অন্ডাল : মা দুর্গাকে আমরা সিংহের পিঠেই দেখেই অভ্যস্ত। কিন্তু অন্ডালে জমিদার বাড়ির ঠাকুরদালানে পা রাখা মাত্রই দুর্গা দেখে তো থ। একি! সিংহ গেল কোথায়, এ যে বাঘের উপর বসে দুর্গা। একেবারে অন্যরকম এক দুর্গার মূর্তি। যা তাক লাগিয়ে দেবে সবাইকে।
আরও পড়ুন : পুজো মণ্ডপ ‘নো এন্ট্রি’ জোন, দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ, নির্দেশ হাই কোর্টের
মদনপুরের জমিদার পরিবারের প্রথম জমিদার মহেশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ২১৫ বছর আগে তিনি এই পুজোর প্রচলন করেন। মা দুর্গা মহেশ চন্দ্রকে স্বপ্নাদেশ দেন তাঁর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করার। স্বপ্নে কেমন মূর্তি হবে সেই রূপে মা মহেশবাবুকে দেখাও দেন। পাশাপাশি দুর্গাপুরের ভুবন মিস্ত্রিকে এই রূপে দর্শন দেন এবং মূর্তি গড়ার নির্দেশ দেন। মা বাঘের ওপরে উপবিষ্ট তাঁর বাম পাশে গণেশ এবং ডান পাশে কার্তিক। মায়ের এই রূপ অন্যত্র খুব একটা দেখতে পাওয়া যায় না।
মদনপুর ব্যাঘ্র বাহিনী
এই পুজোর আয়োজনে কোনও ত্রুটি থাকে না। ঠিক ২০০ বছর আগে পুজোর অনুষ্ঠানে যে নিয়ম চালু ছিল সেটাই এখনও মেনে চলা হয়। এটা চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পারিবারিক পুজো। পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতায় এই পুজো হয়ে আসছে। বাইরে কারও কাছে আর্থিক সহায়তা নেওয়া হয়না। জমিদার পরিবারের সদস্যদের বেশিরভাগই বাইরে সুপ্রতিষ্ঠিত, অনেকে বিদেশেও প্রতিষ্ঠিত , তাঁরা বিদেশে বা অন্যত্র থাকলেও প্রযুক্তির সহযোগিতায় মায়ের পুজোর বিষয়ে দু’হাত তুলে সাহায্য করেন। মহেশ বাবু খুব বড় জমিদার ছিলেন একসময়। তাঁর হাতে প্রচুর মৌজার মালিকানা ছিল । বিহারের মুজফরপুরে জমিদারির প্রধান কার্যালয় ছিল। এদিকে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভুম সহ বর্ধমান জেলায় অনেক মৌজার মালিকানা পেয়েছিলেন।
আরও পড়ুন : পুজোর আগেই ১৫ টাকা বাড়ল রান্নার গ্যাসের দাম
পুজোতে এখনও বাঁকুড়ার বিভিন্ন গ্ৰাম থেকে অনেক চাষি আসেন। পুজোর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তারা দায়িত্ব নিয়ে থাকেন। বাইরে যারাই থাকেন এই পুজোর কয়েকটি দিন তাঁরা চলে আসেন। পুজোর এই চারটে দিন নিজ ঘরে রান্না হয়না। মন্দির প্রাঙ্গণে দু’বেলা ভোজের আয়োজন করা হয়। সপ্তমীর দিন গ্রামের সধবা মহিলারা নদী থেকে ঘটে করে জল নিয়ে আসেন। এখনও বলি প্রথা চালু রয়েছে সেখানে। অষ্টমীর দিন সাদা রঙের একটি পাঁঠা সহ অন্যান্য সবজিও বলি হয়। নবমীর দিন গ্ৰামের সব মানুষের নেমন্তন্ন থাকে। বাড়ির মহিলারা এই ক’দিন খুব আনন্দ করেন। করোনা আবহে বাইরের আত্মীয়রা সকলে আসতে না পারলেও ভার্চুয়ালি পুজোর মাধ্যমে যোগ দেন এই আনন্দ উৎসবে।