খবর বলছে, গত ১২ এপ্রিলের পর থেকে তাঁরা গা ঢাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের হাতে আটক হলেন জিয়াউল শেখের দুই ছেলে। সঙ্গে আরও ১৩ জন। সোমবার মুর্শিদাবাদে অশান্তিতে অভিযুক্ত ওই ১৫ জনকে ওড়িশার ঝাড়সুগুড়া থেকে গ্রেফতার করে এনেছে এসটিএফ। ধুলিয়ান পুরসভার জাফরাবাদে বাবা-ছেলেকে খুনের ঘটনায় ‘মূল চক্রী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল জিয়াউলের দুই ছেলেকে। তাঁরাও রয়েছেন আটকদের মধ্যে। শনিবার জিয়াউলকে পাকড়াও করা হয় চোপড়া থেকে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকিদের খোঁজ মেলে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় মুর্শিদাবাদে অশান্তি শুরু হয়েছিল দিন কয়েক আগে। ওই আবহে খুন হন জাফরাবাদের বাসিন্দা হরগোবিন্দ দাস এবং চন্দন দাস। সম্পর্কে তাঁরা বাবা-ছেলে। পুলিশ সূত্রে খবর, কাজের জন্য মুর্শিদাবাদের কয়েক জন শ্রমিক ওড়িশার ঝাড়সুগুড়া যান। তাঁদের কয়েক জন ইদ উপলক্ষে বাড়ি ফিরেছিলেন। তবে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় বিক্ষোভ এবং অশান্তির পর তাঁরা আবার ওড়িশা চলে যান। এটা কি একটা কভার আপ? এর আড়ালে কি আসলে একটা বড়সড় প্ল্যানিং করা হয়েছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দেওয়ার? এই প্ল্যানিংয়ের কেন্দ্রবিন্দু কি ছিল ওড়িশা? এর ব্যাক আপ টিম কি এসেছিল ঝাড়খণ্ড থেকে? হ্যাঁ, আপাতত খুব পরিষ্কার জানা যাচ্ছে যে মুর্শিদাবাদের উসকে দেওয়া দাঙ্গা হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা নয়, হঠাৎই দুজন হিন্দুকে খুন করা হল আর দাঙ্গার আগুন ছড়িয়ে পড়ল, হিন্দু মানুষজন পালালেন, এতটাও সোজা নয় ঘটনাটা। আর সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, মুর্শিদাবাদের দাঙ্গা লাগাতে ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডে বসে প্ল্যানিং?
আসলে এই দাঙ্গা হওয়ার কথা ছিল রাজ্য জুড়ে, শুধু মুর্শিদাবাদে নয়, এই দাঙ্গা হওয়ার কথা ছিল রামনবমীর সময়েই, উত্তর থেকে দক্ষিণে এক দাঙ্গার আবহ হিন্দু খতরে মে হ্যায় কথাটাকে হিন্দু গরিষ্ঠাংশ মানুষের মনে গেঁথে দিত। মমতার রাজ্যে মুসলমানেরা সুরক্ষিত, কিন্তু হিন্দু খতরে মে হ্যায়, তাদের জান প্রাণ নিয়ে বাস করাই কষ্টকর হয়ে উঠেছে, অতএব হে হিন্দু ভাইয়েরা বোনেরা, অন্য কিচ্ছু না দেখে বিজেপিকে ভোট দিন।
আরও পড়ুন: Aajke | ব্রিগেডের মিটিং আর কমরেড সেলিমের মিথ্যে ভাষণ
