গঙ্গারামপুর: সংস্কারের অভাবে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে গঙ্গারামপুরের ব্রাহ্মণী নদী। আবর্জনায় মুখ ঢাকছে নদী। তীরবর্তী এলাকার কিছু বাসিন্দা নদী দখল করে বানাচ্ছে কংক্রিটের বাড়ি। মানুষের গ্রাসে হাঁসফাঁস করছে ব্রাহ্মণী। নদী না নালা, বোঝা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় ব্রাহ্মণী নদী সংস্কারের দাবি তুলেছেন গঙ্গারামপুর বিধানসভার বিজেপি বিধায়কসহ পরিবেশপ্রেমী এবং স্থানীয় বাসিন্দারাও।
দক্ষিণ দিনাজপুর মূলত কৃষিপ্রধান জেলা। এই জেলার উপর দিয়ে বয়ে চলেছে আত্রেয়ী, পুনর্ভবা ও ব্রাহ্মণীর মতো গুরুত্বপূর্ণ নদী। ব্রাহ্মণীর উৎপত্তি পুনর্ভবা থেকে। গঙ্গারামপুরের দেবীপুর নামক স্থানে পুনর্ভবা নদী থেকে সৃষ্টি হয়েছে ব্রাহ্মণীর। যে নদী জেলার বিভিন্ন জায়গা দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর পুনরায় পুনর্ভবা নদীতে গিয়ে মিশেছে।
আরও পড়ুন: Purulia: গ্রামবাসীদের সামনে বিয়ে করে বেপাত্তা প্রেমিক, শ্বশুরবাড়ির সামনে ধর্নায় প্রেমিকা
প্রবীণরা জানান, অতীতে এই নদীর দুপাশ ব্যাপক চওড়া ছিল। নদীতে টলটলে জল প্রবাহিত হতো। আর সেই জলে মিলত নানান প্রজাতির মাছ। নদী থেকে মাছ সংগ্রহ করে, বিক্রি করে জীবন-জীবিকা চালাতেন মৎস্যজীবীরা। ব্রাহ্মণী নদীর জল চাষবাসের কাজে ব্যবহার করতেন কৃষকরা।
কিন্তু, আজ মৃতপ্রায় ব্রাহ্মণী। নদীর দু’পাশ দখল করে তৈরি হয়েছে কংক্রিটের বাড়ি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নদীতেই ফেলছেন আবর্জনা। যার ফলে নদীর চওড়ায় ও নাব্যতা দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে। গতিহীন এঁদো ডোবার আকার নিচ্ছে ব্রাহ্মণী নদী। এক পরিবেশপ্রেমী সনাতন তমলি বলেন, ব্রাহ্মণী নদী আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। একসময় নদীতে প্রচুর জলস্রোত ছিল। তখন এই নদীর উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করতেন মৎস্যজীবী, কৃষকরা। বর্তমানে ব্রাহ্মণী একটি নালাতে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন: Uttar Pradesh: রোগীদের গ্লুকোজ খাচ্ছে বাঁদর, যোগীরাজ্যের হাসপাতালের করুণ ছবি প্রকাশ্যে
তিনি বলেন, নদীতে জল তো থাকেই না, উপরন্তু থার্মোকল থেকে আবর্জনা ফেলার স্তূপে পরিণত হয়েছে। মানুষ নিজের ইচ্ছেমতো নদী দখল করে নিচ্ছে। কয়েকবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ দেখা যায়নি। ব্রাহ্মণীকে স্বমহিমায় ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হলে প্রশাসনকে সদর্থক ভূমিকা পালন করতে হবে। অতি শীঘ্রই ড্রেজিং করে জলপ্রবাহ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা উচিত।
বিধায়ক সত্যেন্দ্রনাথ রায় বলেন, মাটি-মাফিয়া, বালি-মাফিয়ারা যেভাবে নদী থেকে মাটি বা বালি তুলে নিয়ে যাচ্ছে, তাতে ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি নদী দখল করে বাড়ি তৈরি ও আবর্জনা ফেলার কারণে নদীর অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।
এলাকার বাসিন্দা রাজু কুণ্ডু বলেন, নদীর এমন অবস্থা থাকলে আগামী দিনে ব্রাহ্মণী নদীর নাম মুছে যাবে। গঙ্গারামপুরের বিডিও দেওয়া শেরপা বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছি। গঙ্গারামপুর ব্লকের মধ্যে যতটা সম্ভব নদী পরিষ্কার করার চেষ্টা হবে। যারা নদী দখল করে বাড়ি বানাচ্ছে, তাদের প্রথমে নোটিস করা হবে। সুরাহা না হলে সরকারি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।