এটিএম নিয়ে প্রশ্নের মুখে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। নিজের পড়াশোনার খরচ চালানো বা ভাই বোনের লেখা পড়ার খরচ জোগানো, বোনের বিয়ে হোক, বাবা মায়ের চিকিৎসা অথবা সংসার চালানোর জন্য এটিএমে সিকিউরিটি, ক্লিনিং অ্যান্ড সুইপিং, কেয়ারটেকার, এরকম নানা পরিচয়ে ঠিকা প্রথায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন একদল শিক্ষিত যুবক। যে নামেই ডাকা হোক না কেন মূলত এটিএম ও গ্রাহকদের সুরক্ষা দেওয়ায়ই এদের প্রধান কাজ। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, গত কয়েক বছর যাবৎ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ওই সকল এটিএমে প্রহরীর কাজে যুক্ত ঠিকা কর্মীদের হটিয়ে ইলেকট্রনিকস গ্যাজেট যেমন সিসি ক্যামেরা, সেন্সর জাতীয় মেশিন বসিয়ে গ্রাহকদের সুরক্ষার নামে প্রতারিত করছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ব্যাঙ্কের মূল লক্ষ্য গ্রাহকদের কাছ থেকে নানা খাতে সার্ভিস চার্জ নেওয়া। আর সার্ভিস চার্জ নিয়েও গ্রাহকদের সুরক্ষা খাতে খরচ না করে ব্যাঙ্কের লভ্যাংশ বৃদ্ধি করা এবং এক শ্রেণির শিক্ষিত যুবকদের কর্মহীন করে দেওয়া। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, দীর্ঘ করোনা কালে এটিএম গুলিতে স্যানিটাইজ না করার ফলে ব্যাঙ্কের কর্মীসহ গ্রাহকরা কোরোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। এ বিষয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কোনো নজর থাকে না বা জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন না। বেশ কয়েকদিন ধরেই সংবাদের শিরোনামে ব্যাঙ্কের এটিএম। বিভিন্ন এটিএম থেকে নতুন টেকনোলজি ব্যবহার করে যেভাবে টাকা সাফ করে চলেছে একদল হ্যাকার, তাতে আগামী দিনে সাধারণ গ্রাহকদের চিন্তায় ফেলেছে। এক্ষেত্রে গ্রাহকদের টাকা গায়েব না হলেও প্রহরী বিহীন এটিএম সাধারণ গ্রাহকদের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন আগেই খোদ শহর কলকাতার বুকে এটিএমে ক্লোনিং মেশিন ও উন্নত ডিভাইস ব্যবহার করে গ্রাহকদের টাকা গায়েব করেছিল একদল দুষ্কৃতী। এর পরেও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ শিক্ষা না নিয়ে ক্রমাগত বেসরকারি কর্মী সংকোচন করে প্রহরীহীন এটিএম কাউন্টারের সংখ্যা বাড়িয়ে গ্রাহকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছেন বলে অভিযোগ। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের কাছ থেকে নানাভাবে সার্ভিস চার্জ নেওয়া স্বত্ত্বেও কস্ট কাটিংয়ের নাম করে একদিকে শিক্ষিত যুবকদের কর্মহীন করছে ও সংকুচিত করছে কর্মসংস্থান, বাড়াচ্ছেন গ্রাহকদের এটিএমে সুরক্ষা নিয়ে চিন্তা । ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ভাবছেন না যে মানুষকে বাদ দিয়ে, শুধু কয়েকটি ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস, ক্যামেরা লাগিয়ে যদি গ্রাহকদের সুরক্ষা দেওয়া যেত তাহলে কলকাতা সহ দেশের বিভিন্ন শহরে পুলিশ প্রশাসন না রেখে ক্যামেরা লাগালেই কাজ হয়ে যেত ,কমে যেতো অপরাধ । সূত্র খবর, পুলিশ আধিকারিকরা এটিএম কাউন্টার গুলিতে রক্ষী রাখার কথা বার বার বললেও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ সেবিষয়ে কর্ণপাত করেননি। এমনকি নিজেদের লভ্যাংশ বৃদ্ধি করতে নানা অজুহাত দেখিয়েছেন ও গ্রাহকদের সুরক্ষার বিষয়টি অগ্রাহ্য করেছে। বেসরকারি ব্যাঙ্ক গুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ক গুলোর ক্ষেত্রে অবস্থান আরো খারাপ।
গ্রাহক সুরক্ষার স্বার্থে প্রত্যেক এটিএম-এ রক্ষী রাখার দাবি জানিয়ে এবং এটিএম কর্মীদের ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল অরাজনৈতিক সংগঠন অল বেঙ্গল কন্ট্রাক্ট সিকিউরিটি ওয়ার্কাস ইউনিয়ন। কিন্তু তাদের প্রতিবাদ আন্দোলনকে,গ্রাহক সুরক্ষাকে গুরুত্ব না দিয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ উদাসিন থেকেছেন। বর্তমান পরিস্হিতিতে অনেক গ্রাহকই মনে করছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের একরোখা মনোভাবের পরিবর্তন আনতে গড়ে উঠুক ইউনাইটেড গ্রহক ফোরাম। যাদের লক্ষ্য হবে সরকারি বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই গ্রাহক সুরক্ষায় নজরদারিতে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করানো, না হলে আন্তঃ সুরক্ষা নিশ্চিত করা।