কলকাতা: স্পাইওয়ারে ফোনে আড়ি, গণতন্ত্রের পক্ষে বড় বিপদ বলে বলে সোমবার একটি ট্যুইট করেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। ইজরায়েলের এনএসও সংস্থার তরফে তৈরি পেগাসাস স্পাই ওয়ার নিয়ে জেরবার মোদি সরকার। দেশের রাজনৈতিক বিরোধী দলের নেতা, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী বিচারপতি, নির্বাচন কমিশনার সহ নিজের দলের দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ওপরে নজরদারি চালানোর অভিযোগে বিরোধীরা এবার কোনঠাসা করতে চলেছে কেন্দ্রের মোদি সরকারকে।
আরও পড়ুন: পেগাসাস কেলেঙ্কারি: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ
বহুদিন ধরেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ করছিলেন এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রীমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম যেমন দ্য গার্ডিয়ান ও ওয়ার্শিংটন পোস্টের মতো সংবাদ মাধ্যমের খবরকে উদ্ধৃত করে সুব্রহ্মণিয়ম স্বামীর করা একটি ট্যুইট সারা দেশে সোরগোল ফেলে দেয়। এরপরেই দ্য ওয়ারের তরফে কাদের ওপর নজরদারি চালানো হয়েছিল সেই সব ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ্যে আসে। আর তার জেরেই বিরোধীরা সোচ্চার হয়ে ওঠেন কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। আজ মঙ্গলবার তারই রেশ ধরে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু একটি ট্যুইট করেন। তিনি তাতে লেখেন, ‘কাদের মদতে স্পাইওয়ার ব্যবহার করে মোবাইল ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে তার জবাব চাই। এই নজরদারি গণতন্ত্রের বড় বিপদ।’ মঙ্গলবার তাঁর ট্যুইট বার্তায় এভাবেই ফের তোপ দাগলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু।
এই বিতর্কের আঁচ পড়ে সংসদের চলতি বাদল অধিবেশনেও। সংসদের দুই কক্ষেই ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে তুমুল বিক্ষোভ দেখান বিরোধীদের। যার জেরে বারেবারেই লোকসভার অধিবেশন মুলতুবি করে দিতে বাধ্য হন অধ্যক্ষ। রাজ্যসভাতেও ছিল একই চিত্র। মঙ্গলবারেও বারেবারে ব্যাহত হয় রাজ্যসভার অধিবেশন। দুপুর একটা পর্যন্ত প্রথমে অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণা করা হয়। শেষমেষ টানা দু দিনের জন্য মুলতুবি ঘোষণা করা হয় লোকসভার অধিবেশন।
আরও পড়ুন: পেগাসাস কেলেঙ্কারিতে মোদীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মল্লিকার্জুন
জ্বালানী তেল এবং রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তো দেশ জুড়ে বিরোধীদের বিক্ষোভ ছিলই। এরই মাঝে নয়া সংযোজন হয়েছে পেগাসাস(Pegasus) বিতর্কের। সেই সঙ্গে করোনা সংক্রমণ এবং সেই ভাইরাসের প্রতিষেধক নিয়েও বিরোধীরা সরব হন।
আরও পড়ুন: BREAKING: বিধানসভা ভোটের সময় পিকে’র ফোনে ‘পেগাসাস’-এর নজরদারি
অপরদিকে, দ্য ওয়ার নিউজ পোর্টালের চাঞ্চল্যকর রিপোর্টে জানা গেছে রাহুল গান্ধী, প্রশান্ত কিশোর, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একাধিক নেতার ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে৷ তালিকায় দশ ভারতীয়ের নাম রয়েছে৷ তাঁদের নম্বর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সিকিউরিটি ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়৷ সেই পরীক্ষার রিপোর্টে নেতা, মন্ত্রী থেকে শুরু করে সাংবাদিক, শিল্পপতি, সমাজকর্মী, বিচারপতিদের ফোন হ্যাক করার প্রমাণ মিলেছে৷ রবিরার সন্ধের পরে ৪০ জনেরও বেশি ভারতীয় সাংবাদিকের ফোন হ্যাক করার অভিযাগ ওঠে। ওই সমস্ত সাংবাদিকের ফোন হ্যাক করে পেগাসাস স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছিল নরেন্দ্র মোদি সরকার। ফরেনসিক টেস্টে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়৷
প্রকাশিত তথ্যে জানা গিয়েছে, ওই তালিকায় রয়েছেন ভারতের বিশিষ্ট সাংবাদিকেরা যারা দেশের বড় বড় মিডিয়া হাউজের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। ইন্ডিয়া টুডে নেটওয়ার্ক 18 দ্য হিন্দু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এবং হিন্দুস্তান টাইমসের এক্সিকিউটিভ এডিটর শিশির গুপ্তার মতন বিশিষ্ট সাংবাদিকেরাও রয়েছেন এই তালিকায়। আর তার জেরেই এই আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রাক্তন মন্ত্রীর এই ট্যুইট এদিনের বিতর্ককে আরও বাড়িয়ে দিল।