খোলা আকাশ। দোত্তিকার বাতি স্তম্ভ থেকে ছড়িয়ে পড়া হাজার ওয়াটের আলো। রঞ্জি ব্লকের পুরনো স্কোর বোর্ডের মাথায় বসে আবছা গোলাকার চাঁদ। সামনে সবুজ মাঠে রঙিন পোশাকে ক্রিকেট নিয়ে দু’বছর পর সেই চেনা ইডেন। থার্মাল চেকিং আর মাস্ক বোঝাতে চাইলো, করোনা আটকে আছে সঙ্গে সঙ্গে। তাতে কি! ডিজে আছে। চটুল গানে শরীরের দোলা আছে। আর আছে চূড়ান্ত রংবাজি। সিরিজ জিতেছে টিম ইন্ডিয়া। টস জিতে রোহিত-রাহুলরা রীতি ভেঙে নভেম্বরের রাতে ইডেনে আগে ব্যাটিং করার চ্যালেঞ্জ নিলেন। আর ব্যাটিং মজলিস চালু হল শুরু থেকেই।
হিটম্যান রো হিট থুড়ি রোহিত। ইডেন তাঁর অন্যতম পয়মন্ত মাঠ। শুরু থেকে ‘দে ঘুমাকে’ মেজাজে তিনি। সঙ্গে ধোনির পাড়ার সেই ছেলেটা-ঈশান কৃষাণ। সবে ইডেনে উইকেটে এসে শুনছেন’রো-হিট,রো-হিট’। যে কেউ রোহিতের সঙ্গে থাকলে মনের তাপ তো বারবেই। ঈশানের মেজাজে গ্রিয়ার বদল করে স্পিনারের বলে তিনি হলেন হরণ (৩৯ রান)। কে এল রাহুল বিশ্রাম সারলেন। ভারতের ৭১ রানে ১ উইকেট। সূর্য এলেন আর গেলেন। বল কি শিশিরে পিছলে যাচ্ছে! নাকি যাদব জমে যেতে পারলেন না? স্যান্টনার এমনই স্পিনার যে (১-০-২-২) প্রথম ওভারে দুই ভারতীয় বাটারকে তুলে নিলেন!
৮.১ ওভারে নুতন করে স্যান্টনারকে সামলাতে গার্ড নিলেন রোহিত। তিনি যে থাকতে চান ক্রিজে। কিন্তু পন্থ! ওভার পিছু তো ১০ রান করে আসছে। স্যান্টনার চেপে বসছে। তাঁকে আরও বসতে দিলেন! উড়িয়ে দেবো-মেজাজে স্যান্টনারকেই আরও একটা উইকেট দিয়ে ফিরলেন। রাহুল দ্রাবিড়ের কাজ বাড়াচ্ছেন পন্থ। বল বাছাই, বোলারকে বুঝে খেলা, স্ট্রাইক রোটেট করেও দলের লাভ হয়-এগুলো পন্থ এখনও শিখলেন না। কতো সময় নেন দেখা যাক। সাহা-রা এতো সুযোগই পান না!
ভারতের ব্যাটিং মাঝ পর্বে ১০ ওভারে ৯১ রানে ৩ উইকেট। আরও রোহিত ২৬ বলে ৪৯। শ্রেয়াস আয়ারের সুযোগ এসেছে। সেই হাই কোর্ট প্রান্ত থেকে তৃতীয় ওভারে দিলেন ১২ রান। কিন্তু হাফ সেঞ্চুরি করে এ কী অঘটন! সোধির নিরীহ স্পিনার সজোরে সোজা ঠেলে দিলেন। আর সোধির পাঞ্জাতে আটক গেলেন! হতাশ নেতা। শরীর টেনে ফিরে যাওয়াতে ছিল ঘোর অনিচ্ছা। সামনের সিটে বসা কৃষ্ণকলি বাঁধা খোলা শুরু করলেন। ক্লিপ দিয়ে চুলের স্টাইল বসলেই ফেললেন।
শ্যামা পোকা গুলো এতো দিনে প্রিয় মানুষের দেখা পেয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ইডেন যে আবার দুই বছর পর জেগেছে। জেগে উঠছেন ভেঙ্কটেশ আয়ার। হার্দিকদের বিকল্প তিনি। লেফট হ্যান্ড এই ব্যাটার কি যুবরাজ আমেজ ফিরিয়ে আনতে পারবেন? ঝলকানি আছে। ১৫ ওভারে ৩ উইকেটে ১৩৪ রান। আশেপাশের সকলের গুনতি শুরু। কতোটা যাবে রান? আবারও ১৮০ প্লাস? বাকি ৩০ বলে ৪০ হবে না? হলেই তো ১৭০ নিশ্চিত।
কিন্তু ছন্দ পতন। বোল্টের বলে আকাশে তুলে ডিপ ফাইন লেগে ক্যাচ তুলে ফিরলেন ভেঙ্কটেশ ( ১৫ বলে ২৩ রান) । বোল্ট ফেরালেন। অন্য প্রান্তে মিলনে এসে লং অনে ক্যাচ তুলে নিয়ে নিলেন, আয়ারকে ( ২০ রান)।
আয়ার জুটি ছেড়ে ক্রিজে হাজির প্যাটেল জুটি। হার্শাল আর অক্ষর। সপ্তম উইকেটে জুটি। ১৭ ওভারে ভারত ১৪৮ ছুঁয়ে ফেলেছে। উইকেটের উপরও শিশির! কাঠের গুঁড়ো ছড়াতে হল, বোলিং ক্রিজে। তাহলে! পরে ব্যাট করতে গিয়ে উইকেট আরও গতি হারাবে? ১৫০ হয়ে গেলো ১৭.৩ ওভারে। সঙ্গে মিস ফিল্ডে বাউন্ডারি। আরে! আকাশের বুকে এসব কি? ধোঁয়া! নাহ, এতো কুয়াশা কুহেলী!
মায়াবী ইডেন উল্লাসে মেতেছে, মেক্সিকান ওয়েভ নিয়ে। ভারত ১৮ ওভারে ১৫৬। একটা ছক্কার পর হিট উইকেট আউট! হার্শাল ফিরলেন। ১৮.৩ ওভারে ভারত ৭ উইকেটে ১৬২। আরও কত?
ঘড়ি বলছে রাত ৮.৪৫ । ১৯ ওভারে ১৬৫ রানে। ৭ উইকেট গেছে। শেষ ওভার। দীপক চাহার আর অক্ষর। মিলনের প্রথম দুই বলে দুটি ৪। ১৭০ পার। ৩ বলে ১০ এসে গেছে। সৌরভ খুশি। চতুর্থ বলে ছক্কা! জিও চাহার। ১৮০ পার। We want six- ইডেন গলায় চিৎকার। এক রান। তাতেই খুশি।