বাঘদাদ: হাজার হাজার বছর ধরে টিকে রয়েছে ইরাকের (Iraq) প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ। যুদ্ধের ধ্বংসলীলাও তার তেমন ক্ষতি করতে পারেনি। কিন্তু এই আধুনিক সভ্যতার যুগে বিলুপ্তির মুখে পড়েছে তা। কারণ আপাতদৃষ্টিতে প্রাকৃতিক, আসলে সেই মানুষেরই দোষ। এই সব প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে বালির ঝড় (Sand Storm), কোথাও বালির নীচে চাপা পড়ে যাচ্ছে। আর এই বালির ঝড়ের কারণ জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change)। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য কে দায়ী সে কথা বলার প্রয়োজন নেই।
প্রাচীন ব্যাবিলনিয়ান সভ্যতার (Babylonian Civilization) প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বহু যত্নে মাটি খুঁড়ে বের করা হয়েছিল। বাড়তে থাকা গরম এবং খরার ওই অঞ্চলে সেসব আবার হাওয়ায় উড়ে আসা বালির নীচে চাপা পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া দেশগুলোর একটা ইরাক। গত বছর অন্তত এক ডজন বড় বালির ঝড় উঠেছিল সে দেশে, সেই ঝড়ে আকাশের রং হয়ে ওঠে কমলা। দৈনন্দিন জীবন স্তব্ধ হয়ে যায়, শ্বাস নেওয়াই দায় হয়ে উঠেছিল।
আরও পড়ূন: Amit Shah-Manipur | মণিপুরে অশান্তির তদন্তে সিবিআই, তদারক করবে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির কমিটি
ঝড় থেমে যাওয়ার পর সবকিছুর ওপর বালির আস্তরণ পড়ে যায়। তার মধ্যে রয়েছে উম-আল-আকারিবের সুমেরীয় সভ্যতার (Sumerian Civilization) ধ্বংসাবশেষ, দক্ষিণের মরুপ্রদেশ ধি কারের ‘দ্য মাদার অফ স্করপিয়নস’ (The Mother of Scorpions)। প্রত্নতাত্ত্বিক আকিল আল-মানস্রায়ি জানিয়েছেন, বছরের পর বছর ধরে চলছিল মন্দিরের টেরাকোটা তোরণদ্বার খুঁড়ে তোলার কাজ। কিন্তু এই বালির ঝড় সে কাজ পিছিয়ে দিচ্ছে। ইরাকে বরাবরই বালি খুঁড়তে হয় পুরাতাত্ত্বিকদের, কিন্তু এখন বালির আয়তন বেড়ে চলেছে।
আকিল আরও জানান, এক দশক ধরে ক্রমশ তীব্র হতে থাকা ঝড়ের কারণে বালির নীচে অনেকটাই চাপা পড়েছে উম-আল-আকারিবের পুরাতাত্ত্বিক নির্দশন সাইট। প্রায় পাঁচ বর্গ কিলোমিটার ছড়িয়ে থাকা এলাকায় খ্রিস্টের জন্মেরও ২৩৫০ বছর আগের নিদর্শন রয়েছে। অতীতে সবথেকে বড় সমস্যা ছিল প্রাচীন শিল্পসামগ্রী লুঠ। এই সব ধ্বংসাবশেষে প্রাচীন মাটির পাত্র, প্রাচীন লিপি খোদাই করা মাটির ট্যাবলেট কম নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্রমশ সবকিছু মরুভূমির গ্রাসে চলে যাচ্ছে, যা এখন সবথেকে বড় চিন্তা। আকিলের আশঙ্কা, আর বছর দশেকের মধ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক সাইটগুলোর ৮০-৯০ শতাংশ বালির নীচে চাপে পড়বে।
টাইগ্রিস (Tigris) এবং ইউফ্রেটিস (Euphrates) নদীর মাঝখানে অবস্থিত এই জমিতে পৃথিবীর প্রাচীনতম কিছু সভ্যতা জন্ম নিয়েছিল। আজও তার কিছু নিদর্শন রয়েছে কিন্তু তা এখন বিলুপ্তির পথে। তেল সমৃদ্ধ দেশটি এখনও কয়েক দশকের স্বৈরাচার, যুদ্ধ এবং বিদ্রোহ থেকে নিজেকে পুনরুদ্ধার করছে। কিন্তু এখনও অপশাসন, দুর্নীতি এবং দারিদ্র্যে জর্জরিত।