কলকাতা : অক্সিজেনের অভাবে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ। তদন্তের প্রমাণ হিসেবে সিসিটিভি ফুটেজ জমা না দিতে পারায় শহরের নামকরা হাসপাতাল মেডিকাকে চার লক্ষ টাকা জরিমানা করল স্বাস্থ্য কমিশন।
অসুস্থ এক রোগীকে নিয়ে নদীয়া থেকে কলকাতায় আসছিলেন তাঁর পরিবার। শ্বাসকষ্ট হওয়ার কারণে রোগীকে অক্সিজেন দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে করে কলকাতায় আনা হচ্ছিল। মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতাল মেডিকার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন পরিবারের লোকেরা। হাসপাতাল জানিয়েছিল বেড খালি হলে ফোন করা হবে।
ক্রমশই রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকায় বেডের অপেক্ষা না করেই রোগীকে অক্সিজেনসহ অ্যাম্বুল্যান্সে কলকাতায় আনা হয়। তার মধ্যেই মেডিকা থেকে ফোন করা হয়। জানানো হয় বেড খালি আছে। সাড়ে পাঁচটা নাগাদ হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে পৌঁছয় তাঁর পরিবার।
আরও পড়ুন – মেডিকায় হতে চলেছে রাজ্যের প্রথম ফুসফুস প্রতিস্থাপন, সোমবার রাতেই অস্ত্রোপচার
পরিবারের অভিযোগ, আম্বুল্যান্স থেকে এমারজেন্সিতে নিয়ে যাওয়ার সময় রোগীর অক্সিজেন খুলে দেওয়া হয়। তারপর আর অক্সিজেন চালানো হয়নি। ফলে রোগী মারা যান। এই অভিযোগ নিয়েই স্বাস্থ্য কমিশনের দ্বারস্থ হন মৃতার মেয়ে দীপিকা সাহা।
এই মামলার শুনানি আগেই হয়েছিল। হাসপাতালে বক্তব্য ছিল যখন রোগীকে আনা হয় তখন ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখেন অ্যাম্বুল্যান্সে থাকাকালীন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এমনকী তাঁদের রেজিস্টারেও তাই লেখা হয়েছে।
অন্যদিকে রোগীর পরিবারের জানায়, মৃত্যুর পাঁচ দিনের মধ্যেই বেসরকারি হাসপাতালের সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে তাঁরা অভিযোগ জানিয়ে ছিলেন। সেখানে হাসপাতাল থেকে তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হয়। তবে, তদন্তে কোনও ফল না হওয়ায় তাঁরা কমিশনের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হন।
আরও পড়ুন – স্বাস্থ্য পরিষেবায় গাফিলতি, মেডিকাকে ১ লক্ষ ক্ষতিপূরণের নির্দেশ কমিশনের
পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই মামলার শুনানির পর সময় দেওয়া হয়েছিল দুই পক্ষকে। যাতে আরও কোনও গুরুত্বপূর্ণ নথি থাকলে তাঁরা স্বাস্থ্য কমিশনের কাছে জমা দিতে পারেন। হাসপাতাল ঘটনার দিনের সিসিটিভি ফুটেজ জমা দিতে পারেনি। তার কারণ হিসাবে কমিশনকে জানিয়েছিল এত দিনের পুরোনো ফুটেজ তারা সংরক্ষণ করে না।
এরপর অসীমবাবু প্রশ্ন করেছিলেন, ঘটনায় পাঁচ দিনের মধ্যে অভিযোগ করার পর তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হলেও কেন সিসিটিভি ফুটেজ হাসপাতাল সংরক্ষণ করে রাখেনি? আর এই ফুটেজ তদন্তে প্রমাণ স্বরূপ না দিতে পারার কারণেই ওই হাসপাতালকে চার লক্ষ টাকা স্বাস্থ্য কমিশনে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অসীম বাবু।
আরও পড়ুন – বুঝুন কেন দক্ষিণে চিকিৎসা করতে যায়, ভেলোরের বিল দেখিয়ে বেসরকারি হাসপাতালকে ভর্ৎসনা কমিশনের
তিনি আরও জানিয়েছেন, রোগীর আত্মীয়রাও তেমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রমাণ হিসেবে জমা দিতে পারেননি। তাই এই টাকাটা রোগীর পরিবারকে না দিয়ে স্বাস্থ্য কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছে। যদিও এই বিষয়ে বেসরকারি হাসপাতাল মেডিকার আর কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে ইএম বাইপাস কাদাপাড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে তিনটি আলাদা অভিযোগ রয়েছে। এদিন এই অভিযোগগুলোর ভিত্তিতে দুটি মামলায় দু’লক্ষ করে আরেকটি মামলায় এক লক্ষ টাকা করে ওই হাসপাতালকে রোগীর পরিবারকে দেওয়ার নির্দেশ দেয়েছে স্বাস্থ্য দফতর থেকে।