শীতকাল (Winter) এসে গিয়েছে। সর্দি-কাশি (Cough and Cold) কিংবা ঠান্ডা লাগা থেকে গলব্যথার (Sore Throat) সমস্যায় খানিকটা আরাম পেতে আদা চা আমাদের ঘরোয়া টোটকা। অনেকে আবার ভালো লাগে বলেই শ্রেফ আদা (Ginger) খেয়ে থাকেন। পছন্দের তালিকায় আরও আছে, ঘরোয়া রান্না হোক কিংবা রসনাতৃপ্তির জন্য সুস্বাদু কোনও পদ, সবেতেই আদার জুড়িমেলা ভার। মশলা (Spices) হিসেবে বাঙালির হেঁশেলে (Kitchen) চিরকালই আদার কদর রয়েছে। আদা হজমে সহায়ক এবং পেট পরিষ্কার রাখে। তা জানেন কি, রোজ আদা খেলে আপনার শরীরে একাধিক পরিবর্তন আসতে পারে। তবে অবশ্যই অত্যাধিক নয়, পরিমাণ মতো। আপনার জন্য নির্দিষ্ট মাত্রা কতটা দরকার, তা জানতে কোনও ডায়েটিশিয়ানের (Dietician ) পরামর্শ নিন।
আদার উপকারিতা কী কী?
জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে: আদার মধ্যে একাধিক রাসায়নিক যৌগ রয়েছে, যা শরীরকে রোগ-জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে। পেট খারাপ বা ডায়রিয়া সংক্রমণের পিছনে ই. কোলাই (E. Coli) এবং শিগেলার (Shigella) মতো ব্যাক্টেরিয়ার (Bacteria) হাত থাকে। আদা এই সমস্ত ব্যাক্টেরিয়ার হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে।
মুখের স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক: আদার অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল গুন থাকার কারণে আপনার মুখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আদার মধ্যে জিঞ্জেরোলস নামক একটি যৌগ আছে, যা মুখের পেরিওডন্টাল (Periodintal) এবং গুরুতর মাড়ির রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়াকে বৃদ্ধি পেতে দেয় না।
আরও পড়ুন: Happy Children’s Day 2022: শীতে শিশুদের সুস্থ রাখবে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এই ৩ ডেজার্ট
বমিভাব কমায়: কোনও মহিলা গর্ভবর্তী অবস্থায় যদি পেটে অস্বস্তি ও ব্যথা অনুভব করেন, কিংবা বমিভাব দেখা দেয়, তাহলে আদা তাঁর জন্য উপকারী হতে পারে। আটা পেট ফাঁপা এবং পেটের গ্যাস থেকে মুক্তি দেয়। এছাড়া, সমুদ্রযাত্রার সময় হওয়া সিসিকনেস (Sea-Sickness) এবং কেমোথেরাপি (Chemotherapy) থেকে আসা বমিবমিভাবের সমস্যাতেও আদা উপকার দেয়।
পেশির ব্যথা কমায়: আদা ম্যাজিকের মতো পেশির ব্যথা সঙ্গে সঙ্গে দূর করতে না পারলেও, সময়ের সঙ্গে কিন্তু পেশির ব্যথা (Sore Muscle) কমাতে সাহায্য করে। ব্যায়াম করার কারণে যাঁরা পেশিতে ব্যথা অনুভব করছেন, তাঁরা রোজকার রান্নায় আদা ব্যবহার করতে পারেন।
বাতের উপসর্গ কমায়: আদা প্রদাহরোধী অর্থাৎ ফোলা কমায়, ফলে রিউমাটয়েড আর্থারাইটিস (Rheumatoid Arthritis) এবং অস্টিওআর্থারাইটিস (Osteoarthritis) উপসর্গের চিকিৎসায় সহায়ক। উপশম পেতে আপনি আদা খেতেও পারেন কিংবা ব্যথার জায়গায় আদার প্যাচও ব্যবহার করতে পারেন।
ক্যান্সার প্রতিরোধক: কিছু অধ্যয়নে দেখা গিয়েছে, আদার মধ্যে থাকা বায়োঅ্যাক্টিভ মলেকিউল কোলোরেক্টাল, গ্যাস্ট্রিক, জরায়ু, লিভার, ত্বক, স্তন এবং প্রস্টেট ক্যান্সারের মতো কিছু ক্যান্সারের বৃদ্ধিকে কমিয়ে দিতে পারে আদা।
রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রক: কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আদা আমাদের শরীরের ইনসুলিন মাত্রা উন্নত করে আর ইনসুলিন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তবে এবিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
পিরিয়ডের ব্যথা কমায়: আদা মহিলাদের মেনস্ট্রুয়াল ক্র্যাম্প (Menstrual Cramp) অর্থাৎ ঋতুস্রাবের যন্ত্রণা উপশম করতে কার্যকর। গবেষণায় দেখা গিয়েছে পিরিয়ডের সময় তিনদিন একটানা ১,৫০০ মিলিগ্রাম করে আদার পাউডার (Ginger Powder) খেলে এই সমস্যায় তাঁরা অনেকটাই উপকার পেয়েছেন।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে: আপনি যদি খারাপ কোলেস্টেরল অর্থাৎ এলডিএল কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভোগেন, তাহলে টানা তিনমাস ৫ গ্রাম করে আদা খান। দেখবেন কোলেস্টেরল সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
রোগ থেকে রক্ষা করে: আদায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (Antioxidant) রয়েছে, যা স্ট্রেস এবং শরীরের ডিএনএ (DNA) নষ্ট করা যৌগের সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করে। এর ফলে ব্লাড প্রেশার, হার্টের রোগ এবং ফুসফুসের রোগের মতো দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার ক্ষেত্রে শরীরকে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে।
বদহজম দূর করে: আদা খেলে ডিসপেপসিয়া (Dyspepsia) নামে পরিচিত দীর্ঘদিনের বদহজমের (Indigestion) সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়। খাবার খাওয়ার আগে সামান্য পরিমাণ আদা মুখে দিলে পেট পরিষ্কারে সহায়ক। আদার উপকারি গুনাগুন বদহজমের সমস্যা দূর করে।