‘রাখি বন্ধন’ ভাই-বোনের পবিত্র সম্পর্কের নিবিড় উদযাপন। বর্তমানে শুধুই ভাই-বোনের মধ্যে এই উৎসব আর সীমাবদ্ধ নেই। আপামর ভারতবাসীর মধ্যে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পারস্পরিক সৌভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধির জন্যও রাখি পূর্ণিমা পালিত হয়ে থাকে।
রাখি পূর্ণিমার ঠিক ৫ দিন আগে ঝুলন। আর ৭ দিন পর জন্মাষ্টমী। প্রতি বছর শ্রীকৃষ্ণের এই দুই লীলার মাঝে শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে রাখি পূর্ণিমা অনুষ্ঠিত হয় বলে এর আরেক নাম ‘শ্রাবণী পূর্ণিমা’।
আরও পড়ুন : ভ্যাপসা গরমে স্বস্তি দিতে রাখিতে বসেছে ‘এসি’, হাতে পরলেই শীতল অনুভূতি
ভারতীয় পুরাণে অনেক রকমের কাহিনি তৈরি হয়েছে রাখি পূর্ণিমা নিয়ে। মহাভারতের বর্ণনা অনুযায়ী, কৃষ্ণ পাণ্ডব-পত্নী দ্রৌপদীকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। কৃষ্ণের নিজের বোন সুভদ্রা একবার অভিমানভরে কৃষ্ণকে জিজ্ঞেসও করেছিলেন, দ্রৌপদীর প্রতি তাঁর এই স্নেহের কারণ। যার উত্তরে কৃষ্ণ বলেছিলেন সময় এলেই সুভদ্রা কারণ বুঝতে পারবেন। একদিন যখন কোনওভাবে কৃষ্ণের হাত কেটে যায়। সুভদ্রা রক্ত বন্ধ করার জন্য কাপড় খুঁজছিলেন। তখন সেখানে উপস্থিত দ্রৌপদী এক মুহূর্ত দেরি না করে নিজের মূল্যবান রেশম শাড়ি ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাত বেঁধে দেন। যার ফলে কিছুক্ষণের মধ্যেই রক্তপাত বন্ধ হয়। কৃষ্ণ তখন দ্রৌপদীকে প্রতিশ্রুতি দেন, ‘বোন’ দ্রৌপদীর প্রতিটি সুতোর প্রতিদান দেবেন তিনি এবং পরে কৃষ্ণ দ্রৌপদীকে কৌরবদের রাজসভায় চরম কলঙ্ক থেকে রক্ষাও করেছিলেন। এর ফলেই সুভদ্রা বুঝতে পেরেছিলেন কেন কৃষ্ণ দ্রৌপদীকে এত স্নেহ করেন।
আরও পড়ুন : Raksha Bandhan 2021: উপহার হিসেবে এই স্মার্ট গ্যাজেটগুলি চমৎকার
সাল ১৯০৫। বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করতে রাখিকে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ওই বছরের ২০ জুলাই ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গের কথা ঘোষণা করে। জানানো হয়, আইন কার্যকর হবে ১৯০৫-এরই ১৬ অক্টোবর। বাংলায় ৩০ আশ্বিন। সেই সময়ে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতায় মানুষ সামিল হয়। ঠিক হয়, ওই দিন বাংলার মানুষ পরস্পরের হাতে বেঁধে দেবেন হলুদ সুতো। কবিগুরু এই দিনটিকে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করার ডাক দেন।
প্রতি বছরই রাখি পূর্ণিমায় প্রত্যেক দাদা বা ভাইয়ের হাতে বোন বা দিদিরা রাখির পবিত্র সুতো পরিয়ে দেন এবং দাদা বা ভাই তাঁর বোনের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেন সারা জীবনের জন্য।