দুর্গাপুর: বাড়িতে ফিরতে চাইলেও তাঁকে ফেরাতে চায়নি আত্মীয়রা। হাসপাতালেই রয়েছেন ১ বছরেরও বেশি সময়। এর মধ্যেই রোগী থেকে সেবিকা হয়ে উঠলেন ফ্লোরা সান্যাল। মনে করালেন ছোটবেলার বইয়ে পড়া ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল।
বছর ৪৫ এর মহিলা ফ্লোরা সান্যালের বাড়ি সিটিসেন্টারের আলাউদ্দিন খান বিথী এলাকায়। একসময় বিয়েও হয়েছিল তাঁর। কিন্তু বিচ্ছেদ হয়ে যায়। বাবা মা মারা যাওয়ার পর বাড়িতে একাই থাকতেন তিনি। দুই দিদিই বিবাহিত। মাঝে মধ্যেই খোঁজ নিতেন তাঁরা।এলাকাবাসী লকডাউন পরিস্থিতিতে তাঁকে খাবার দিতেন। সেই সময় হঠাৎই তাঁর দিদিদের আসা যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন ফ্লোরা। সমাজসেবীরা তাঁর সেবাযত্ন শুরু করেন।
আরও পড়ুন- বাবার মৃত্যু যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মঘাতী ছেলে
তাঁর ডান পায়ে একটি ক্ষত হয়েছিল। সেই সময় তাঁকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে আত্মীয়স্বজনরা। তাঁর পর থেকেই আর যোগাযোগ রাখেনি কেউ। বর্তমানে তাঁর ক্ষতটি সেরে উঠেছে। তবুও কেউ আর বাড়ি ফিরিয়ে দিতে চায়নি তাঁকে। অভিযোগ, ফ্লোরাদেবী তাঁর দিদিদের একাধিকবার ফোন করলেও তাঁরা বাড়ি ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়নি।
১৪ মাস ফ্লোরা দেবী কয়েকশো রোগীর সঙ্গে পার করেছেন। রোগীরা আসে আবার চলে যায়। কিন্তু কেউ আসে না তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। সময় কাটাতে তিনি এখন হাসপাতালের মহিলা বিভাগে রোগীদের সেবা করে চলেছেন নার্সদের হাতে-হাত মিলিয়ে। তিনি এখন ওই মহিলা বিভাগের সেবিকা হয়ে উঠেছেন।
আরও পড়ুন- মানসিক ভারসাম্যহীন অন্তঃসত্ত্বাকে হাসপাতালে পাঠালেন বিডিও
ফ্লোরাদেবী বাড়ি ফেরার কাতর আর্জি করে জানিয়েছেন, ‘সিটিসেন্টারে আমার নিজের বাড়ি রয়েছে। বাড়িতে তালা বন্ধ। আমি এখন সুস্থ হয়ে গিয়েছি। আমার কাছে ফোন নেই। অন্য রোগীদের থেকে ফোন নিয়ে দিদিদের সাথে যোগাযোগ করি। বাড়ি ফিরিয়ে দিতে বললেও কেউ বাড়ি ফেরাবার জন্য হাসপাতালে আসে না। আমি এখানে অন্য রোগীদের সেবা করে সময় কাটাই। আমি বাড়ি ফিরতে চাই। সেখানে নিজে স্বনির্ভর হয়ে নিজের খাবারদাবার নিজেই যোগাড় করব। আমাকে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।’
হাসপাতাল সুপার ধিমান মণ্ডল জানিয়েছেন, ‘আমরা ফ্লোরা’র দিদিদের সঙ্গে ফোনের মাধ্যমে বহুবার যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তাঁরা কেউ আসেননি। বর্তমানে ফোন করলে ফোন ধরেন না। আমরা আইনি পদক্ষেপ নিয়েছি।’ মহকুমাশাসক শেখর কুমার চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘হাসপাতাল সুপারের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি দেখা হবে।’