সিএএ আইন পাশ করার পরে বছর ঘুরে গেছে তা লাগু হয়নি। এই এক সরকার পেয়েছি আমরা যারা আইন পাশ করায়, কেন করায় জানা নেই, সেই আইন কোনও কারণ না দেখিয়েই তুলে নেয়, মানে স্ক্র্যাপ করে দেয়। আইন আনে কিন্তু তা লাগু করে না। এদিকে সে আইন যে লাগু হবেই আর মতুয়া সমাজের প্রত্যেকে যে নাগরিকত্ব পাবেই তা তো শুরু থেকেই বলা হয়েছে. কেবল বলাই নয় সেই বলার ভিত্তিতে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। রানাঘাট, নদিয়া, উত্তর চব্বিশ পরগনার মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষজন ভাবছিলেন সরকার তো কত কিছু দেয়, এবার নাগরিকত্বও দেবে হয় তো। আমরা বলার চেষ্টা করেছিলাম আরে বাবা আপনারা তো নাগরিক। তো ওনাদের প্রতিনিধি যাঁরা বিজেপি করেন, তাঁরা বোঝালেন, ওসব কুচক্রীদের কথায় কান দিও না, আমরা এনে দেব সেই নাগরিকত্ব, টুপ করে পড়বে পাকা আমের মতো। কিন্তু তারপরেও বছর ঘুরেছে, সিএএ কই গেল? একমাত্র অমিত শাহ বংগালে এলে মনে করাতেন, সিএএ হোগা, লাগু হোগা। করতে করতে নির্বাচন এসে গেল। লোকে প্রশ্ন করবে নয়, পেটাবে, কিছু একটা করুন, তো বাধ্য হয়ে সরকার রুলবুক জারি করে বকায়দা আইন লাগু করল। ধরুন ওই কোভিডের টিকা, কে আগে নিতে গেলেন, যথেষ্ট ধোঁয়াশা ছিল, কী হবে? কেমন হবে ইত্যাদি। তো দেশের প্রধানমন্ত্রী ভজিয়ে দিলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রীসান্ত্রীরা গিয়ে ভ্যাক্সিন নিলেন। এটাই হয়, বড় বড় প্রকল্পের উদ্বোধনে আগের সারিতেই থাকেন নেতারা। সেই কবে টেলি যোগাযোগ মন্ত্রী সুখরাম জ্যোতি বসুকে মোবাইল ধরিয়ে দিলেন, জ্যোতিবাবু বললেন হ্যালো, চালু হল মোবাইল। আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে আমাদের অদিত্য যোগী এক পায়ে খাড়া হয়ে যোগ ব্যায়াম দেখাচ্ছিলেন, টাল সামলাতে পারছিলেন না, সে অন্য কথা, চেষ্টা তো করছিলেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী তো ঘেমে নেয়ে অস্থির হয়ে সামনে রাখা পতাকা দিয়েই ঘাম মুছে নিয়েছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে এক ফোটাও ঘাম ঝরাননি, স্বাধীন দেশের জাতীয় পতাকা দিয়ে ঘাম মুছলেন, কম কথা নাকি। তো আমরা ভেবেছিলাম, এই যে সিএএ লাগু হল, তাহলে মতুয়া সমাজের নেতা সাংসদ বিধায়করা নিশ্চয়ই নাগরিকত্বের আবেদন করবেন, তাঁরাই তো মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতা, মতুয়া লোকজনদের যদি নাগরিকত্ব প্রয়োজন হয়, ওনাদেরও তো লাগবে। তো আবেদন করলেন কি? আজ সেটাই বিষয় আজকে, বিজেপি সাংসদ প্রার্থীরা সিএএ ফর্ম ভরছেন না কেন?
