বসিরহাট: ‘নিয়মতন্ত্রে’র ডাক্তারি কাগজপত্র না-থাকায় ভর্তি নিল না হাসপাতাল (Haroa hospital)। ঘণ্টাখানেক ধরে টানাপড়েনের শেষে প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা মহিলা গাড়িতেই সন্তানের জন্ম দিলেন। এহেন অমানবিক চিত্র ধরা পড়ল বসিরহাট মহকুমা হাড়োয়ার গ্রামীণ হাসপাতালে (Haroa hospital)। এই ঘটনায় হাসপাতাল চত্বরে রীতিমতো উত্তেজনা তৈরি হয়।
হাড়োয়া থানার বকজুড়ি পঞ্চায়েতের খাড়ুপালা গ্রামের ২২ বছরের খুশবুদেবী। পেশায় ইটভাটা শ্রমিক। বাড়ি বিহারে। ইটভাটাতে থাকার সুবাদে কোনও রকমের রক্ত পরীক্ষা, ইউএসজি, পোলিও কার্ড করাতে পারেননি। এরমধ্যে সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েন।
শনিবার বিকালে হঠাৎই প্রসব যন্ত্রণা ওঠে খুশবুদেবীর। তখন তাঁকে একটি মারুতি গাড়িতে করে হাড়োয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্থানীয় বাসিন্দা এবং ভাটার বাকি শ্রমিকরা। কিন্তু, তাঁদের কাছে কোনও রকমের কাগজপত্র বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট না-থাকার কারণে ভর্তি নিতে অস্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: birbhum: বীরভূমে কাটারির ঘায়ে জখম কুকুরের অপারেশন হাসপাতালে
স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রোটোকল মেনে রক্ত পরীক্ষা, আলট্রাসোনোগ্রাফি, করোনা টিকা, পোলিও কার্ড সংক্রান্ত কোনও নথিপত্র তাঁদের কাছে ছিল না। সে কারণে হাসপাতাল জানিয়ে দেয়, তারা ভর্তি নিতে পারবে না। এ নিয়ে দুপক্ষে চলতে থাকে দড়ি কষাকষি।
অন্যদিকে, মেন গেটে এক ঘন্টা গাড়ির মধ্যে প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন খুশবুদেবী। তারপর গাড়ির ভিতরেই একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন, এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। আসন্ন প্রসবা মহিলাকে ভর্তি না-নেওয়াকে কেন্দ্র করে কর্তব্যরত চিকিৎসকের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন খুশবুদেবীর সঙ্গে আসা লোকজন।
কর্তব্যরত চিকিৎসক দিলীপকুমার পাত্র বলেন, মহিলার কোনও এইচআইভি পরীক্ষা, আলট্রাসেনোগ্রাফি, রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট ছিল না। যার ফলে হাসপাতালে ভর্তি নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনি ঝামেলা হতে পারত। এই অবস্থায় কীভাবে চিকিৎসা করবেন, তা হাড়োয়া গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বুঝে উঠতে পারছিলেন না।
আরও পড়ুন: Deucha Pachami: দেউচা-পাঁচামিতে জোরালো হচ্ছে আন্দোলন, পথে আদিবাসী মহিলারা
যদিও সন্তান প্রসবের পর খুশবুদেবীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর দেখা যায় মা এবং ছেলে দুজনেই সুস্থ রয়েছে। দুদিনের মধ্যে ছুটি দেওয়া হবে। হাড়োয়া গ্রামীণ হাসপাতালের ওই চিকিৎসক আরও জানান, তাদের রীতিমতো ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। কারণ বিভিন্ন কারণে স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসকদের ওপর চড়াও হন স্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে বাসিন্দারা। তাঁদেরকে গালিগালাজ, মারধরও করা হয়। তাই অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা নিজে থেকে ঝুঁকি নিয়ে কিছু করতে ভয় পান।