আরেকটা ২১ ফেব্রুয়ারি চলে গেল। বইমেলাও শুরু হয়েছে। বাংলা ভাষা নিয়ে কথা বলার এটাই উপযুক্ত সময়। ভাষাদিবস ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালির কাছে একটি পবিত্র দিন। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে পালন করতে করতে ভাষাদিবসও এখন আর পাঁচটা উৎসবের মতোই আরও একটা উৎসবের দিনে পরিণত হয়েছে এই বাংলায়, মানে পশ্চিমবঙ্গে। এই ভাবে বাৎসরিক একটা ভাষা-পুজো আমরা করি বটে, কিন্তু তাতে কি ভাষার বিসর্জন আটকানো যায়?
পৃথিবীতে এমন বহু লেখকে পাওয়া যাবে যাঁরা মাতৃভাষায় সাহিত্য রচনা করেননি। এর মধ্যে ফ্রানৎজ কাফকা, আলবেয়ার কামু, সাররিয়ালিস্ট কবি এইমে সেজেয়ার সহ বহু লেখক আছেন যাদের সারা দুনিয়া এক ডাকে চেনে। ভারতীয় অনেক লেখকও ইংরেজিতে লিখে বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছেন। যেমন মুলুকরাজ আনন্দ, অমিতাভ ঘোষ, ঝুম্পা লাহিড়ি, অরুন্ধতী রায় এমন অসংখ্য নাম করা যেতে পারে। এঁরা নিজেদের মাতৃভাষাকে যথেষ্ট ভালোবাসেন, তবু লিখেছেন অন্য ভাষায়। ফলে ভাষা নিয়ে অতি আবেগ, শুচিবাই, যা মাঝে মাঝে আমাদের চারপাশে চিৎকার, গর্জন-সহ ভেসে ওঠে, ভাষাপ্রেম নিয়ে যে হাহাকার মাঝে মধ্যেই আমাদের কানে আসে, তা আসলে অর্থহীন।
আবদুল ওদুদের লেখা বই ‘বাংলার জাগরণ’-এর নতুন সংস্করণের ভূমিকায় সম্পাদক আবুল কাসেম ফজলুল হক লিখেছেন, ‘অন্তর্গত চাহিদার তাগিদে আর ইউরোপের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতা-সংস্কৃতির অভিঘাতে বাংলার চিন্তানায়ক ও কর্মনায়কদের মধ্যে উনিশ শতকের শুরুতেই এক মহান নবচেতনার প্রকাশ সূচিত হয় । এই নবচেতনা তাঁদের তাড়িত করে ধর্মসংস্কার ও সমাজসংস্কার প্রচেষ্টায়, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় ও নতুন সাহিত্যসৃষ্টিতে। এ-উপলক্ষে কলকাতায় পর্যায়ক্রমে দেখা দেয় নতুন নতুন কর্মযজ্ঞ। রামমোহন-দেবেন্দ্রনাথ-কেশবচন্দ্রের চিন্তাধারা ও ব্রাহ্মসমাজের সংস্কারপ্রচেষ্টা, ডিরোজিও-ডেডিড হেয়ার ও ইয়ং বেঙ্গলদের বিচার প্রবণতা আর উদ্দাম কর্মকাণ্ড, রাধাকান্ত-ভবানীচরণ ও ধর্মসভার প্রতিক্রিয়া, অক্ষয়কুমার-বিদ্যাসাগর-বঙ্কিমের কর্মমুখী বলিষ্ঠ চিন্তাধারা, রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ-অরবিন্দের নতুন ধর্মোপলব্ধি ও প্রচারকার্য, ঈশ্বরগুপ্ত- প্যারীচাঁদ-মধুসূদন-দীনবন্ধু-বঙ্কিমচন্দ্র-কালীপ্রসন্ন ঘোষ- গিরীশ ঘোষ-দ্বিজেন্দ্রলাল-রবীন্দ্রনাথ-ত্রিবেদী-শরৎচন্দ্র প্রমুখের সাহিত্যকর্ম, জগদীশবসু- প্রশান্তমহলানবিশ-মেঘনাদ সাহা-সত্যেনবসুর বিজ্ঞানসাধনা, গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়-আশুতোষ মুখোপাধ্যায়-দীনেশসেনের শিক্ষাব্রত, আবদুল লতিফ-আমির আলির চিন্তা ও কর্ম, বেগম রোকেয়া ও লুতফর রমানের চিন্তাধারা ও সংস্কারপ্রচেষ্টা, নজরুলের সৃষ্টিপ্রয়াস, এস ওয়াজেদ আলি, মোহম্মদ ওয়াজেদ আলী, মোহম্মদ বরকতুল্লাহ, আবুল হুসেন ও মুসলিম সাহিত্য সমাজের বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন, ওদুদ-মোতাহারের সষ্টিসাধনা, প্রগতিশীল ও রক্ষণশীল ধারার সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র…’ ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই যে একটা সামগ্রিক কর্মযজ্ঞের কথা বলা হচ্ছে, এই চেতনা আসলে, কেড়ে নেওয়া স্বাধীনতার বিপরীতে এক দুর্বার শক্তির জেগে ওঠা। নতুন মূল্যবোধের জন্ম। মূল্যবোধ কথাটা এখানে মরালিটি অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে।
