন। এই বিড়ালছানা চিকুকে বাঁচানোর জন্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচা করেছে এই দম্পতি। এখনো চিকুর কিছুদিন অন্তর ড্রেসিং করতে হয়। নিজের ঘরেই রেখে শুশ্রূষা করছেন এই দম্পতি। যে বা যারা এই ঘটনা বা কান্ড করছেন তাদের শাস্তি চাইছেন দম্পতি।