কলকাতা: বুধবার কুরবানির ইদ (Bakri Eid) । চিৎপুর নাখোদা মসজিদের (Nakhuda Mosque) সামনেটা একেবারে জমজমাট। এ সময় বিক্রিবাটা কিছু হবে এই আশায় পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা। পথচলতি মানুষ একটি দৃশ্য দেখে থমকে দাঁড়াচ্ছেন। এক মহিলা প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে। প্ল্যাকার্ডেই মুখ আড়াল করা। তাঁর সামনে রাস্তায় আরও দু’জন শিশু। নাবালিকা। একজন মহিলার হাত ধরে টেনে কিছু বলতে চাইছে। পাশে আরও একটি মেয়ে। সে হাঁটু ভাঁজ করে বসে। একই রকম মুখ আড়াল করা।
প্ল্যাকার্ডে লেখা: I Am from Syria, please help. আমি সিরিয়া (Syria) থেকে এসেছি। আমাকে সাহায্য করুন। পথ চলতি কলকাতার মানুষ এই লেখা দেখেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়ছে। কেউ কেউ এগিয়ে যাচ্ছেন। পাঁচ, দশ টাকা সাহায্য করছেন। মহিলা কাঁধে ঝোলানো ব্যাগের মধ্যে টাকা রেখে দিচ্ছেন। সুদূর সিরিয়া থেকে এই এতদূর কলকাতায় এক মহিলা আর কয়েক জন শিশু এসেছে সাহায্য চাইতে! কেউ বিশ্বাস করছেন। কেউ করছেন না।
সামনেই টহল দিচ্ছে পুলিস। এগিয়ে গিয়ে এঁদের ব্যাপারে খোঁজ নিলাম। বললেন, মনে হয় না এঁরা সিরিয়া থেকে এসেছেন। আশপাশের দোকানের লোকজন এই মহিলাকে চিনতে পারলেন না। বললেন, এঁরা কেউ লোকাল লোক না। নাখোদা মসজিদে তখনও মাগরিবের নমাজ শুরু হয়নি। মহিলাকে গিয়ে প্রশ্ন করলাম, কী নাম? যে ভাষায় উনি উত্তর দিলেন, তা একেবারেই অপরিচিত। না হিন্দি। না ইংরিজি। না উর্দু। তবে কি আরবি?
ডেকে নিয়ে আসা হল স্থানীয় এক মৌলবিকে। মহম্মদ ইমরান করিম। তিনি মহিলার সঙ্গে কথা বললেন। খানিকটা আরবি জানেন। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হল না। করিম সাব বললেন, মহিলা যে ডায়ালেক্টে কথা বলছেন তা তিনি বুঝতে পারছেন না। শুধু জানা গেল এঁরা এলিয়ট রোড থাকেন। বড় মেয়েটির নাম সায়মা। এই হইচইয়ের মধ্যেই মহিলাকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না।
শিশুরা সেই রাস্তাতেই। আর তাদের ঘিরে অনেকটা জটলা।
গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ার এক টুকরো ছবি যেন স্থির হয়ে রইল চিৎপুরের রাস্তায়।