ক্ষমতার চরিত্রই হল সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া। যখন বেশির ভাগ মানুষ মনের তাগিদে, প্রাণের টানে, যুক্তি-প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে ক্ষমতাকে প্রশ্ন করে, সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। ওপারের বাঙালির ইতিহাসের তেমনই কয়েকটি পৃষ্ঠা, ভাষা আন্দোলন। পরে অবশ্য তা আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হয়েছে। বাঙালি এই ইতিহাস ভুলবে না। কিন্তু, মনে রাখতে হবে, তাতে, এই বাংলায়, পশ্চিমবঙ্গে, বাংলা ভাষার সংকট কাটবে না। ধরা যাক পৃথিবীতে ২৫ কোটি বাঙালি। তার মধ্যে প্রায় ১০ কোটি এই আমাদের রাজ্যে। শুরুতেই একটা কথা বলা হয়েছে, ‘অন্তর্গত চাহিদার তাগিদ’। বাংলা নিয়ে কী আমাদের কোনও অন্তর্গত চাহিদা আছে? তাগিদ আছে?
মাঝে একটা আন্দোলন অনেক রাজ্যেই হয়েছে, এখনও মাঝে মধ্যেই শোনা যায়। কালো রং দিয়ে নিজের রাজ্যের ভাষা বাদে বাকি সব ঢেকে দেওয়া। ৯০-এর দশকে এই কাজের সঙ্গে যুক্তদের একটি সংবাদপত্রের সম্পাদকীয়তে ‘বাংলাবাজ’ বলে ব্যঙ্গ করলে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সহ বহু বিশিষ্ট মানুষ প্রতিবাদ করেছিলেন। তার পরেও কয়েক দশক কেটে গেল। এপার বাংলায়, পশ্চিমবঙ্গে, বাংলা ভাষা ভাল আছে, এমন বলা যাবে না। বাংলা ভাষাকে ভাল রাখতে যারা সরব, তাদের প্রায় সব সময়ই দেখা যায়, অন্য ভাষাকে আক্রমণ করতে। সোশ্যাল মিডিয়াতেই মাঝে মধ্যেই কতিপয় সাহসী বাঙালি যুবকদের কোনও ছোট-খাটো অবাঙালি ব্যবসায়ীকে ঘিরে ধরে প্রশ্ন করতে দেখা যায়, কেন ওই মানুষটি বাংলায় কথা বলছেন না। সঙ্গে বাংলায় হম্বি-তম্বিও চলতে থাকে। এই সব স্বঘোষিত বাংলা-পাইকদের হাতে বাংলা ভাষা খুব নিরাপদ, তা তাঁদের আচরণ, চাল-চলন দেখে মনে হয় না। হম্বি-তম্বিতে ভাষা বাঁচে না। লাঠি হাতেও ভাষা রক্ষা করা যায় না। বিকাশ ভট্টাচার্য মেয়র থাকাকালীন কলকাতা পুরসভার ট্রেড লাইসেন্সের ফর্মের একেবারে নীচে সর্ষেদানার সাইজের হরফে লেখা চল হয়েছিল, হয়তো সে নিয়ম এখনও আছে, দোকানের নাম অন্য ভাষার সঙ্গে বাংলাতেও লিখতে হবে। ভাল নিয়ম, কিন্তু আইনের সাহায্যে বাংলাকে সুরক্ষা দিতে হচ্ছে মানেই তো, কারণ যাই হোক, আসলে ভাষায় অপুষ্টির কামড়ের দাগ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সাইনবোর্ড লেখা নিয়ে আইন করে, ভয় দেখিয়ে, চাপ দিয়ে ভাষার মান-সম্মান বৃদ্ধি করা যায় না।