ধরুন সাংসদ শান্তনু ঠাকুর, উনি মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্যেই ধরে করে এই বিল লাগু করালেন। লাগু হওয়ার আগে দশবার ঘোষণা করলেন যে নির্বাচনের আগেই এই বিল লাগু হয়ে যাবে। তো বিল লাগু হল শেষ পর্যন্ত, কিন্তু কোন অজানা কারণে তিনি এখনও ফর্ম ভরলেন না? কেবল ফর্ম ভরে দিলেই যদি নাগরিকত্ব পাওয়া যায়, সেটা উনি নিজে করলেন না কেন? এবারে বারাসত লোকসভার প্রার্থী আরেকজন বিজেপির বিধায়ক, তিনিও মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ, তিনি ফর্ম ফিলাপ করেছেন? না করেননি।
আরও পড়ুন: Aajke | অমিত শাহের ভোট প্রচার মানে মিথ্যের ফুলঝুরি
কেন করেননি? কোন আশঙ্কা থেকে করেননি? কী ভেবে করেননি? তাহলে এনারা সিএএ লাগু করব, সিএএ লাগু করব বলেই যাচ্ছিলেন কেন? তো এই স্বপন মজুমদার তো আর দেশের প্রধানমন্ত্রী নন, ইনি সাংবাদিক সম্মেলনে বসেছিলেন এবং এক দুষ্টু সাংবাদিক সেই প্রশ্নটাই করলেন, আপনি কি নাগরিকত্বের জন্য সিএএ ফর্ম ফিল আপ করেছেন? উনি সাফ জানিয়েছেন, না করেননি। স্বাভাবিকভাবেই তারপরের প্রশ্ন ছিল কেন? তিনি জানিয়েছেন, শুরুর দিকে সব আইনেই কিছু জটিলতা থাকে, তা কাটলেই সবাই আবেদন করবেন। কী কাণ্ড, ওই আইনে যা নাকি ৫ বছর আগে সংসদে পাশ হয়ে রাষ্ট্রপতির সই নিয়ে আপাতত আইন, তার জটিলতা এখনও কাটেনি। ওই সম্মেলনেই জানা গেল একজন মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষও ওই সিএএ ফর্ম ভরে জমা দেননি, মানে নাগরিকত্বের আবেদন করেননি। সাধারণ মানুষের মধ্যে তো নানান সংশয় থাকাটাই স্বাভাবিক, কিন্তু সাংসদ বিধায়কদের মনে কোন সংশয় ছিল? না শান্তনুবাবু না স্বপনবাবু কেউই এ নিয়ে মুখ খোলেননি কিন্তু কারণ তা আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারছি। ক্লাস নাইনের ছাত্র তো ক্লাস নাইনে প্রোমোশন পাওয়ার আবেদন করে না, ক্লাস এইট বা তার তলার ছাত্র সেই আবেদন করতেই পারে। ঠিক সেরকম একজন নাগরিক কীভাবে নাগরিকত্বের আবেদন করবেন? সেটাই সিএএ আইনের সবথেকে বড় জটিলতা। তাহলে তাকে প্রথমেই বলতে হয় যে হুজুর আমি ভারতের নাগরিক নই, তাই নাগরিকত্বের আবেদন করছি। আর এটা করলেন প্রশ্ন উঠবে, তাহলে কি দুই বিদেশি এতদিন ধরে আমাদের বিধায়ক বা সাংসদ ছিল? আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, মতুয়া সম্প্রদায়ের সাংসদ, শান্তনু ঠাকুর বা বিধায়ক স্বপন মজুমদার নিজেরাই সিএএ আইন অনুযায়ী নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করলেন না কেন? একজন বিদেশি কি দেশের সাংসদ বা বিধায়ক হতে পারে? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
সিএএ সারা দেশে মুসলমানদের ভয় দেখানোর জন্যই পাশ করানো হয়েছিল, কিন্তু আমাদের শান্তনু ঠাকুর বা মতুয়া সম্প্রদায়ের বিজেপির নেতারা বুঝতে পারেননি যে বোমাটা নিজেদের দরজাতেই ফাটবে, বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে। তাই এসেছে, এবং সেই কারণেই তাঁরা সভা সমিতিতে আর সিএএ নিয়ে কথা বলা বন্ধ করেছেন, নির্বাচনের ঠিক আগে সিএএ লাগু করে বিজেপি ভেবেছিল দারুন মাইলেজ পাওয়া যাবে, এখন এই সিএএ লাগু করা বিজেপির ক্ষতি করবে, বেশ কয়েকটা আসনে বিজেপি হারবেই, মিলিয়ে নেবেন।