এখনও পর্যন্ত যা খবর তাতে রবিবারে গীতাপাঠের আসরে নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদির আসার কোনও খবর নেই। দেশে তো এক জায়গায় গীতাপাঠ হচ্ছে না, বহু জায়গাতেই হচ্ছে, তো তিনি হয়তো তেমন কোথাও যাবেন। এমনিতেই ওনার প্রত্যেকটি মুভ, প্রত্যেক নড়নচড়নের আগে ভোটের হিসেব করা হয়। উনি করেন, হিসেবে মিললে তবেই নড়েন, কথা বলেন, সেখানে যান। উনি কি সেই মণিপুরে গেছেন? ২০০ দিন পার হবে আর ক’দিন পরে, উনি গেছেন? না যাননি। হিসেব মিলছে না যাননি, আর হিসেব মিলে গেলে পরপর পাঁচ কি ছ’দিন যাবেন। আপাতত খবর উনি আসছেন না। কিন্তু ছোটা মোটা ভাই আসছেন, মানে অমিত শাহ পধার রহে হ্যায়। গীতাপাঠে? না না ওসব বড় দাদার ব্যাপার উনি তলার সারিটা দেখেন। উনি হোম টাস্ক দিয়ে গিয়েছিলেন বঙ্গবাহিনীকে, দেখতে আসছেন কাজ কতদূর এগোল। মানে ইডি, সিবিআই সবই তো পাঠানো হল, ইনকাম ট্যাক্সও এসেছে, কিন্তু সেই যে পার্থ-অর্পিতা টাইপের সেনসেশন, সেটা কিন্তু আর তৈরি হচ্ছে না। সে সবের সঙ্গেই তিনি বার বার আসছেন এই বাংলায়, ভোকাল টনিক দিয়ে যাচ্ছেন আর দিচ্ছেন হোম টাস্ক, কী কী করতে হইবে তার বড় লিস্ট। সেসব কি হচ্ছে? আসলে আমাদের ছোটা মোটা ভাই অমিত শাহজি গোবলয়ের রাজ্যের সঙ্গে বাংলাকে গুলিয়ে ফেলছেন। এখানে দলীয় সংগঠন দলের আদর্শের উপর ভিত্তি করে, তার উদ্দেশ্য, তার লক্ষ্য ইত্যাদি বুঝে বা অন্তত আধা বুঝে যদি কোনও দল কাজ করে, করে থাকে তাহলে তারা সিপিএম, কমিউনিস্টরা। এ বাংলায় দক্ষিণপন্থীদের অমন অভ্যেস কোনওকালেই ছিল না। কিন্তু অমিত শাহ তেমনটাই চান, কিন্তু চাইলেই তো আকাশের চাঁদ ধরা যায় না। উনি হোম টাস্ক দিচ্ছেন বটে কিন্তু ফিরতি ভিজিটেই বুঝতে পারছেন ছাত্ররা ভারি অন্যমনস্ক, কিচ্ছুটি করে রাখেনি। সেটাই আমাদের বিষয়, অমিত শাহ আবার আসছেন বাংলায়, কেন আসছেন জেনে নিন।
কাঁথির পি কে প্যালেস, শিলিগুড়ির সৌভাগ্য প্যালেস, মেদিনীপুরে রয়্যাল বেঙ্গল প্যালেস, গাজোল ব্যাঙ্কোয়েট হল, রানাঘাটে সোনারতরী লজ, নদিয়ার হানিমুন গেস্ট হাউস ভাড়া করা হয়েছিল ক’দিন আগে। ভাড়া, খাওয়া দাওয়া, দূর থেকে যাঁরা এসেছেন তাঁদের থাকার ব্যবস্থা ইত্যাদি করতে কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। কেন? মেদিনীপুর, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, আরামবাগ, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, দিনাজপুর, মালদহ, নদিয়া, বনগাঁ, রানাঘাট, মুর্শিদাবাদ ইত্যাদি অঞ্চল থেকে কর্মীদের নিয়ে এসে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল বিজেপি, নির্দেশ ছিল স্বয়ং অমিত শাহের।
আরও পড়ুন: Aajke | লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় কোন কোন জোট ক’টা আসন পেতে পারে?
