জয়জ্যোতি ঘোষ, রাঁচি
রাঁচির (Ranchi) প্রেসবক্সে একটা জোকস ঘোরাফেরা করছে। জোকসটা অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ১৯৮১-তে মুক্তি পাওয়া মুভি ‘কালিয়া’-র একটা সংলাপকে অনুকরণ করে। যেখানে বিগ বি বলছেন, ‘মুক্তার সিং কা নাম সুনা হ্যায় আপনে? আরে তো ফির কিয়া সুনা হ্যায় আপনে….’ মুক্তার সিং-এর জায়গায় শুধু বসিয়ে দেওয়া হয়েছে রজত পাতিদার- ‘রজত পাতিদার কা নাম সুনা হ্যায় আপনে? আরে তো ফির কিয়া সুনা হ্যায় আপনে….রজত পাতিদার (Rajat Patidar) উয়ো ক্রিকেটার হ্যায় জো পাঁচ ইনিংসকে বাদ ভি আপনি জগহ টিম মে নেহি বনা পাতে হ্যায়….’ গত ৫টি ইনিংসে রজত পাতিদারের রান- ৩২,৯,৫,০,১৭। করুন নায়ারকে মনে পড়ে? ২০১৬-১৭ মরশুমের ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ মনে করে দেখুন। এই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেই অভিষেক টেস্ট সিরিজেই অপরাজিত ৩০৩! কিন্তু তারপরও তাঁর টেস্ট কেরিয়ার খুব বেশি স্থায়িত্ব লাভ করেনি। আরেকটু পিছনে চলে যান- ২০০৪ এর ভারতের পাকিস্তান সফরের যুবরাজ সিং। টেস্ট সিরিজে মুলতানে অর্ধশতরান এবং লাহোরে শতরান! কিন্তু তারপরও তাঁকে সরে যেতে হয়েছিল। সেইজায়গায় পূজারা-রাহানে উত্তর যুগে(ভারতীয় নির্বাচকদের মতে) পাতিদারের কাছে দারুণ সুযোগ ছিল নিজের জায়গা ভারতীয় দলে নিশ্চিত করা। কিন্তু কোথায় কি? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার বললেন, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রচুর রান করেছে পাতিদার মানছি। টেকনিক ভালো। কিন্তু এটা আন্তর্জাতিক মঞ্চ। বিগ ম্যাচ টেম্পেরামেন্ট সবার মধ্যে থাকে না। এখনই দশটা নাম বলে দিতে পারি যাঁরা ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রচুর রান করেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে সাফল্য পাননি। বলছি না পাতিদার ভবিষ্যতে সফল হবেন না। কিন্তু দলের ক্রাইসিস মুহূর্তে যদি তাঁর ব্যাট জ্বলে না ওঠে তাহলে আর কবে জ্বলবে? কুলদীপের মতো একজন টেলএন্ডার ব্যাটার যদি ৭২ বল খেলে নট আউট থাকার টেম্পেরামেন্ট দেখাতে পারেন, তাহলে পাতিদারের থেকে আমরা প্রত্যাশা করতে পারি না? মিডিয়াতেই শুনেছি-পড়েছি কেএল রাহুল ৯০% ফিট, আমার তো মনে হয় পুরোপুরি ফিট পাতিদারের থেকে ৯০% ফিট কেএল রাহুল বেটার অপশন ছিল…’
তবে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট অবশ্য অন্য কিছু ভাবছে। ম্যাচের আগের দিন ব্যাটিং পরামর্শদাতা বিক্রম রাঠোড়কে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘আমাদের কাছে ৯০% ফিট বলে কিছু হয় না। ফিট মানে পুরোপুরি ম্যাচ ফিট।’
আরও পড়ুন: বান্ধবীকে আরও কাছে পেতেই ছেলেকে খুন কোন্নগরের শান্তার
ধরমশালা টেস্টে কোনও কারণে যদি কেএল রাহুল কামব্যাক না করেন(যদিও সেই সম্ভাবনা কিঞ্চিৎ), তাহলে সেই টেস্টে দেবদত্ত পাড্ডিকালের অভিষেক হতে চলেছে এখনই বলে দেওয়া যেতে পারে।
দ্বিতীয় দিনের শেষে ভারতের স্কোর ২১৯/৭। এখনও ১৩৪ রানে পিছিয়ে রয়েছে টিম ইন্ডিয়া। জুরেল-কুলদীপ জুটিকে ক্রিজে জমাট লাগছে। ম্যাচ শেষে ভারতীয় বোলিং কোচ পরশ মামরে বলে যান, ‘রবিবার ভারতীয় দলের কাজ হবে ১৩৪-এর ব্যবধান যতটা সম্ভব কমানো।’
দ্বিতীয় দিনের উইকেট নিয়ে কিংবদন্তি অনিল কুম্বলেকে বললেন, ‘বল যে খুব বেশি টার্ন করছে এমন নয়, তবে অসমান বাউন্স লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বেশিরভাগ বল আসছে নীচু হয়ে যেটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং ব্যাটারদের জন্য। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখুন শোয়েব বশির খুব বেশি টার্ন করাননি, শুধু সঠিক লেংথ এবং পেসে বলটি রেখে গিয়েছেন আর তাতেই সাফল্য।’ পরে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে একই মত ব্যক্ত করেন ভারতীয় বোলিং কোচও।
জো তাঁর রুট ফিরে পাওয়ার পর এদিন বলেন, ‘শতরান করে ভালো লাগছে। দলের প্রয়োজনে খুব দরকার ছিল এই ইনিংসটার। প্রথমদিনের প্রথম সেশনের পর দলের অবস্থা ভালো ছিল না(১১২/৫)। আমি চেয়েছিলাম পার্টনারশিপ গড়তে। সেটাতে সফল হয়েছি।’
রাঁচির আকাশের মতো মেঘে ঢাকা রজত পাতিদারের ক্রিকেটীয় আকাশ! চাইবো মেঘ কেটে যাক, রোদ উঠুক তাঁর টেস্ট কেরিয়ারের ষষ্ঠ ইনিংস থেকে। আর পালটে যাক জোকসটাও- এরপর থেকে ‘কালিয়া’- মুভিরই অমিতাভ বচ্চনের একটা সংলাপ হোক তাঁকে নিয়ে- ‘রজত পাতিদার যাহান খাড়া হোতা হ্যায়, লাইন উয়োহি সে শুরু হোতা হ্যায়…..’
আরও খবর দেখুন