ন্যাপি পরা ছোট্ট শিশু। গায়ে শরতকালের মত রোদ্দুর এসে পড়েছে। ছবিতেই স্পষ্ট সে কাঁদছে। বাবা-মায়ের আশ্রয় ছেড়ে হাতে হাতে পার হয়ে যাচ্ছে কাবুল বিমানবন্দরের পাঁচিল। পাঁচিলের উপর বার্বড্ ওয়্যার। জড়ানো কাঁটাতার। জনতা চিৎকার করছে, ‘বেবি বেবি’। মার্কিন মারিন ঝুঁকে পড়ে এক হাতে তুলে নিচ্ছে শিশুটিকে। কেউ একজন তুলে দিচ্ছেন তাকে। পাশেই এক মহিলা। মাস্ক পরা। শুধু চোখ দু’টো উপর দিকে স্থির ওই বেবির দিকে।
আরও পড়ুন- বাবা-মায়ের হাত ছেড়ে অজানা দূর দেশে পাড়ি, কাবুল থেকে পালিয়ে অনাথ হাজারো শিশু
এই দৃশ্য স্থির হয়ে গিয়েছে অসংখ্য মানুষের চোখে। কোটি কোটি মানুষ শেয়ার করেছেন সোশাল মিডিয়ায়। আরও বহু মানুষ যত্নে কেয়ার আর ভালবাসার ইমোজি এঁকেছেন। জানতে চেয়েছেন তারপর? তারপর কী হল ওই ছোট্ট শিশুটির? ও কি অনাথ হয়ে গেল? কাঁটাতার দেওয়া পাঁচিলের ও পারে কি শুধুই বিচ্ছেদ? ও কি আর কোনও দিন বাবা মাকে ফিরে পাবে না?
সেই ছুড়ে দেওয়ার মুহূর্ত। সৌ: টুইটার
আফগানিস্তানে বাবাকে বাঙালিদের মত বাবা নামেই সম্বোধন করা হয়। এটা জেনেছিলাম খালিদ হোসেইনির ‘দ্য কাইট রানার’ পড়ে। যে কাহিনিতে এক কিশোর তার হৃদয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশকে কাবুল শহরে ফেলে রেখে একদিন অজানা উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিল। বন্ধু বিচ্ছেদ ঘটেছিল। হামিদ কারজাই বিমানবন্দরের পাঁচিলে যেন সেরকমই হাজারো বিচ্ছেদের কাহিনি সারবদ্ধ দাঁড়িয়ে। কে যে কোথায়, কোন দিকে, কখন চলে যাবে, তার ঠিকানা জানা নেই কারও।
হাদিয়াকে সেনা সদস্যের আদর। সৌ: টুইটার
মাত্র দশ সেকেন্ডের এই একটা ভিডিওই নাড়িয়ে দিয়েছে তামাম দুনিয়াকে।
শুধু ওই ভিডিওটাই নয় এ রকম আরও। যেখানে দৃশ্য ফ্রেমবন্দি হয়েছে বিমানবন্দরের পাঁচিলের উপর থেকে। জড়ানো কাঁটাতারের পাশ থেকে। সেই একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। দেজাভু। নীচে সারিবদ্ধ অপেক্ষারত মানুষ। তাঁদের চিৎকার। কোলাহল। ভয়। উৎকন্ঠা। হাতে হাতে তুলে দিচ্ছেন নিজেদের সন্তানকে মার্কিন মারিনের হাতে। হয়ত এই শেষ দেখা। কাঁটাতার পার হয়ে বাবা-মায়ের হাতছুট হয়ে পড়ছে অসংখ্য কিশোর আর কিশোরী। এম টোয়েন্টি সেভেন ইনফ্যান্ট্রি রাইফেল চালানো হাত শিশুদের নামিয়ে দিচ্ছে পাঁচিলের আর এক প্রান্তে। যেখানে অপেক্ষা করে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।
বাবার কোলে হাদিয়া। সৌ: টুইটার
কিন্তু ওই ছোট্ট কয়েক মাসের শিশুটি, ওর কী হল? অনেকের মত ও কি হারিয়ে যাবে?
কাবুল বিমানবন্দরের ভিতর তুরস্ক সেনার যে ক্যাম্প। সেখানেই দেখা গেল। সেই ছোট্ট প্রজাপতির মত শিশুটি। তাকে পরিচর্যা করছেন সেনার নার্স। শিশুটি আসলে অসুস্থ। মমতায় মুছিয়ে দেওয়া হচ্ছে ওর মুখ। এক জন মহিলা নার্স কোলে করে নাচিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করছেন। জামাকাপড় পাল্টে দেওয়া হয়েছে বেবির। মাথায় বেঁধে দেওয়া হয়েছে লাল রংয়ের বন্দানা। কান্না কিন্তু থামছে না। মনে মনে হয়ত বাবাকে খুঁজছে। মাকে ডাকছে।
An Afghan boy passing through the check point at #KabulAiport, leaving #Afghanishtan
He is the few lucky ones.
We wish him all the best ???: Staff Sgt. Victor Mancilla pic.twitter.com/cFnhp5ARg6
— CCPAC (@CCPAC1) August 20, 2021
আরও পড়ুন- কাবুল এয়ারপোর্টের ভাইরাল ‘বেবি’ চিকিৎসার পর ফিরে এল বাবা মায়ের কোলে
আফগানিস্তানে বাবাকে বাঙালিদের মত বাবা নামেই ডাকা হয়। বাবা কোলে নিতেই কান্না থেমে গেল। ছোট্ট হাদিয়া যেন বুঝতে পারল মা-ও খুব কাছেই আছে। আসলে শিশুরা গন্ধে বুঝতে পারে সব। আর তাই একেবারে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে হাদিয়া। হ্যাঁ বিমানবন্দরের কাঁটাতার পার করা ওই বেবি’র নাম হাদিয়া। কোলের ভিতর ঘুমিয়ে পড়তে পড়তে যে মনে মনে বলছে, ‘বাবা-মা আমি তোমাদের খুব ভালবাসি।’
এই শিশুর ছবিও ভাইরাল হয়েছে। সৌ: টুইটার