ক্যানিং: দক্ষিণ ২৪ পরগনার বনেদি বাড়ির পুজোগুলির অন্যতম ক্যানিংয়ের ভট্টাচার্য বাড়ির পুজো। এখানে পুজিত হয় পোড়া মুখের দুর্গা। দেবীর গোটা শরীরের রঙ ঝলসানো তাম্র বর্ণের। ডানদিকের পরিবর্তে বাঁদিকে থাকে গণেশ।
চার শতাব্দীর প্রাচীন পুজো
প্রায় ৪৩৮ বছর আগে পূর্ববঙ্গের ঢাকার বিক্রমপুর বাইনখাঁড়া গ্রামে শুরু হয়েছিল এই পুজো। পরবর্তীকালে সেই পুজো চলে আসে ক্যানিংয়ে। আগেকার সেই ধুমধাম এখন আর নেই। তবে পুজোর জৌলুস কমলেও স্থানীয়দের মধ্যে এই পুজোর গুরুত্ব কমেনি। বরং সময়ের সঙ্গে বেড়েছে এই পুজো ঘিরে উত্সাহ ও উন্মাদনা।
কেন দুর্গার এই রূপ
জমিদার বাড়ির শোভা ও আভিজাত্য প্রদর্শনের জন্য শুরু হয়েছিল দুর্গার আরাধনা। কিন্তু পুজো শুরুর কয়েক বছরের মধ্যেই এই ভট্টাচার্য বাড়িতে এক দুর্ঘটনা ঘটে। বাড়িতে দুর্গা মন্দিরের শনের চালে আগুন লেগে যাওয়ায় মন্দির ও প্রতিমা পুড়ে যায়। এরপর পরিবারের সদস্যরা পুজো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
এই ঘটনার কয়েক বছর পর গৃহকর্তা রামকান্ত ভট্টাচার্য দুর্গাপুজো ফের শুরু করার স্বপ্নাদেশ পান। কথিত আছে, পোড়া রূপেই যেন তাঁকে পুজো করা হয়, এমনটাই স্বপ্নে আদেশ দেন দেবী দুর্গা। স্বপ্নাদেশের কথা মেনে নিয়েই দেবীর পোড়া মুখ ও ঝলসানো শরীরের মূর্তি পুজো শুরু হয় ভট্টাচার্য বাড়িতে।
পুজোর নিয়ম
আগে মহিষ বলি হলেও বর্তমানে ফল বলি হয়। জন্মাষ্টমী তিথিতে কাঠামো পুজোর মধ্যে দিয়ে এই বাড়ির দুর্গা পুজোর শুরু। আগে পুজোতে জাঁকজমকের কোনও কমতি ছিল না। তবে বর্তমান বংশধরেরা কাজের তাগিদে বিভিন্ন জায়গায় চলে যাওয়ায় ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে পুজোর আয়োজনে কিছুটা হলেও ভাঁটা পড়েছে। কিন্তু পুজোর সমস্ত আচার ও রীতি মেনেই আজও পুজো হয় এই ভট্টাচার্য বাড়িতে। বাংলাদেশ থেকে শুরু করে আজ অবধি একই কাঠামোয় পুজো চলছে ভট্টাচার্য বাড়িতে।