ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের সদস্য অনাথবন্ধু পাঁজা।জন্ম ১৯১১ সালের ২৯ অক্টোবর। মেদিনীপুরের জলবিন্দু গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন অনাথবন্ধু পাঁজা।
শান্তশিষ্ট প্রকৃতির অনাথবন্ধু তিন বছর বয়সে হারান তাঁর বাবা সুরেন্দ্রনাথ পাঁজাকে। প্রথমে ভুবন পালের পাঠশালায়, পরে মেদনীপুর শহরে গমন ও সুজাগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। মা কুমুদিনীর সঙ্গে চলে আসেন মেদিনীপুর শহরে। টাউন স্কুলে ভর্তি হলেও দারিদ্রতার জন্য লেখাপড়ায় ইতি পরে,। যোগ দেন বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স বিপ্লবী দলে।
সেই সময় বল্লভপুর জিমনাসিয়াম ক্লাবে ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, অমর চট্টোপাধ্যায়ের মতো বিপ্লবীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। বেশকিছু বিপ্লবী কর্মকান্ডের মাধ্যমে ক্রমে নির্ভীক বিপ্লবীতে পরিণত হন। সেই সময় অনাথবন্ধু কলকাতা থেকে পাঁচটি রিভলবার নিয়ে যান তাঁর জেলায়।
প্রসঙ্গত, অনাথ বন্ধুরা খুব গরিব, মা ও ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন। খড়্গপুরে ওঁর কিছু ধানের জমি ছিল। সেই জমির ধান বিক্রি করে চলত তাঁদের সংসার। বিপ্লবীরা বিভিন্ন উপায়ে টাকা জোগার করে দলকে দিতেন। হঠাৎ করে বিপ্লবী কাজ পরিচালনার জন্য বেশ কিছু টাকার দরকার হয়ে পড়ায়, অনাথ বন্ধু সেই ধান বিক্রি করে ৫০ টাকা দিয়েছিলেন দলকে। আর তাঁর মাকে বলেছিলেন তাঁর পকেটমারি হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন : প্রতিনিধি দল নয়, একাই পোপ ফ্রান্সিসের মুখোমুখি হবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি
সেসময় বিপ্লবীদের শিক্ষা ছিল এরকমই। দেশের স্বাধীনতার জন্য কোনও কিছুই তাঁদের কাছে অসম্ভব ছিল না। ১৯৩৩-এর ২ সেপ্টেম্বর, মৃগেন দত্ত ,ব্রজকিশোর, নির্মলজীবন, রামকৃষ্ণকে সঙ্গে নিয়ে মেদিনীপুরের পুলিশ খেলার মাঠে ব্রিটিশ অত্যাচারী জেলাশাসক বার্জকে মারার জন্য হাজির হন। খেলায় বিরতির সময় অত্যাচারী বিট্রিশ জেলাশাসক বার্জ গাড়ি থেকে নামতেই অনাথবন্ধু ও মৃগেন্দ্র নাথ দত্ত বার্জকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে নিহত হন বার্জ। জেলাশাসকের দেহরক্ষী ও শসন্ত্র রক্ষীদের ছোড়া গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান অনাথবন্ধু।পরদিন হাসপাতালে মারা যান মৃগেন্দ্র নাথ দত্ত। দেশকে স্বাধীন করার মন্ত্রে দিক্ষীত হয়ে মাত্র ২২ বছর বয়সে নিজের জীবন বলি দেন। তাঁর এই আত্মাহুতিকে সম্মান জানিয়ে তাঁর প্রতি কলকাতা টিভির শ্রদ্ধাঞ্জলি।