কলকাতা: কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) কি বড় কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন? বুধবার তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অপসারণের পর কুণালের একটি মন্তব্য ঘিরে সেই প্রশ্ন এবং জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। এদিন দলের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, কুণাল সম্প্রতি যেসব মন্তব্য করেছেন, সেগুলি সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। সেই সব মন্তব্য দলের নীতি বা বক্তব্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। দলের সদর দফতর থেকে যে বিবৃতি বা বক্তব্য তুলে ধরা হবে, সেটাই হবে তৃণমূলের সরকারি অবস্থান। কুণাল জানান, তিনি রাত পর্যন্ত কোনও চিঠি পাননি। শুধু একটি প্রেস বিবৃতি দেওয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন। সদ্য পদ থেকে অপসারিত কুণাল বলেন, আমি তৃণমূলের অনুগত সৈনিক। দলে ছিলাম। দলে আছি। তৃণমূলে থাকার চেষ্টা করব।
এই তৃণমূলে থাকার চেষ্টা করার কথা বলেই কুণাল নানা জল্পনার জন্ম দিয়েছেন। এর আগেও কুণালকে নিয়ে দলের অন্দরে কম জলঘোলা হয়নি। দলের মধ্যে নবীন প্রবীণ বিতর্কে তিনি তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিকে আক্রমণ করতে দ্বিধা করেননি কয়েক মাস আগে। ওই বিতর্কে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নবীনদের পাশে থেকেই বলেছিলেন, একটা বয়সের পর রাজনীতিকদের অবসর নেওয়া উচিত। সেই সময় দলীয় সংগঠন নিয়ে অভিষেকের সঙ্গে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধ দেখা দেয়। অভিষেক নিজের সংসদীয় কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবার নিয়ে থাকার কথা জানিয়েছিলেন। ১ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি বলেন, আমার মনে হয়, অভিষেক পিছিয়ে যাবেন না। তিনি দলের হয়ে কাজ করবেন। এতেই বেদম চটে যান অভিষেক ঘনিষ্ঠ কুণাল। তিনি বলেন, অভিষেক পিছিয়ে যাবেন না, চেয়ারম্যান এটা বলার কে। তিনি তো দায়িত্ব নিয়ে অনেক কাজে ব্যর্থ হয়েছেন। পরে উত্তর কলকাতার বিদায়ী সাংসদ এবং এবারের প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কেও কুণাল কিছু মন্তব্য করেন। সুদীপের সঙ্গে উত্তর কলকাতার প্রাক্তন তৃণমূল নেতা অধুনা বিজেপির উত্তর কলকাতার প্রার্থী তাপস রায়ের বিরোধ বহু পুরনো। বস্তুত, সুদীপের সঙ্গে বিরোধের কারণেই প্রবীণ তাপস বিধায়ক-সহ তৃণমূলের সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন। এই ইস্যুতেও কুণাল সব সময় তাপসের পাশে থেকেছেন।
আরও পড়ুন: কাল, বৃহস্পতিবার সকালে মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ
বুধবার কলকাতার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে একটি অরাজনৈতিক রক্তদান শিবিরের মঞ্চে তাপসের সঙ্গে ছিলেন কুণাল। সেখানে তিনি তাপসের দরাজ প্রশংসা করেন। এর আগে তৃণমূলের তারকা সাংসদ দেবের কিছু মন্তব্য নিয়েও কুণাল কিছু কথা বলেন অভিনেতার বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে দলের অন্দরে কুণাল বিতর্কের কেন্দ্রে চলে আসেন। দলীয় সূত্রের খবর, তৃণমূলের অনেক নেতার সঙ্গেই কুণালের সম্প্রতি বনিবনা হচ্ছিল না। দলের সর্বোচ্চ স্তরের কাছে কুণালের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়ছিল। তারই চূড়ান্ত পরিণতি হল বুধবারের এই প্রেস বিবৃতি। কুণাল বলেন, এই বিবৃতি কি আমার প্রাপ্য ছিল? তিনি বলেন, আমি আমার পদ থেকে অপসারণের বিবৃতি বা চিঠি পাওয়ার আগেই বাজারে ছেড়ে দেওয়া হল। আমি ৪ মার্চ দলের মুখপাত্র এবং রাজ্য সাধারণ সম্পাদক পদ ছাড়তে চেয়ে আবেদন করেছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তা জানিয়ে দিয়েছি। তারপর আমাকে অপসারণের প্রশ্ন আসে কী করে।
এতদিন যতবার তাঁকে ঘিরে বিতর্ক হয়েছে, ততবারই কুণাল বলেছেন, আমি তৃণমূলে ছিলাম, আছি, থাকব। এদিনই প্রথম তাঁকে বলতে শোনা গেল, আমি তৃণমূলে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করে যাব। এটা একটু অন্যরকমই বার্তা দিচ্ছে কি, তা নিয়েই শুরু হয়েছে নানা চর্চা। বিজেপির অনেক নেতা কুণালের এই পদ থেকে অপসারণের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাতে জল্পনা আরও বেড়েছে।
আরও খবর দেখুন