কলকাতা: পৃথিবীতে আমরা যত রকম প্রাণী দেখি তাদের কোনওটাকেই প্রাগৈতিহাসিক (Pre-Historic) যুগে এমন দেখতে ছিল না। বিবর্তনের (Evolution) নিয়মে বদল এসেছে তাদের চেহারায়। আজ আমরা যে হাতিকে (Elephant) দেখি তার পূর্বপুরুষ ছিল ম্যামথ (Mammoth)। তার চেহারা, আকার এখনের হাতির থেকে অনেকটাই আলাদা ছিল। জিরাফের (Ziraff) এই লম্বা গলাও ছিল না সে সময়। কিন্তু আরশোলা (Cockroach) এমন এক প্রাণী, যার চেহারায় কোনও বদল আসেনি। বিবর্তনের প্রভাব পড়েনি তার উপর। আমাদের ঘরদোরে উড়ে হেঁটে বেড়ানো, উড়ে বেড়ানো এই প্রাণীটি সম্পর্কে আরও এক চমকপ্রদ জানা গিয়েছে।
৬৬ মিলিয়ন অর্থাৎ ৬.৬ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে আছড়ে পড়েছিল এক গ্রহাণু (Asteroid)। তার অভিঘাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় ডাইনোসররা (Dinosaur)। এক সময়ে পৃথিবীর মাটি শাসন করে বেড়ানো বিশালাকৃতির টি-রেক্স (T-Rex), ব্রন্টোসরাসরা উধাও হয়ে গেলেও দিব্যি বেঁচেবর্তে থেকেছে খুদে চেহারার আরশোলা। কী করে এই অসাধ্য সাধন করল এই কীট তা নিয়ে অনেকদিন ধরেই গবেষণা করছিলেন বিজ্ঞানীরা। এবার সেই রহস্যভেদ করেছেন তাঁরা।
গ্রহাণুর অভিঘাতে প্রায় গোটা পৃথিবীজুড়ে প্রবল ভূমিকম্পের (Earthquake) সৃষ্টি হয়েছিল। ভূমিকম্পের ফলে অভিঘাতের স্থল থেকে হাজার হাজার মাইল দূরেও ঘটেছিল আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত (Volcanic Eruption)। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, স্থলচর প্রাণী এবং উদ্ভিদ কুলের তিন-চতুর্থাংশ সে সময় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। খেচর অর্থাৎ আকাশে ওরা ডাইনোসর প্রজাতির প্রাণীরা রেহাই পায়, যারা আজকের সময়ের পাখিদের পূর্বপুরুষ। সেই মহাপ্রলয় সহ্য করে টিকে যায় আরশোলারাও। কিন্তু কী করে?
আরও পড়ুন: Elon Musk | Twitter | মিনিটে ৮০০ কোটি ইউজার, ফের জনপ্রিয়তা বাড়ছে টুইটারে
একটা কারণ অবশ্যই তাদের ক্ষুদ্র চেহারা। আরশোলার শরীর এমনভাবে তৈরি যে তারা গ্রহাণু আছড়ে পড়ার মতো ঘটনাকেও সহ্য করে নিতে পারে। পাতলা, চ্যাপ্টা চেহারার জন্য ছোট ছোট ফাঁক, মাটি, পাথরের ফাটলে জায়গা করে নিতে পারে তারা। এর ফলে গ্রহাণু বিস্ফোরণের প্রত্যক্ষ অভিঘাত থেকে বেঁচে গিয়েছিল তারা। গ্রহাণুর ধাক্কায় পৃথিবীপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছিল অনেকটাই। ফাটলে আশ্রয় নিয়ে তা থেকে নিজেদের রক্ষা করেছিল আরশোলা।
এর সঙ্গে রয়েছে তাদের খাদ্যাভ্যাস। বেশিরভাগ কীটপতঙ্গ একই ধরনের খাবার খায়। কেউ লতাপাতা তো কেউ তাদের থেকে ছোট কীট খেয়ে বেঁচে থাকে এবং থাকত। কিন্তু আরশোলা সর্বভূক। তারা যা পায় তা-ই খুটে খায়। গাছপাতা, প্রাণী, কার্ডবোর্ড এমনকী বিষ্ঠাতেও অরুচি নেই আরশোলার। এছাড়াও রয়েছে আরও একটি কারণ।
আরশোলারা যে ডিম পাড়ে সেগুলি থাকে একটি খোলসের মধ্যে। বাইরের কঠিন পরিবেশ যেমন প্রবল রোদ, ঝড়বৃষ্টি, কনকনে ঠান্ডা ডিমগুলোর ক্ষতি করতে পারে না। সে কারণেই উত্তপ্ত মরুভূমি থেকে গ্রীষ্মপ্রধান দেশ হয়ে বরফের দেশেও বহাল তবিয়তে থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা তাদের চলাফেরা এবং শারীরিক গঠন দেখে উন্নততর রোবট বানানোর কাজে ব্রতী হয়েছেন।