কেশিয়াড়ি : জৌলুস হারালেও পুরনো ঐতিহ্যের সঙ্গেই পুজো হয়ে আসছে কেশিয়াড়ির দত্তবাড়িতে। তলোয়ার নিয়ে ঘটত্তোলন ও বিসর্জন, সেইসঙ্গে এখনও আতস কাচের আগুন দিয়ে কেশিয়াড়ি দত্তবাড়ি দুর্গাপুজোর হোম অনুষ্ঠিত হয়। একসময় ছিল জমিদারি, ছিল অঢেল সম্পত্তিও। এখন জমিও নেই, জমিদারিও নেই। থেকে গিয়েছে অতীতের ঐতিহ্য আর ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা।
প্রায় ২০০ বছর আগে বর্ধমান শহর থেকে এসেছিলেন পূর্ব পুরুষেরা। তাদের মধ্যে হর নারায়ণ দত্ত এবং দারোকা নাথ দত্ত প্রথম পুজো শুরু করেন দত্ত পরিবারে। এদের মধ্যে হর নারায়ণ দত্ত ছিলেন পেশায় উকিল। তখনকার দিনে ইংরেজ আমলে ওকালতি করে প্রচুর উপহার পান তিনি। সেই সম্পত্তি থেকে একে একে বিভিন্ন জমিদারি কেনেন এবং সেখান থেকেই শুরু হয় দত্তবাড়ির বহু পুরনো ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো।
আরও পড়ুন : আজ মহালয়া, সকাল থেকেই গঙ্গার ঘাটগুলিতে চলছে তর্পণ
২০০ বছর ধরে দত্ত পরিবারে সোলার পটের দুর্গা পুজো হয়ে আসছে। আজও মাটির প্রতিমা নয়, তৈরি হয় সোলার প্রতিমা। বহু বছরের ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ন রাখার ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি হয় না। পুরনো আমলের চুন-সুড়কি,পোড়া ইট দিয়ে তৈরি সেই রাজবাড়ি এখনও বিদ্যমান। বর্তমানে নতুন পাকা বাড়িতে রাজবাড়ির উত্তরসূরীরা বসবাস করেন। তার পেছনে রয়েছে পুরনো ঐতিহ্য বাড়ি। বাড়ির দক্ষিণ দিকে রয়েছে একটি পুষ্করিণী। সেখানে তখনকার দিনের শুধু জমিদার বাড়ির মেয়েরা স্নান করতেন। পুরুষদের যাতায়াত ছিল নিষিদ্ধ। এখনও সেখানে রয়েছে মজে যাওয়া পুকুরঘাট। আর ঐতিহ্যের স্মারক বাড়িতে রয়েছে অসংখ্য সারিবদ্ধ দালান। যা প্রায় ভগ্নপ্রায়। আর ঠিক দুই দালানের মাঝ বরাবর রয়েছে একটি করে ঘর। যেখানে অতিথিরা থাকতেন।
পুরো বাড়িটাই এখন প্রায় ভগ্নপ্রায়। জরাজীর্ণ পোড়োবাড়িতে পরিণত হয়েছে। আগাছায় ভরে গিয়েছে সমগ্র বাড়ির দেওয়াল। আর কেউ বসবাস করে না সেখানে। তবে, ঐতিহ্যের শরিক হিসেবে তা এখনও বিদ্যমান। এখনও আচার মেনে শুধু পুজো হয় সোলার পটের দেবী দশভুজার। যেহেতু, কেশিয়াড়িতে সর্বমঙ্গলার মন্দির রয়েছে তাই মূর্তি পুজো হয় না। কথিত রয়েছে, কেশিয়াড়িতে দেবী সর্বমঙ্গলার মূর্তি পুজো হওয়ায় এ অঞ্চলে তখনকার দিনে আর কোনও মূর্তি পুজো করা যেত না। সেই থেকেই হয় ঘটের পুজো নয়তো পটের পুজো। এখন দত্ত পরিবারের মোট তিন শরিক।
আরও পড়ুন : কাগজের বাক্স কেটে হাতে খড়ি, খুদে শিল্পীর কাগজের দুর্গা আসছে কলকাতায়
দুর্গাপুজোর সময় এই পরিবারের সমস্ত সদস্যরা একত্রে মিলিত হন। দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে একসঙ্গে সবাই রান্না করা, খাওয়া, আনন্দ-উৎসব করে থাকেন। প্রত্যেকবারই শরিকদের মধ্যে পুজোর দায়িত্ব বন্টন হয়। ঘট দশমীতে বিসর্জন হলেও প্রতিমা বিসর্জন হয় লক্ষ্মী পুজোর পর। বর্তমানে জমিদারবাড়ির আর কোনও সম্পত্তি না থাকায় পুজো পরিচালনা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। তবুও তার মধ্যে যতটুকু বাঁচিয়ে রাখা যায় ঐতিহ্যকে, তারই চেষ্টা চালাচ্ছেন দত্ত পরিবার।