বাংলা ভাষার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হওয়ার পিছনে প্রধান কারণ আমাদের রাজ্য অর্থনীতির দিক থেকে পিছিয়ে পড়েছে। এই প্রক্রিয়া চলছে দীর্ঘদিন ধরে। যে ভাষায় ব্যবসা হয় না সেই ভাষার দুর্বল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বাড়ে। তার গুরুত্ব কমে যায়। দ্বিতীয় কারণ, নকশালপন্থী আন্দোলন। এ এক অদ্ভুত মিল। একদা পরাধীন ভারতে মহাত্মা গান্ধীর ডাকে দলে দলে ছাত্র-ছাত্রীরা লেখা-পড়া ছেড়ে রাজনীতিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আবার দেখা গেল, স্বাধীনতার ২০ বছর পরে একে বারে ভিন্ন মেরুর রাজনীতিবিদ চারু মজুমদারের ডাকে শত শত ছেলেমেয়ে লেখা পড়া ছেড়ে এসে রাজনীতিতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। প্রশ্ন জাগতেই পারে, স্কুল কলেজের লেখাপড়া সম্পর্কে চারু মজুমদারে ধারণাটা ঠিক কী রকম ছিল। ১৯৬৫ সালে জেল থেকে চারু বাবুর, স্ত্রী লীলা মজুমদারকে লেখা চিঠি থেকে জানা যায়, তিনি এক জন সাধারণ বাবার মতোই সন্তানদের লেখা পড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হতেন, এবং পরীক্ষায় ভালো ফল করলে খুশি হতেন। যে যত পড়ে সে তত মূর্খ হয়, এমন কথা ৬৫ সালেও তিনি ভাবছেন না। অথচ কিছু দিনের মধ্যেই স্কুল কলেজ পোড়ানো, লাইব্রেরি জ্বালানো, পরীক্ষা ভন্ডুল তিনি সমর্থন করছেন। কেন এই পরিবর্তন, তার স্পষ্ট উত্তর মেলে না। তিনি আসলে ভেবেছিলেন চিনের ধাঁচে সাংস্কৃতিক বিপ্লব জাতীয় কিছু একটা হচ্ছে-টচ্ছে বোধহয়। সেই ধারণা যে সম্পূর্ণ ভুল ছিল, তা পরবর্তীকালে প্রমাণিত হয়েছে। এই সময়ই আক্রমণ, হামলা ইত্যাদি চালিয়ে বাঙালি মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের নাগালে থাকা বহু নামী স্কুলের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়। উচ্চবিত্তদের স্কুলগুলি মোটামুটি এই বিপ্লবের আঁচের বাইরে থাকল।
এর পর আসে ১৯৭২-৭৭ কংগ্রেস আমলের অরাজকতা। স্কুল-কলেজকে ভয়ের জায়গায় পরিণত করা। ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার ঝোঁক বাড়তে শুরু করল। প্রচার শুরু হয়ে গেল বাংলা মাধ্যম স্কুলে লেখা পড়া হয় না। জলপাইগুড়ি জেলার এক অশিক্ষিত ভূমিহীন ভাগচাষির একটি চিঠি বেশ হইচই ফেলেছিল ২০০৫ সালে। চিঠিটি প্রকাশিত হয়েছিল খবরের কাগজে। তিনি একজনকে দিয়ে তাঁর অভিযোগ জানিয়েছিলেন ওই চিঠিতে। তাতে তাঁর বক্তব্য ছিল, তিনি লেখা পড়া জানেন না, স্বপ্ন দেখেছিলেন মেয়েকে লেখাপড়া শেখাবেন, কিন্তু তার মেয়ে বছরের পর বছর নিয়মিত ক্লাস করে পঞ্চম শ্রেণিতে উঠে ভর্তি হতে গেল বড় স্কুলে। সেখানকার প্রধান শিক্ষক মেয়ের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে বললেন, ও কিছুই শেখেনি গত চার বছরে। এই যে স্কুলে গিয়েও ভাষা বা অঙ্ক, ইতিহাস কিছুই শিখছে না একটা বড় অংশ ছাত্র-ছাত্রী। এখানেই পাঠ্য অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বাংলাভাষাও পিছিয়ে পড়ছে। এর কারণ, মধ্যবিত্ত ছাত্র-ছাত্রীরা যে সব সরকারি এবং সরকারি সাহায্যের উপর নির্ভরশীল স্কুলগুলিতে পড়ে, সেখানে ইংরেজি তুলে দিয়ে সিপিএমের নেতৃত্বে বাম সরকার বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলিকে ধীরে ধীরে দুয়োরানিতে পরিবর্ত করলেন। পরীক্ষা উঠে গেল। পাস-ফেল বিদায় নিল। দেখার কেউ রইল না লেখা-পড়া কেমন চলছে অন্যদিকে বাড়িয়ে দেওয়া হল মাধ্যমিকে পাসের হার। বিরাট সংখ্যক স্কুল থেকে পাস করা পড়ুয়াদের এমপ্লয়বিলিটি ‘কর্ম-যোগ্যতা’ কমে গেল। বলা যায়, হাতে গোনা