কলকাতা: রাজনীতিতে স্থায়ী শত্রু-মিত্র বলে কিছু হয় না৷ আবারও প্রমাণ করলেন বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo)৷
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ার পর বাবুল রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন৷ জানিয়েছিলেন, আর রাজনীতি করবেন না৷ অন্য দলেও যাবেন না৷ তার পর কার্যত অন্তরালেই চলে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু শনিবার বারবেলায় যখন প্রকাশ্যে এলেন তখন গলায় ঝুলছে তৃণমূলের উত্তরীয়৷ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল ব্রেকিং নিউজ৷ তৃণমূলে (TMC) যোগ দিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়৷
আরও পড়ুন: আসানসোলে বাবুলের ইস্তফার অপেক্ষা, শিশির-দিব্যেন্দুকে বিঁধতে চলেছে তৃণমূল
বাবুল তৃণমূলে? আসানসোলের বিজেপি সাংসদ তৃণমূলে? কটাক্ষ করে যে দলকে তিনি ‘টিএমছি’ বলতেন সেই তৃণমূলে বাবুল? খবর শুনে অনেকেই নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন৷ না পারার কারণ তো বাবুলই জানিয়েছিলেন৷ প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীই তো ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, বিজেপি ছাড়লেও অন্য দলে যাবেন না৷ দিনটা ছিল ৩১ জুলাই৷ আর বারটাও ছিল শনিবার৷ ফেসবুক পোস্টে রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেওয়া কথা ঘোষণা করেছিলেন আসানসোলের বিজেপি সাংসদ৷ লিখেছিলেন, ‘অলবিদা, চললাম৷ বেশ কিছু সময় তো থাকলাম৷ কিছু মন রাখলাম৷ কিছু ভাঙলাম৷ কোথাও আপনাদের হয়তো আমার কাজে খুশি করলাম৷ কোথাও নিরাশ, হতাশ করলাম৷ মূল্যায়ন আপনারাই নয় করবেন৷ ’
দীর্ঘ ওই পোস্টে বাবুল লিখেছিলেন, ‘অন্য কোনও দলে যাচ্ছি না৷ তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএম কোথাও নয়৷ কনফার্ম করছি৷ কেউ আমাকে ডাকেওনি৷ আমিও কোথাও যাচ্ছি না৷ আমি ওয়ান টিম প্লেয়ার৷ সবসময় একটাই দলকে সমর্থন করেছি৷ ফুটবলে মোহনবাগান৷ আর রাজনীতিতে বিজেপিই৷’ কিন্তু ঘণ্টাখানেক পরেই ফেসবুক পোস্টের এই অংশটি মুছে দিয়েছিলেন বাবুল৷ সেটা নিয়েও তখন কম জলঘোলা হয়নি৷ প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কী অন্য দল থেকে ডাক পেয়ে ফেসবুক পোস্টের ওই অংশটা মুছে দিয়েছেন? নাকি অন্য দলে যাওয়ার রাস্তা খোলা রাখতেই ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটা করলেন? পরে বাবুলই যাবতীয় জল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছিলেন৷ জানিয়েছিলেন, এডিট করার সময় ফেসবুক পোস্টের ওই অংশটা মুছে গিয়েছিল৷
আরও পড়ুন: দল বদলে মুহূর্তেই টুইটারে মোদির মুখ মুছলেন বাবুল
বাবুলের আচমকা রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা বিজেপির নীচু তলা থেকে শীর্ষস্তরকে আন্দোলিত করেছিল৷ ১ অগস্ট দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার সঙ্গে কথা হয় বাবুলের৷ তিনি আসানসোলের সাংসদকে ইস্তফা না দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন৷ সেই অনুরোধ অবশ্য রাখেন বাবুল৷ জানিয়েছিলেন, আসানসোলের মানুষের কথা ভেবে সাংসদ পদ আপাতত ছাড়ছেন না৷ বাবুল অনুরাগীদের অনেকেই চাননি তিনি বিজেপি ছাড়ুক৷ তাই ওই ঘোষণায় অনেকেই স্বস্তি পেয়েছিলেন৷ ভেবেছিলেন, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে তাঁকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে আবার রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনা যাবে৷
রাজনীতিতে বাবুল ফিরলেন বটে৷ তবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে৷ তার আগে পর্যন্ত তিনি নিজেকে সক্রিয় রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন৷ তবে রাজনীতি ছাড়ার পর ভীষণ একা হয়ে পড়েছিলেন বাবুল৷ সেই অনুভূতি গোপন করেননি তিনি৷ ৭ অগস্ট ফেসবুক পোস্টে বাবুল লিখেছিলেন, ‘একা ঘরে নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালো লাগে৷ কিন্তু এখন নিজেকে অস্বাভাবিক রকম একা লাগছে৷’ তার পরও টুকটাক রাজনীতি সংক্রান্ত পোস্ট করেছিলেন৷ যেমন, ভবানীপুর উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট করেছিলেন তিনি৷ কিন্তু ওই পর্যন্তই৷ আশা করা যায়, তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর এবার তাঁর একাকীত্ব অনেকটাই দূর হবে৷ রাজনীতির দ্বিতীয় ইনিংস কেমন ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে খেলবেন বাবুল সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল৷
আরও পড়ুন: বিজেপি বলছে ধান্দাবাজ, বাবুলের যোগদানে বামেরা বলছে রাজনীতি কলুষিত হল