সেখানে পড়ানো হয়েছে দলের ইতিহাস, আদর্শ, মোদিজির ৯ বছরের বিভিন্ন প্রকল্প, আর জনসংযোগের উপায়, এসব নিয়ে বাছাই করা বক্তারা ছিলেন। সব ব্যবস্থা ছিল, প্রথম পর্যায়ে দলের বিভিন্ন স্তরের তিন স্তরের পঞ্চায়েতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং নেতারা আসবেন, এমন কথা ছিল। এসব হয়ে যাওয়ার পরে সেই প্রশিক্ষণ শিবিরের এক ৬৫ পাতার রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে দলের উচ্চপদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। সেখানে বলা আছে, ১০৬৭ জনকে ডাকা হয়েছিল যার মধ্যে ২৭ শতাংশ, মানে ২৮৮ জন এসেই পৌঁছননি। দক্ষিণবঙ্গে তবুও এসেছেন, কিন্তু যেখানে জেতার সম্ভাবনা বেশি বলে তাঁরা মনে করছেন সেই উত্তরবঙ্গ আর পশ্চিমাঞ্চলের অনুপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া আসানসোল, বর্ধমান, কাটোয়া, বোলপুর, বিষ্ণুপুরের পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত ১৫৮ জনের মধ্যে ৭৫ জন এ মুখো হননি, তাঁরা কি তাহলে তলায় তলায় তৃণমূলের সঙ্গেই আছেন? প্রশ্ন উঠেছে। পঞ্চায়েত সমিতিরই যদি এই হাল হয় তাহলে বাকিদের কী হবে? এবং আরও মজার কথা হল এইসব প্রশিক্ষণ সভাতে দিলীপ ঘোষকে কোথাও ডাকা হয়নি, গেছেন হয় সুকান্ত মজুমদার নয় শুভেন্দু অধিকারী। এ রিপোর্ট অমিত শাহের কাছে, জে পি নাড্ডার কাছে পাঠানো হয়েছে। এবং এই রিপোর্ট পাঠানো নিয়ে তুমুল আকচা আকচি শুরু হওয়ার পরেই এক বিক্ষুব্ধ শিবির থেকে এই রিপোর্টের পুরোটাই সংবাদমাধ্যমের কাছে পাঠানোর হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই হচ্ছে আপাতত বঙ্গ বিজেপি। কেন প্রধানমন্ত্রী আসছেন না, কেন অমিত শাহ আসছেন সে রহস্যের জবাব হয় তো এই রিপোর্টের মধ্যে লুকিয়ে আছে। এই রিপোর্টেই বাম দল থেকে যাওয়া দু’ তিন জন নেতাকে নিয়ে কিছু সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে, তাঁরা নাকি দলের মধ্যে বসেই অন্য ষড়যন্ত্র করছেন। আবার ওই বিক্ষুব্ধদের এক অংশ জানিয়েছেন বেশ কিছু নেতা তৃণমূলের বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন, নির্বাচনের আগেই তাঁরা নাকি দল ছাড়বেন। অমিত শাহ আসছেন বটে, কিন্তু এই ফুটো ছাতায় জল আটকানো যাবে? এটা আমি বলছি না, এক বিক্ষুব্ধ নেতার কথা। আমরা আমাদের দর্শকদের প্রশ্ন করেছিলাম, বাংলাজুড়ে বিজেপির কিছু নেতাদের দিশাহীন ছোটাছুটি তো দেখা যাচ্ছে, কিন্তু বিজেপির সংগঠন কি যথেষ্ট নড়বড়ে নয়? এই নড়বড়ে সংগঠন আর দলের মধ্যে প্রবল আকচা আকচি নিয়েই কি বিজেপি লড়ার আগেই হেরে যাচ্ছে না? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
রামনবমীতে দু’ চার জায়গায় দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা, কিছু ভড়কাউ ভাষণ, তীব্র ঘৃণা ছড়ানো ভাষণ, ইডি-সিবিআই-ইনকাম ট্যাক্স লেলিয়ে দিয়ে একটা আবহ তৈরি করা যায়, এবারে বিজেপি জিতছে, অব কি বার ৪০০ পার গোছের এক উল্লাস তৈরি করাই যায়। কিন্তু ঠিক যে যে কারণে রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস হেরেছে, সেই কারণের জন্যেই বিজেপি বাংলাতে দাঁত ফোটাতে পারছে না, তার সংগঠন তৈরি করা দূরস্থান, সংগঠন তৈরি করতে হবে এই চাহিদাটাই বঙ্গ বিজেপির মাথায় নেই। কাজেই প্রধানমন্ত্রী আসুন আর না আসুন, অমিত শাহ, নাড্ডাজি যতবার খুশি আসুন তাতে বাংলার রাজনৈতিক চালচিত্রে এখনও কোনও ফেরবদলের আগাম খবর নেই।