কিছু বাংলা মাধ্যম স্কুল ছাড়া ছেলে-মেয়েরা বাংলা শিখছে না। বাংলা বই পড়ছে না। ভালো করে বাংলা না শেখার কারণে এই অসাধারণ ভাষাটি সম্পর্কে কোনও বাড়তি আগ্রহও তৈরি হচ্ছে না। কলকাতায়, নামী লেখক মানে (রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিয়ে বলছি) সুনীল, শক্তি, শংকর, বা বিভূতিভূষণ, প্রেমেন, মানিক… এই তালিকাটা মেরে-কেটে ৫০-৬০ বা ৮০ জনের হবে। এর বাইরের আর কোনও লেখকদের লেখা বাঙালি পড়ছে না বলাই ভালো। অতি উঁচু মানের প্রবন্ধ, উপন্যাস, কবিতা, নাটক কিন্তু বাংলায়, এই পশ্চিমবঙ্গে লেখা হচ্ছে। ইংরেজিতে যা লেখা হচ্ছে তার থেকে মানের বিচারে কোনও অংশে কম তো নয়ই, অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে অনেক বাংলায় লেখা বই। কিন্তু সেসবের বিক্রি নেই। প্রকাশকরা এখন এক বছরে তাদের নতুন বইয়ের মাত্র ৩০০ কপি বিক্রি হলেই নিজেদের ধন্য মনে করেন। ভাবুন পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ১০ কোটি বাঙালি আর ৩০০ কপি বই এক বছরে। কেউ ষড়যন্ত্র করেনি বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে। সমস্যার মূল কারণ ‘আত্মঘাতী বাঙালি’।
বাংলায় যত উঁচু মানের ‘লিটল ম্যাগাজিন’ বেরোয়, এমন নজির পৃথিবীর কোথাও নেই। এই সম্পদ সম্পর্কে বাঙালি উদাস। নির্বিকার। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ১০ কোটি জনসংখ্যা। অথচ সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০-১৫ লক্ষ খবরের কাগজ এখন বিক্রি হয় কি না সন্দেহ। বাঙালি কাগজ কেনে না। বড় অংশ বাঙালি কাগজ পড়ে না। জ্ঞান অর্জন করে হোয়াটসঅ্যাপ থেকে। ১০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে যদি এক কোটি মানুষ বাংলা কাগজ কিনতেন প্রতিদিন, বাংলা সাংবাদিকতার মান বদলে যেত। কারণ, তখন বাংলা মিডিয়াকে পাঠক ছাড়া আর কারও উপর নির্ভর করতে হত না। এক কোটি পাঠক থাকলে সে কারও চোখ রাঙানিকেই ভয় পেত না। বিক্রি কম হয়ওয়ার কারণে কাগজের দাম বাড়িয়ে যে ক্ষতি সামাল দেবে সেই সাহস কাগজ মালিকদের নেই। তাদের ভয় তাতে বিক্রি আরও কমে যাবে। এই ভয়ে বাংলা কাগজ ক্রমাগত সরকারি অনুগ্রহের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এখনই দেখা যাচ্ছে, সেরা ছেলে-মেয়েরা আর বাংলা সাংবাদিকতায় আসতে সাহস পাচ্ছেন না।
বাংলা নাটকের সুনাম সারা দেশে। ক’জন বাঙালি বাংলা নাটক দেখেন? যে কোনও মলে গিয়ে এক ঘণ্টা দাঁড়ান, দেখবেন, আড়াই-তিন হাজার টাকার ব্র্যান্ডেড জামা, জুতো, রোদ-চশমা, বেল্ট হু হু করে বিক্রি হচ্ছে। আর তিনশো টাকা দামের বাংলা বই বিক্রি করতে প্রকাশকের জিভ বেরিয়ে যাচ্ছে, নাটকের টিকিট কাউন্টারে মাছি উড়ছে। তাহলে কি বাংলা ভাষা, বাংলা বই, বাংলা নাটকের মৃত্যু হবে? তা কখনই হবে না। যেমন চলছে এ অবস্থা না বদলালে, ভয় হয়, ভবিষ্যতে হয়তো এমন হবে, বাঙালি সমাজের একটা ক্ষুদ্র এলিট অংশ, ভালোবেসে, প্রাণের টানে, বাংলা ভাষায় সাহিত্য আরাধনা চালিয়ে যাবেন। উন্নত মানের সাহিত্যও তাঁরা সৃষ্টি করবেন, কিন্তু আম জনতার সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়ে যাবে ক্ষীণ। যা অনেকটাই ইতিমধ্যে ঘটে গিয়েছে।