বর্ধমান: বর্ধমানে হাওড়ার ব্যবসায়ী খুনে সিট গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের৷ সূত্রের দাবি, সোমবার সন্ধেয় জেলার সমস্ত থানার পুলিশ অফিসার নিয়ে বৈঠকে বসবেন জেলা পুলিশ সুপার কামনাশীস সেন৷ কোনও থানার কোন অফিসাররা ‘সিটে’ থাকবেন তা নিয়ে বৈঠক হবে বলে জানা গিয়েছে৷ এ দিকে ব্যবসায়ী খুনের ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে মাঠের জলাজমিতে চেন খোলা ব্যাগ থেকে পিস্তল,গুলি ও ধারাল অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে৷ এই ঘটনার সঙ্গে হাওড়ার ব্যবসায়ী খুনে সংযোগ থাকলেও থাকতে পারেন বলে অনুমান করা হচ্ছে৷
মৃত সব্যসাচী মণ্ডলের পরিবার বর্তমানে হাওড়া শিবপুরের বাসিন্দা। হাওডা়তেই সব্যসাচীর ত্রিপলের ব্যবসা আছে। শুক্রবার সব্যসাচী মণ্ডল তাঁর বন্ধু রাজবীর সিংকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি দেরিয়াপুরে যান। রাতে বাড়ির ছাদে রান্না হচ্ছিল। সেই সময় সব্যসাচী মণ্ডলের গাড়ির চালক আনন্দ সাউ তাঁকে ছাদ থেকে নীচে নিয়ে যায় কেউ ডাকছে বলে। তারপরেই তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন সব্যসাচীর বন্ধু রাজবীর সিং ও রাধুনি পার্থ সাঁতরা। তাঁরাই সব্যসাচীকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু, কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে জানান। প্রাথমিক ধারনা সব্যসাচীকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। গুলিও করা হয়। তাঁর শরীরে গুলির চিহ্নও দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
আরও পড়ুন-‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের টাকা না পেয়ে পথ অবরোধ মহিলাদের
এ দিকে এই ঘটনায় গাড়ির চালক ও রাধুনিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। শনিবার বর্ধমান পুলিশ মর্গে মৃতের বাবা দেবকুমার মণ্ডল দাবি করেন, তাঁদের পরিবারে সম্পত্তি নিয়ে চরম বিবাদ চলেছে। ২০১৬ সালে তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর তার ভাইপোরা তাঁর ছেলেকে শ্মশানে বেধড়ক মারধর করে। তাঁর দুই ভাইপো দীনবন্ধু এবং সোমনাথ সুপারি কিলার লাগিয়ে দিয়েই ছেলেকে খুন করিয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
আরও পড়ুন-১৫ কিলোমিটারেই গুলি চালায়, ৫০ কিলোমিটার হলে কী করবে? বিএসএফের ক্ষমতাবৃদ্ধিতে তোপ মমতার
এ দিকে, রায়নার উচিতপুর গ্রামের বাসিন্দা বিজন ঢালি তাঁর ধানের জমি দেখতে গিয়ে একটি কালো রঙের ব্যাগ দেখতে পান। ব্যাগটি বর্ধমান কাড়লাঘাট রোডের ধারে সেচখালের জলে পড়েছিল। বিজন ঢালি বলেন, ব্যাগের চেন খোলা ছিল। তিনি ব্যাগের ভিতর হাত দিয়ে দেখেন ব্যাগটি বেশ ভারি। ব্যাগের উপরে পলিথিনে মোড়া একটি প্যান্ট ছিল। প্যান্টটি ব্যাগ থেকে বের করতেই তিনি দেখেন পিস্তল ভরা আছে। তারপর তিনি গ্রামে ফিরে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য উৎপল মালিককে বিষয়টি জানান। এরপর পঞ্চায়েত সদস্য থানায় ও মুগরা পঞ্চায়েতে বিষয়টি জানান। রায়না থানার পুলিশ গিয়ে ব্যাগটি জল থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন-সামির পাশেই দাঁড়াচ্ছেন প্রাক্তনরা, এমন ঘটনা না হওয়ারই দাবী তাদের
মুগরা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিক্রম গুহ ও পঞ্চায়েত সদস্য উৎপল মালিক জানান, ব্যাগের মধ্যে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র, একটি মোবাইল চার্জার, একটি প্যান্ট, পাঁচ রাউণ্ড গুলি ও একটি ধারালো ছুরি বা ভোজালি ছিল। পুলিশ ব্যাগটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। দেরিয়াপুর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে এই ব্যাগটি সেচখালের জলে ভাসছিল। দুটি পিস্তলের মধ্যে একটি ওয়ান শার্টার ও একটি সেভেন এম এম।
অন্য দিকে, রবিবার সিআইডির চার সদস্যের টিম সব্যসাচী মণ্ডলের দেরিয়াপুরের বাড়িতে যান। সেখানে থাকা পরিবারের দুই মহিলা সদস্যাকে শুক্রবার রাতের ঘটনা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারী অফিসাররা। তারপর গ্রামে যান ফরেনসিক টিমের সদস্যরা। তাঁরা ঘটনাস্থল, সিড়ি ও ছাদের বিভিন্ন জায়গার নমুনা সংগ্রহ করেন। পাশাপাশি ঘটনাস্থলের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন ফরেনসিক টিম। ও টিমের সঙ্গে ছিলেন এসডিপিও( দক্ষিণ) আমিরুল ইসলাম খান।