ওয়েবডেস্ক: অপারেশন সিন্দুর ও বালাকোট অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন মহিলা বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার (Wing Commander) নিকিতা পাণ্ডে (Nikita Pandey)। তাঁকে চাকরি থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ বায়ুসেনার। বায়ুসেনার নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ সুপ্রিম কোর্টের। তাঁর স্থায়ী চাকরি বহালের ‘পার্মানেন্ট কমিশন’ (Permanent Commission) প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। গত ২২ মে বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিং তাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। এই ঘটনা সামনে আসতেই হইচই পড়েছে। অপারেশন সিন্দুরের মাধ্যমে পহেলগামে পাকিস্তানের মদতে জঙ্গি হামলার কড়া জবাব দেওয়া হয়েছে। তাতে অংশ নিয়ে নিয়েছিলেন ওই উইং কমান্ডার। আগামী ১৯ জুন পর্যন্ত তাঁকে এক্সটেনশন দেওয়া হয়। পার্মানেন্ট কমিশনের জন্য বোর্ডের বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে চাকরিতে বহাল রাখা হোক। এই মর্মে তিনি আবেদন করেছিলেন।
শর্ট সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিকিতা চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। ১৩ বছরের বেশি সময় তিনি সার্ভিস করেছেন। নিকিতা তাঁর আবেদনপত্রে জানিয়েছেন, ১৯৯২ সাল থেকে মহিলা অফিসাররা বায়ু সেনাতে যোগ দিচ্ছেন। যা প্রায় ৩০ বছর হয়ে গেল। শুধুমাত্র মহিলাদের শর্ট সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমেই নিযুক্ত হতে হয়। সেখানে পুরুষদের শর্ট সার্ভিস কমিশন ও পার্মানেন্ট কমিশনের সুযোগ রয়েছে। উল্লেখ্য, এই বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালত পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর জন্য অনিশ্চয়তা ভালো নয়। কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি নীতি বিবেচনা করতে পরামর্শ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
আরও পড়ুন: কেরলে এক সপ্তাহ আগেই বর্ষা…
ভারতীয় বায়ুসেনা বিভাগে চাকরির ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়মাবলী রয়েছে। সেই নিয়মাবলী মেনেই চাকরিতে বহাল হন বায়ুসেনার জওয়ানরা। বায়ু সেনা চাকরিতে প্রাথমিকভাবে স্বল্পকালীন ১৪ বছরের চাকরির মেয়াদ
তারপর কমিশনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয় ওই জওয়ান ১৪ বছর পর স্থায়ী পদে বহাল থাকবে কি না। বায়ুসেনার একটি নির্দিষ্ট বোর্ড আছে। সেই বোর্ড স্থায়ীকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
বায়ুসেনার উইং কমান্ডার নিকিতা পাণ্ডে ১৩ বছর ৫ মাস চাকরি হওয়ার পর স্থায়ীকরণের জন্য কমিশনের কাছে আবেদন জানান। কমিশন তার আবেদন খারিজ করে দেয়। ফলে ১৪ বছর চাকরি জীবনের পর তাকে বহিষ্কারের নির্দেশ জারি করে বায়ু সেনা বিভাগ। সেই সিদ্ধান্তকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হন নিকিতা পান্ডে।
বিচারপতি সূর্যকান্ত জানান, আমাদের দেশের বিমান বাহিনী বিশ্বের সেরা সংস্থাগুলির মধ্যে একটি। অফিসাররা খুবই প্রশংসনীয়। তাঁরা যে দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন, আমি মনে করি তা অতুলনীয়। তাই, আমরা সর্বদা তাঁদের স্যালুট জানাই। তাঁরা জাতির জন্য একটি বড় সম্পদ। তাঁরা এক অর্থে জাতি। তাঁদের কারণেই আমরা রাতে ঘুমোতে পারি।
নিকিতা পান্ডের আইনজীবী মেনকা গুরুস্বামী বলেন, নিকিতা পান্ডে একজন দক্ষ ফাইটার কন্ট্রোলার। যিনি ইন্টিগ্রেটেড এয়ার কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেমে বিশেষজ্ঞ হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি অপারেশন সিন্দুর এবং অপারেশন বালাকোটে অংশ নিয়েছেন। দেশের বিশেষজ্ঞ বিমান যোদ্ধা নিয়ন্ত্রকদের মেধা তালিকায় এই অফিসার দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন। নিকিতা পান্ডে ১৩.৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে চাকরি করেছেন। স্থায়ী কমিশন প্রত্যাখ্যান করে। এবং তাঁকে তাঁর চাকরি শেষ করতে নির্দেশ জারি করে।
অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্যা ভারতী বলেন, পরবর্তীকালে যদি সবাই স্থায়ীকরণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। তাহলে বায়ু সেনা সমস্যার সমুখীন হবে। বায়ুসেনার স্থায়ীকরণের বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকার নির্ধারণ করে না। এটি নির্ধারণের জন্য বায়ুসেনার একটি নির্দিষ্ট বোর্ড রয়েছে। তারাই জওয়ানের দক্ষতা এবং যোগ্যতার বিচার করে স্থায়ীকরণে সিদ্ধান্ত নেয়। তাঁদের সিদ্ধান্তের উপরই নির্ধারিত হয় স্বল্প চাকরির মেয়াদ থেকে স্থায়ীকরণের বিষয়টি।
এই বিষয়ে বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, বায়ু সেনা বোর্ডের সিদ্ধান্তের পর আদালত মনে করলে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করতে পারে। সেই কমিটি উইং কমান্ডার নিকিতা পাণ্ডের যোগ্যতা ও দক্ষতা বিচার করে দেখবে।
আদালতের নির্দেশ, বায়ু সেনা কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে কীসের ভিত্তিতে নিকিতা পাণ্ডেকে স্থায়ীকরণ করা যাবে না। মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিকিতা পাণ্ডের বহিষ্কারের উপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ বজায় থাকবে মামলার পরবর্তী শুনানি ৬ আগস্ট।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রের মোদি সরকার অপারেশন সিন্দুর নিয়ে নিজেদের সফলতা প্রচারে ব্যস্ত। ঠিক সেই সময় অপারেশন সিন্দুরের অংশগ্রহণকারী এক জওয়ানের মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
দেখুন অন্য খবর: