বিজেপির নিয়ম ভেঙেই কর্নাটকের বি এস ইয়েদুরিয়াপ্পার ছেলে বিজয়েন্দ্র কর্নাটক বিজেপির রাজ্য সভাপতি, কেন? আরেক ভাই রাঘবেন্দ্র সাংসদ। বি এস নিজেই ৮০ বছর বয়সে বিজেপি পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্য, ১১ জনের মধ্যে এক জন। যে বয়সে এল কে আদবানিকে মার্গদর্শক মণ্ডলীতে পাঠানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য নাম কাটা গেছে রমণ সিং বা বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার, সেখানে এক পরিবারে তিনজন এই উচ্চতায় কেন? কারণ ভোট, গতবার কর্নাটকের ২৮টা আসনের মধ্যে বিজেপি একাই ২৫, সমর্থিত একজন, মানে মোট ২৬টা আসন। এবারে মেরেকেটে ১২-১৪তে গেলেও বিরাট, তাই ওসব নিয়ম তাকে তুলে বিজয়েন্দ্রকে তুলে আনা হল, দেবেগৌড়ার জেডিএস-এর সঙ্গে হাত মেলাল বিজেপি। একই ভাবে মহারাষ্ট্রে এনসিপি আর শিবসেনাকে ভাঙা হয়েছে, একই উদ্দেশ্যে। দিল্লি আর পঞ্জাবে জেলে পোরো অভিযান চলছে, কিছুদিনের মধ্যে কেজরিওয়ালকে জেলে পুরলে অবাক হব না। ওড়িশায় নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে নো ওয়ার, যুদ্ধ নয় ঘোষণাই করে দিয়েছে বিজেপি। বিহারে নীতীশের দল ২৪-এর আগেই আরেকবার ভাঙবে। জগন রেড্ডির উপরে সিবিআই ঝুলছে, সমর্থন পাকা। এই নির্বাচনের পর তেলঙ্গানার বিআরএস-এর সঙ্গেই হাত মেলাবে বিজেপি, মিলিয়ে নেবেন। তামিলনাড়ু, কেরালার আশা ছেড়ে দিয়েছে বিজেপি। উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, অসম বিজেপিকে ঢেলে দেবে, এটাই বিজেপির ধারণা বা আশা। উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী দলে ভাঙন সম্ভব হচ্ছে না, তাই সেখানে বিএসপিকে অন্তত আটকানোর চেষ্টা চলছে। এবং বাংলায় বিজেপি চায় ৩৫টা আসন, অঙ্কটা কী? সেটাই বিষয় আজকে, কোন অঙ্কে এই মুহূর্তে লোকসভার নির্বাচন হলে বিজেপি ৩৫টা আসন পাবে?
নাড্ডাজি, অমিত শাহ বাংলাতে এসে বলে গেছেন আমাদের ৩৫টা চাই। খানিকটা মা সীতার মতো, আমার সোনার হরিণ চাই, এরকমই কি বলেছেন? না, এত কাঁচা খেলোয়াড় অমিত শাহ নন। তিনি প্রচার থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা ঘুঁটি চিনিয়ে দিচ্ছেন, বুঝিয়ে দিচ্ছেন। একটা সাধারণ ব্যাপার হল সংগঠনকে চাঙ্গা করা, তার জন্য বিভিন্ন প্রোগ্রাম, মিছিল, সভা, লড়ে যাওয়া ইত্যাদির ভোকাল টনিক দিচ্ছেন। কিছু রদবদলও করছেন, স্থানীয়, মচ্ছি খাতা হ্যায় এমন বাঙালি কারিয়াকর্তাদের উপর তেমন ভরসা নেই কাজেই কিছু দিল্লি থেকে আনা, নাগপুর থেকে আসা নেতাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। তাঁরা এখনও বাংলার মাটিই চিনে উঠতে পেরেছেন বলে জানা নেই। এদিকে সংগঠনের ভেতরে রোজই হানো আঘাত চলছে, এ এর বিরুদ্ধে, সে তার বিরুদ্ধে বয়ানবাজি করেই চলেছেন।
আরও পড়ুন: Aajke | মহুয়া মৈত্রের পাশে দল নেই?
এই মুহূর্তে বাংলা বিজেপির অন্তর্কলহ যে জায়গাতে আছে তা দেশে আর কোথাও নেই। কিন্তু এটাই তো ৩৫-এ যাওয়ার একমাত্র ছক নয়। আরও আছে। তাঁরা বাংলা থেকে খুঁজছেন বুদ্ধিজীবীদের, কিছু নজরের মধ্যেও আছে, আবার কিছু চিত্র পরিচালক, অভিনেতা অভিনেত্রী, কবি লেখক। বাজিয়ে দেখা হচ্ছে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের, তাঁদের কেউ কেউ ইতিমধ্যেই হাত মিলিয়েছেন। কয়েকটা শুভেন্দু অধিকারীরও খোঁজ চলছে, দু’ এক জনের সঙ্গে যোগাযোগও হয়েছে, দরদাম চলছে। আমলাদের এক অংশ, পুলিশের এক অংশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন দিল্লি থেকে আসা এক নেতা, সেখানেও কিছু ঘুঁটি কাঁচা থেকে পাকা হয়ে উঠছে। সামনে প্ল্যান অফ অ্যাকশনের মধ্যে আছেই তো কিছু গ্রেফতার, কিছু জেরা, নতুন কিছু কেলেঙ্কারিকে সামনে আনা। সেই সারদা থেকে নারদা হয়ে পার্থ-অপা, কেষ্ট, বালুর ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে আগামী তিন চার মাস। বড় কোনও মাথাকে জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি নাগাদ জেলে পাঠাতে পারলে ভোটের বাক্স উপচে পড়বে এটাই ধারণা। মিঠুন চক্রবর্তীকে জানুয়ারি থেকেই লাগাতার রাজ্যে আনার পরিকল্পনা পাকা। চিত্র পরিচালকেরা জানুয়ারি থেকে ওনার ডেট পাচ্ছেন না। টিভি, খবরের কাগজের সাংবাদিক, ইউটিউব চ্যানেলের সাংবাদিক ইত্যাদিদের নিয়ে একটা কমিটি রেডি, তাদের টাকা জোগানোর ফান্ড রেডি। নজর আছে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের উপর, যাদের কাছ থেকে টাকা পায় তৃণমূলের বিভিন্ন নেতারা। এবং রামমন্দির, রামনবমী নিয়ে উন্মাদনাকে তুঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য আরএসএস প্রচারক, বিজেপির রাজ্য নেতাদের কয়েকজনকে নিয়ে একটা কমিটিও তৈরি হয়েছে। কিছু জায়গাকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে এসব করলেই প্রতি আক্রমণ নেমে আসতে পারে, আর তা হলে সেই অবস্থাকে কীভাবে আরও বড় করে তোলা যায়, তার ছক কষে যাচ্ছেন তাঁরা। ওনারা জানেন ৩৫ চাইলে ৩৫ হবে না কোনওদিন, কিন্তু অন্তত আগের হিসেবটা ধরে রাখার জন্যই এত পরিকল্পনা। সংগঠন নয়, মোদি সরকারের কাজ নয়, মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা নয়, ওনাদের অস্ত্র কিছু বিশ্বাসঘাতক, ইডি, সিবিআই-এর মতো কিছু সরকারি এজেন্সি আর ধর্মের নামে অশান্তি আর দাঙ্গা। আমরা আমাদের দর্শকদের প্রশ্ন করেছিলাম, কোন উপায়ে, কোন মন্ত্রে বিজেপি এ রাজ্য থেকে ৩৫টা আসন জেতার চেষ্টা করছে? তাদের আসন সংখ্যা এই বাংলাতে কত হওয়াটা সম্ভব? শুনুন মানুষজন কী বলছেন।
৩৫টা আসন তো ছেলের হাতের নাড়ু নয় যে হাত ঘোরালেই পাওয়া যাবে। এই মুহূর্তে বরং বিজেপির সবথেকে বড় সমস্যা হল তাদের আগেরবারের শক্তি কেন্দ্রগুলো। রাজ্যের আদিবাসীরা সরে গেছে, বিধানসভা, পঞ্চায়েত তাই বলছে। উত্তরবঙ্গের নেতারা আলাদা রাজ্য চান, সেটা করলে দক্ষিণবঙ্গে শুভেন্দুর জামানত নিয়ে টানাটানি হবে। ধূপগুড়ির ফলাফল বলে দিচ্ছে উত্তরবঙ্গে এমনকী রাজবংশী ভোটও সরে গেছে। আর মতুয়াদের দেওয়া অমিত শাহের প্রতিশ্রুতি, এনআরসি হোগা, সিএএ হোগা, এই হোগা নিয়েই মুশকিল। এই প্রতিশ্রুতি এখন বুমেরাং হয়ে আসছে। মতুয়া ভোট বাড়ছে, ছোট, মেজ, সেজ মতুয়া নেতারা ফিরছেন, বিজেপি ৩৫-এর পাঁচ বাদ দিয়ে তিনটে আসনও রাখতে পারবে তো?