কলকাতা: ১৪ ফেব্রুয়ারি। ঘড়ির কাঁটায় সন্ধে ৬টা ৪৮মিনিট। লি রোডের স্বর্ণ ব্যবসায়ী শান্তিলাল বাইদকে নিয়ে বিমল শর্মা আসে ভবানীপুর থানা এলাকার শম্ভুনাথ পণ্ডিত স্ট্রিটের একটি গেস্ট হাউসে। সন্ধে ৭টা ১৭ মিনিটে মুক্তিপণ চেয়ে ফোন করে শান্তিলালের পরিবারকে। বলে, শান্তিলালকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। মুক্তিপণের ২৫ লক্ষ টাকা দিতে হবে, তা না হলে তাকে প্রাণে মেরে দেওয়া হবে। ৭টা ২২-এ গেস্ট হাউস থেকে বেরিয়ে যায় বিমল।
৬টা ৪৮মিনিট থেকে ৭টা ২২মিনিট, এই ৩৪ মিনিটের মধ্যেই শান্তিলালকে ঠান্ডা মাথায় খুন করে বিমল। তার পর বেরিয়ে যায় গেস্ট হাউস থেকে। ভবানীপুর এলাকা থেকে ট্যাক্সি ধরে চলে যায় হাওড়া স্টেশন। সঙ্গে নিয়ে যায় শান্তিলালের ফোন। বাইদ পরিবারের সঙ্গে মুক্তিপণের টাকা নেওয়ার যাবতীয় কথোপকথন সেই ফোন থেকেই চালায় বিমল। অপহরণের খবর শুনে দিশেহারা পরিবারের সদস্যরা বন্ধুবান্ধব-পরিচিত সবাইকে ফোন করতে থাকে।
৮টা নাগাদ পরিবারের তরফে ফোন যায় কলকাতা পুলিসের সদর দফতর লালবাজারে। নড়েচড়ে বসে পুরো গোয়েন্দা বিভাগ। পরিবারকে নির্দেশ দেওয়া হয় অপহরণকারীর সঙ্গে কথোপকথন চালিয়ে যেতে। পুলিসের কথা মত, শান্তিলালের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চায় পরিবার। একথা শুনে বিমল অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। পুলিসে যোগাযোগ করলে শান্তিলালের বিপদ বাড়বে বলে হুশিয়ারিও দেয়।
আরও পড়ুন: Bhowanipore Murder: স্বর্ণ ব্যবসায়ীর নগ্ন দেহ উদ্ধার, আততায়ী পূর্ব পরিচিত, অনুমান পুলিসের
মৃত স্বর্ণ ব্যবসায়ী
ঘড়ির কাটায় রাত ৯টা ৪০ মিনিট। ২৫ লক্ষ টাকার একটা ব্যাগ নিয়ে পরিবার পৌঁছে যায় ভিক্টোরিয়ার দক্ষিণ গেটের সামনে। দূর থেকে অপহরণকারীর গতিবিধি দেখার জন্য আগেই মোতায়েন করা ছিল পুলিস ফোর্স। রাত ১০টা ২০ নাগাদ হলুদ ট্যাক্সি এসে দাঁড়ায়। ভিতর থেকে অপহরণকারী টাকার ব্যাগ নিয়ে শান্তিলালের ফোন ফেরত দিয়ে দেয় পরিবারকে। সেখান থেকে ট্যাক্সি নিয়ে বেরিয়ে যায়। পুলিস তাড়া করলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই উধাও হয়ে যায় ট্যাক্সি।
শান্তিলালের ফোন গোয়েন্দাদের হাতে আসতেই একটি সন্দেহজনক নম্বর চিহ্নিত করেন তাঁরা। দেখা যায়, সেই দিন সন্ধে ৬টা ২৫মিনিটে শেষ কথোপকথন। লোকেশন ফণীন্দ্র গেস্ট হাউস। তড়িঘড়ি গোয়েন্দা বিভাগের একটি টিম যায় সেই গেস্ট হাউসে। সেখান থেকেই উদ্ধার হয় শান্তিলাল বাইদের মৃতদেহ।এর পরেই লালবাজার মরিয়া হয়ে ওঠে ওই অভিযুক্তের খোঁজে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে অপহরণকারী দিল্লির বাসিন্দা। নাম বিমল শর্মা।
আরও পড়ুন: Businessman murder case: লি রোডে স্বর্ণব্যবসায়ী খুনে গ্রেফতার মূল অভিযুক্ত
ব্যবসায়ীয় দেহ উদ্ধার
এর পরেই আসল খেলা শুরু করে অভিযুক্ত বিমল। পুলিসকে ধোঁকা দিয়ে ছত্তিশগড়, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, ওডিশার বিভিন্ন জায়গায় বেনামে বিভিন্ন হোটেলে ঘুরে বেড়াত সে। নিয়মিত আস্তানা বদল করতে থাকে বিমল। শেষ পর্যন্ত গুজরাট এটিএস এবং কলকাতা পুলিসের যৌথ অভিযান আহমেদাবাদ থেকে গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত বিমল শর্মাকে। আহমেদাবাদের আদালত থেকে ট্রানজিট রিমান্ডে বিমলকে কলকাতা নিয়ে আসে লালবাজারের গোয়েন্দারা।