টেস্টের দু’দিন আগেই ভারতীয় দল চুড়ান্ত একাদশ ঘোষণা করে দিয়েছিল। তখন মনে হয়, আবহাওয়া পূর্বাভাসের কোনও হদিশ পায়নি টিম ম্যানেজমেন্ট। তাই তিন পেসার, আর দুই স্পিনার সাজিয়ে প্রতিপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল – ম্যাচ প্র্যাকটিস না থাকলেও, আত্মবিশ্বাসটা মোদের ভরপুর।
এখন রোজ ‘ ওয়েদার রিপোর্ট ‘ নেওয়ার কাজ কাউকে এই টিমে করতে হবে। ঠিক যেমন নিউজ চ্যানেলে হয়। তাতে যা হদিশ মিলছে, আগামী পাঁচ দিনও মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হবে। অর্থাৎ সারাক্ষণ আকাশে মেঘ আর হওয়া। সঙ্গে ভিজে ভিজে ভাব। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট প্রথম একাদশ জানিয়ে দিয়েছে। নিউজিল্যান্ড তা জানায়নি। তাতে কী! শাস্ত্রী – কোহলিরা মিলে টস করতে যাওয়ার আগে যে একদশ লিখে দেবেন সেটাই চূড়ান্ত। আগে কী ঘোষণা হল , তাতে কিছু বাড়তি কথা শুনতে হবে। হোক। তবু, আবহাওয়া – পরিস্হিতি বিচার করে দল সাজানো উচিত। স্বয়ং সুনীল গাভাস্কারের মত এই রকমই। শুক্রবার কমেন্ট্রি বক্সে বসে সেটাই বললেন। চূড়ান্ত একাদশ সেটাই, যেটা টস করতে গিয়ে দুই অধিনায়ক লিখিত ভাবে একে অপরকে দেন।
আরও পড়ুন – WTC : বৃষ্টি ভাবনা, ১৮ আর ২২ নম্বরের বিচিত্র সমীকরণ!
ধরে নেওয়া যাক , সিরাজের পেসকে এই আবহাওয়াতে দারুণ কাজে লাগবে মনে হচ্ছে। তাহলে? একজন স্পিনার কমানো যায়। তার মানেই হল ব্যাটিং কিছুটা কমজরি করে খেলতে নামা । সিরাজের চেয়ে অশ্বিন বা জাদেজা অনেক ভালো ব্যাটসম্যান। দ্বিতীয় ভাবনা, কোনও এক পেসারের বদলে সিরাজকে যদি দলে নেওয়া হয়? তবে সেই পেসারটি কে? ইশান্তের অভিজ্ঞতা ওঁকে এই ম্যাচে এগিয়ে রাখবে। বুমরাহ তো যে কোনও ব্যাটসম্যানকে থিতু হতেই দেন না। তাহলে শামি! তিনি চোটের কারণে মাঠের বাইরে ছিলেন। আই পি এলে খেললেও, কিছুটা ম্যাচ প্র্যাকটিস কম। এই ভাবনাটাই এখন ভারতীয় শিবিরে আনাগোনা শুরু করেছে।
বৃষ্টিতে দুই শিবির ভিন্ন মেজাজে কাটালো। অশ্বিনরা ডার্ট খেলায় মেতে থাকলেন অনেকেই। আর লাথামরা বৃষ্টি একটু ধরতেই খালি পায়ে মাঠে নেমে পড়লেন। গোড়ালি ডোবা জলে পা রেখে মাটি ছুঁলেন। তারপর প্রেস মিট করলেন খালি পায়ে। আর প্রচার মাধ্যমের প্রতিনিধিরা যাতে বেশি টুইটারে সমালোচনার ঝড় তুলতে পারেন, আইসিসির মিডিয়া সেল সকলের জন্য কুইজের আয়োজন করে রাখলো।
টিম হোটেলে ফিরে, অধিনায়ক কোহলি , চিফ কোচ শাস্ত্রী , সহ অধিনায়ক রাহানে প্রথমে এইসব প্ল্যান বি, সি নিয়ে আলোচনা করেন। সূত্র বলছে, এরপর রোহিত আর অশ্বিনের সঙ্গেও কথা বলা হয়। চূড়ান্ত সিধ্যান্ত নাকি শনিবার উইকেট দেখে আর আবহাওয়া বুঝে টস করতে যাওয়ার আগে ঠিক হবে বলে জানা যাচ্ছে। তবে প্রথম দিনের বৃষ্টিতে ম্যাচের প্রথমদিনটি খোয়া যেতেই , সিরাজ নিয়ে ভাবনা শুরু হয়ে গেল।
এমন টেস্টের প্রথম দিন বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়া ম্যাচ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে অ্যাটাক আর কাউন্টার অ্যাটাক চলছেই । প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভন সুযোগ পেলেই ইদানিং ভারতীয় দলের খুঁত ধরেন। বা সমালোচনা করেন। বৃষ্টিতে প্রথম দিন ভেস্তে যেতেই, টুইট করেছেন, ‘ আমি দেখছি ভারতকে ওয়েদারই বাঁচিয়ে দেবে ‘। এটা পোস্ট হতেই , শুরু হয়ে গেছে ভনকে নিয়ে ট্রোল।
টেস্ট ম্যাচে প্রতিদিন ৯০ ওভার করে খেলা হওয়াটা বাধ্যতামূলক। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পয়নশিপ ফাইনালে প্রথমদিন বৃষ্টিতে পন্ড হয়ে যাওয়ার পর, দ্বিতীয় দিন বাড়তি আরও ৮ ওভার খেলা হবে। ৯৮ ওভার সারাদিনে। এমনই ভাবনা ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রডের । পরের প্রতিদিন ৯৮ ওভার করে খেলতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে, নষ্ট হওয়া সময়কে ম্যানেজ করার চেষ্টা।
বৃষ্টি একদিন নষ্ট করলেও এই ম্যাচ এখনও পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচই রয়ে গেল। আইসিসি এই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের জন্য আলাদা করে বাড়তি একটা দিন রেখেছে। বৃষ্টির সময় এখন ইংল্যান্ডে। তাই প্রথম দিনের নষ্ট হওয়া সময়ের ৯০ ওভার মেক আপ না দিয়ে , আগাম পরিকল্পনা নিয়ে পরের পাঁচদিন মোট ৪০ ওভার খেলার রাস্তা খুলে রাখা হল।
এই প্রতিবেদন লেখার সময় জানলাম, সাউদাম্পটনে মেঘ সরে বিকেলের সূর্য দেখা যাচ্ছে। তাই শনিবারের বঙ্গে বর্ষার আপডেট না দিয়ে ওখানকারটা খোঁজ নিলাম। জানা গেছে, দিনের শুরুটা নাকি ঝকঝকে থাকবে। কিন্তু লাঞ্চ বা টি’র পর আবার আকাশ মুখ ভার করবে। আর রবিবার? সেই প্রথমদিনের অ্যাকশন রিপ্লে। তারপর? মাঠের লড়াই বাকি সব বলুক।
ছবি: সৌ – টুইটার