তিন বারের ইউরো এবং চার বারের বিশ্ব কাপ চ্যাম্পিয়ন এবারের ইউরো শুরু করেছে ফ্রান্সের কাছে হার দিয়ে। শনিবার গ্রূপ অব ডেথ ই গ্রূপে তাদের লড়াই গত বারের চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালের সঙ্গে। মিউনিখের অ্যালেয়াঞ্জ স্টেডিয়ামে এই ম্যাচটা জার্মানির মরণ বাঁচন ম্যাচ। এই ম্যাচে হেরে গেলে তাদের নক আউটে যাওয়া নির্ভর করবে অনেক যদি এবং কিন্তুর উপর।
জার্মানি সচরাচর হারে না। জার্মানদের জাত্যভিমান এত বেশি যে তারা হারকে ঘৃণা করে। কিন্তু জোয়াকিম লো-র জার্মানির সময়টা খুব ভাল যাচ্ছে না। গত বিশ্ব কাপে তারা প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছিল। তার পর থেকেই তাদের পতন শুরু হয়েছে। উয়েফা নেশনস লিগ কিংবা ইউরোর কোয়ালিফাইং রাউন্ডে সেই জার্মানিকে পাওয়া যায়নি যে জার্মানিকে মানুষ দেখতে অভ্যস্ত। সমস্যাটা হচ্ছে জার্মানির গোল পাওয়া নিয়ে। কাই হার্ভাৎজ যতই গোল করে চেলসিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সেরা করুন না কেন, সার্জ নাব্রি যতই বুন্দেশলিগায় বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে গোল করুন না কেন তাদের জাতীয় দলের হয়ে সেই ভূমিকায় পাওয়া যাচ্ছে না। আর টমাস মুলারের বয়স হচ্ছে। প্রায় আড়াই বছর তিনি জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন। ঠেকায় পড়ে তাঁকে আবার জার্মান টিমে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছেন জোয়াকিম লো। কিন্তু ফ্রান্সের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে সেই টমাস মুলারকে পাওয়া যায়নি।
ফ্রান্সের বিরুদ্ধে কুড়ি মিনিটের মাথায় জার্মানি একটা আত্নঘাতী গোল খেয়ে যায়। বাঁ দিক থেকে লুকাস হার্নান্ডেজের একটা মাইনাস ক্লিয়ার করতে গিয়ে ম্যাটস হামেলস বলটা গোলে ঢুকিয়ে দেন। কিন্তু বাকি সময়টা জার্মানির ডিফেন্স কিন্তু আর ফ্রান্সকে গোল করার জায়গা দেয়নি। ভুলে গেলে চলবে না ফ্রান্স টিমের ফরোয়ার্ড লাইন কিন্তু খুব ভাল। কিলিয়ান এম্বেপে, করিম বেঞ্জামার সঙ্গে আছেন আঁতোয়া গ্রিজম্যান। পিছনে পল পোগবা এবং এনগোলো কন্তের মতো পজিটিভ মিডফিল্ডার আছেন। সেই দলকে আর গোল করতে না দেওয়ায় বাহবা পাওয়া উচিত জার্মান ডিফেন্স এবং মিডফিল্ডের। কিন্তু টিম গোল না পেলে জিতবে কী করে?
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোরা কিন্তু এই জায়গায় টেক্কা দিতে পারে অন্য দলগুলোকে। ভুলে গেলে চলবে না পর্তুগাল কিন্তু বর্তমান ইউরো তো বটেই উয়েফা নেশনস লিগ চ্যাম্পিয়ন। তাদের টিমে বিশ্বের এক নম্বর গোলগেটার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো আছেন। প্রথম ম্যাচে হাঙ্গারির বিরুদ্ধে ৩-০ জয়ে রোনাল্ডোর জোড়া গোল আছে। এবং সেই সুবাদে নিজের আন্তর্জাতিক গোল সংখ্যাকে রোনাল্ডো নিয়ে গেছেন ১০৬-এ। আর চারটি গোল করলেই তিনি বিশ্বের সর্বকালের টপ স্কোরার। এ রকম একটা স্কোরার দলে থাকলে কোচেদের চিন্তা অনেক কমে যায়। হাঙ্গারি ম্যাচে ৮৪ মিনিট পর্যন্ত গোল না পাওয়া পর্তুগাল শেষ পর্যন্ত তিন গোল করল। এবং রোনাল্ডো শুধ পেনাল্টিতে গোল করেই সন্তুষ্ট হলেন না সংযুক্ত সময়ে আরও একটা গোল করে থামলেন। এই রোনাল্ডো কিন্তু চিন্তায় রাখবে জার্মান কোচ জোয়াকিম লো-কে।
তবে শুধু তো রোনাল্ডো নন, পর্তুগাল মিডফিল্ডও যথেষ্ট সাপোর্টিভ। সেখানে ব্রূনো ফার্নান্ডেজ, দিয়োগো জোটার সঙ্গে রাফা সিলভা মিলে বেশ একটা অ্যাটাকিং ফ্লেভার এনে দিয়েছেন। হাঙ্গারি ম্যাচে রাফা সিলভা নামার পরেই খেলার মোড় ঘোরে। শনিবার রাফাকে শুর থেকেই নামাবেন ফের্নান্দো স্যান্টোস। পর্তুগাল কোচ এমনিতে ডিফেন্সিভ ঘরানার। চার ব্যাকের সামনে দুজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রাখেন তিনি। সামনে রোনাল্ডোর সঙ্গে তিন আ্যাটাকিং মিডিও। কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবল খেলেই জিতে আসছেন তিনি। এই ফুটবল তাঁকে জার্মান বাঁধা পেরোতে দেয় কি না তাই এখন দেখার।
রোনাল্ডো থাকায় গোল পাওয়ার জন্য ভাবনা নেই স্যান্টোসের। কিন্তু জার্মান জাগারনটকে সামলাতে হবে তাঁকে। জার্মানরা যখন আক্রমণে যায় তখন স্নিফার ডগের মতো গোলের জন্য হন্যে হয়ে ঘোরে। এই জার্মানদের আটকাতে হবে পেপের নেতৃত্বে থাকা পর্তুগাল ডিফেন্সকে। তাঁর পাশে রুবেন ডায়াস, নেলসন সেমেডো কিংবা রাফায়েল গুয়েরেইরো যথেষ্ট দক্ষ। এখন দেখার তাঁরা জার্মানির টমাস মুলারদের কীভাবে রোখেন। এই ম্যাচটা জার্মানদের কাছে মরণ বাঁচনের। মরার আগে মরে না তারা। শনিবার রাতে তাই একটা দুরন্ত ম্যাচের আশা করা যেতেই পারে।