কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: রাজ্যপালকে স্মারকলিপি দিতে অনেকেই যান রাজভবনে। তাঁদের মধ্যে যেমন শাসক ও বিরোধী দলের নেতারা থাকেন, বিভিন্ন গণ সংগঠনের নেতারা থাকেন, তেমনি বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠনও তাদের দাবিদাওয়া জানাতে রাজভবনে যান। বিভিন্ন সময়ে যাঁরা এই রাজ্যের রাজ্যপাল হয়ে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকে বেশ খোলামেলা ছিলেন। তাঁরা রাজভবনের ঘেরাটোপের মধ্যে থেকেও সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে ভালোবাসতেন।আবার অনেকে রাশভারী ছিলেন। তাঁরা খুব বেশি মানুষের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতেন না। কিংবা সেসব পছন্দ করতেন না। গোপালকৃষ্ণ গান্ধী, অধ্যাপক নুরুল হাসানের মতো শিক্ষাবিদ বা চিন্তাবিদরা নিজেদের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন অত বড় বাড়িতে।
কিন্তু ব্যতিক্রম দেখছি বর্তমান রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে। তিনি রাজভবনের দরজা একেবারে হাট করে খুলে দিয়েছেন। তাঁর কাছে ডেপুটেশনে দেওয়ার যেমন বিরাম নেই, তেমনি তাঁরও মানুষের সঙ্গে দেখা করার বা কথা বলার বিরাম নেই। গত কয়েক বছরে এমন কোনও দিন যায়নি, যেদিন রাজ্যপাল কারও না কারও ডেপুটেশনে নেননি।
তার থেকেও বড় কথা, রাজভবন যেন বিজেপি নেতাদের রোজকার ভ্রমণের একটা জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণে অকারণে বিজেপি নেতারা এখন রাজভবনে ছোটেন। বিধানসভা ভোটে পরাজয়ের পর বিজেপি নেতাদের রাজভবনে যাতায়াত যেন বেড়ে গিয়েছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তো নিত্যযাত্রীর মতো যাতায়াত করেন রাজভবনে। আর রাজ্যপালও খুশি হন বিজেপি নেতাদের আমন্ত্রণ জানাতে পেরে। কিছু হলেই বিজেপির নেতানেত্রীরা রাজভবনে চলে আসেন। রাজ্যপাল তাঁদের খাতির করে বসান। লনে তাঁদের সঙ্গে জনসভার মতো বৈঠক করেন।
আরও পড়ুন: Corona Updates India: ফের ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণ, বাড়ল মৃত্যুর সংখ্যাও
মঙ্গলবার দেখলাম, একদল সাধু নিয়ে শুভেন্দু ঢুকে পড়েছেন রাজভবনে। তাঁদের বুকে কালীর ছবি। কারও হাতে পোস্টার। তাতে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। তাঁরা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখাও করলেন। কয়েক মাস আগে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বেই ঘরছাড়া বিজেপি সমর্থকরা রীতিমতো মিছিল করে রাজভবনে এলেন। পোর্টিকোয় দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল তাঁদের সঙ্গে কথা বললেন, ছবি তুললেন।
মাঝে মাঝে মনে হয়, রাজভবনের লনকে রাজ্যপাল যেন মেলার মাঠ বা খেলার মাঠ বানিয়ে ফেলেছেন। ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে রাজভবনের পাশ দিয়ে কখনও গেলে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতাম, ভাবতাম, ভিতরে কী অপার বিস্ময় আছে, দেখলে হয়। এখন ভাবি, রাজভবনের সেই বিস্ময় আর নেই। যে যখন পারছে, ঢুকে পড়ছে। যা খুশি, তাই করছে।
আরও পড়ুন: Sri Lanka Crisis: শ্রীলঙ্কা ছেড়ে সস্ত্রীক মালদ্বীপে পালালেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া
তৃণমূল কি সাধে বলে যে, রাজ্যপাল রাজভবনটাকে একেবারে বিজেপির পার্টি অফিস বানিয়ে ফেলেছেন। মাঝে মাঝে তিনি যে ভাষায় রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেন, শুনে মনে হয়, কোনও বিরোধী নেতার কথা শুনছি। বলতে দ্বিধা নেই, এই রাজ্যপাল তাঁর পদমর্যাদাকে একেবারে নীচে নামিয়ে ফেলেছেন। তাই শাসকদলও তাঁকে যা খুশি বলার সুযোগ পেয়ে যায়। এর জন্য তিনিই দায়ী।
আরও পড়ুন: Weather Updates: আগামী চার-পাঁচ দিন কোনও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই দক্ষিণবঙ্গে
দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর সাংবাদিকতা করছি। কিন্তু এরকম রাজ্যপাল কখনও দেখিনি। তিনি নিজেকে অত্যন্ত সস্তা বানিয়ে ফেলেছেন। অতীতে অনেক রাজ্যপালকে দেখে বেশ সমীহ করার মতো মনে হত। কিন্তু রাজভবনের বর্তমান মালিককে দেখে সেরকম মনে হয় না।