প্রায়শ্চিত্তের ডাক। এবার ঘরে ফিরতে চাইছেন। এরই মধ্যে গণ ইস্তফা শুরু। রাজ্য বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার সাইনবোর্ড ছাড়া সবটাই শূন্য হতে চলেছে। বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর এক মাস কাটতে না কাটতেই উঠে যেতে বসেছে দলের এই শাখা সংগঠন। যদিও বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব এই ভাঙনকে তেমন আমল দিতে চাইছেন না।
মুকুল রায় ও শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে তৃণমূল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছিলেন যাঁরা আজ তাঁদের সিংহভাগ ঘরে ফিরতে ব্যগ্র। রাজ্য সংখ্যালঘু মোর্চার শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে সাধারণ সদস্যের তৃণমূলে ফেরাটা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। নির্বাচনের আগে জেলায় জেলায় বিজেপির জনসভায় কখনও অমিত শাহ,কখনও জে পি নাড্ডা ,কখনও দিলীপ ঘোষ, সায়ন্তন বসুর উপস্থিতিতে পদ্ম পতাকা হাতে নিয়ে রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ যোগ দিয়েছিল গেরুয়া শিবিরে। যার পোশাকি নাম ছিল যোগদান মেলা। ওই যোগদানকারীদের মধ্যে মুসলমানও ছিল। তৃণমূল ত্যাগী দুই দাদার অনুগামীদের নিয়ে পুষ্ট হয়েছিল বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চা। নেতাদের তো বটেই, অনেক আধা নেতাকেও ব্যক্তিগত কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার যোগান দিয়েছিল বিজেপি। তাঁদের একাংশের দাবি, নির্বাচন জিততে বিজেপি নেতারা ধর্মীয় মেরুকরণের নামে বস্তুত মুসলমান নিকেশের বার্তা দিয়েছিল। শিতলকুচি কাণ্ডের পর তা পুরোপুরি বেআব্রু হয়ে পড়ে। মানুষের উন্নয়ন নয়, সমাজে ধর্মের ভেদাভেদ নিয়েই রাজনীতি করতে চান বিজেপি নেতারা।
সংখ্যালঘু মোর্চার সহ সভাপতি কাশেম আলীর স্পষ্ট স্বীকারোক্তি, গত পাঁচ বছর বিজেপি করে যে পাপ করেছি তার প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ক্ষমা চাইবো।
২০১৭ সালে মুকুল রায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলে তাঁর ঘনিষ্ঠ বৃত্তে থাকা কাশেম সদলবলে দাদার অনুসারি হন। বলে কয়ে মুকুল, কাশেমকে বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার সহ সভাপতি পদে বসিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রীর সবকা সাথ, সবকা বিকাশে মন মজে গিয়েছিলো। সেই স্লোগান যে এক অলীক কুনাট্য তা এখন নির্বাচনে ভরাডুবির পর হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন কাশেমরা। তাঁর মতে, ‘সবকা সাথ’ বলে, বিজেপি সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ চাইছে। আমি দেখলাম, দলের প্রথম সারির নেতারাই ধর্মীয় বিভাজনের হুমকি দিচ্ছে। শুধু সংখ্যালঘু নয়, বিজেপি গরিব মানুষের সঙ্গে নেই। সে হিন্দু,মুসলমান, দলিত যাই হোক না কেন। সেটা মানুষ ধরে ফেলেছে বলেই ভোটে এই ভরাডুবি।
কাশেমের দাবি, এরই মধ্যে তিনি তৃণমূলের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ‘আমি প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই। দিদির কাছে ক্ষমা চাইবো।’
তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক, আরেক মুকুল ঘনিষ্ঠ হুগলির পুরশুরার পারভেজ রহমান, আলমগীর মোল্লা প্রমুখ পুরনো দলে ফেরার পথে। গত বছর ১৯ ডিসেম্বর মেদিনীপুরে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মঞ্চে যে চারজন সংখ্যালঘু প্রতিনিধি বিজেপির পতাকা তুলে নিয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম কবিরুল ইসলাম। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদের প্রাক্তন সম্পাদক কবিরুলের দাবি, তিনি স্থানীয় এক নেতার সঙ্গে বিরোধের জেরে শুভেন্দুর কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেই সুবাদেই শুভেন্দুর দল ভারী করতে তাঁর নির্দেশে অমিত শাহের মঞ্চে গিয়েছিলেন। ‘কিন্তু নির্বাচনী প্রচার পর্বে দলের নেতাদের যেভাবে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়াতে দেখলাম,তাতেই মোহভঙ্গ হয়েছে। শিতলকুচির ঘটনা যেন চোখ খুলে দিয়েছে।’
কবিরুল জানান, মেদিনীপুরে যোগ দেওয়া চার মুসলমান নেতাই বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে ফেলেছেন। তবে নিজ নিজ দাদাদের প্রতি এই বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীদের দুর্বলতা অটুট। কেউ বলছেন,মুকুল দা’কে বিজেপি যথাযথ সম্মান দেয়নি। শুভেন্দু অনুগামী সংখ্যালঘু নেতারা মনে করছেন, যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে দাদাকে দলে নেওয়া হয়েছিলো তা মানা হয়নি। অর্থাৎ নিজেরা দল ছেড়ে তৃণমূলমুখী হয়েও মুকুল-শুভেন্দুর প্রতি বিজেপি নেতৃত্বের ‘বঞ্চনার’ ব্যাপারে সরব।
দাদার অনুগামীদের এই আচরণে বৃহত্তর কোনো নাট্যের ভূমিকা লেখা হচ্ছে না তো?