কিন্তু ওই রামনবমীর আগেই রাজ্য জুড়ে এক ধরনের পালটা প্রচার ছিল, আমাদের মতো কিছু চ্যানেল, কিছু নেট দুনিয়ার স্বাধীন সাংবাদিকেরা বারবার জানাচ্ছিল দাঙ্গা করার লক্ষ্য নিয়েই বিজেপি আরএসএস মাঠে নেমেছে, রামনবমীর আড়ালে দাঙ্গা হবে। সেই প্রচারের ফলে, খানিকটা প্রশাসনিক বন্দোবস্তের ফলে রামনবমীতে তারা কিছু করে উঠতে পারেনি। কিন্তু তারা তারপরেই বেছে নিল মুর্শিদাবাদকে, যেখানে মুসলমান ভোট কংগ্রেস-তৃণমূলে বিভক্ত, সেইখানে যদি হিন্দু ভোটের বৃদ্ধি তাদেরকে কিছুটা সুবিধে করে দেয়। হ্যাঁ’ ঠিক এটাই তাদের লক্ষ্য ছিল আর সেই লক্ষ্য নিয়ে বেশ গুছিয়ে একটা প্ল্যান করা হয়েছিল সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে কিছু জায়গায় এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরি করানো যায়। এবং তারপরে সেই দাঙ্গার দোষ বাংলাদেশের উপরেও ঠেলে দেওয়া যাবে, ওপার থেকে এসে হিন্দুদের মেরে গেছে। শয়তানদেরও ভুল হয়, এই শয়তানদের মনেই নেই যে সীমান্তে বসে রয়েছে বিএসএফ, যা নাকি অমিত শাহের অধীনে। তাহলে? এখন জানা যাচ্ছে দাঙ্গা উসকানোর কাজ যারা করেছিল, তারা দুজন হিন্দুকে খুন করেই ফিরে গিয়েছিল ওড়িশাতে আর তারপরে বাকি কাজটা করেছিল ঝাড়খণ্ড থেকে আসা কিছু লোকজন। হ্যাঁ, এই পরিকল্পনার সবটাই সম্ভবত জানত দু’ একটা টেলিভিশন চ্যানেল আর রাজ্যের হিন্দুত্ববাদী নেতাদের মাথারা। আর তারা এটা করার সুবিধে পেয়ে গেলেন কিছু উত্তেজিত মুসলমান মানুষজনের নির্বুদ্ধিতার জন্য, দেশে ওয়াকফ বিল আনল কারা? কারা সেই বিলকে জোর করে পাশ করাল? তার বিরুদ্ধে আওয়াজ তো তোলাই উচিত, এ রাজ্যেও তোলা উচিত, কিন্তু সেই বিক্ষোভ যদি এক আগুন জ্বালো ভাঙচুরের দিকে এগোয় তাহলে তার সুবিধে কীভাবে নিতে হয় সেটাও তো জানে আরএসএস-বিজেপি। তারা নিয়েছে, তারা আঙুল তুলে বলেছে ওই দেখুন কারা জ্বালাচ্ছে আগুন, কারা ভাঙছে দোকানপাট। এবং শেষে সেই পথ ধরে এক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা যা তাদের ভোটব্যাঙ্কের জন্য জরুরি। এই ছকটা বুঝতে হবে রাজ্যের সংখ্যালঘু মানুষজনদের, বুঝতে হবে ধর্মনিরপেক্ষ মানুষদেরও। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, দুটো তথ্য এখন আমাদের সামনে, ১) ঝাড়খণ্ড থেকে হিন্দিভাষী হিন্দুরা মুসলমান সেজে দাঙ্গায় অংশ নিয়েছিল, দুজন হিন্দু হত্যার মূল অভিযুক্ত ধরা পড়েছে ওড়িশা থেকে, এটা কি বলে দেয় যে মুর্শিদাবাদের দাঙ্গার চক্রান্ত রচনা হয়েছিল রাজ্যের বাইরে, এই দাঙ্গা এক বিরাট ষড়যন্ত্রের ফল? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ইতিহাস পুরনো, দেশ বিভাজনের সময়ে কুৎসিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাংলার মানুষ দেখেছে। তারপর এক বিরাট সময় জুড়ে সেই দাঙ্গা হয়নি। হয়নি কারণ দেশে সাম্প্রদায়িকতা বিষ ছড়ানোর তেমন কোনও সংগঠন কল্কে পেত না। কিন্তু ৭৭-এ জনসংঘ জনতা পার্টিতে ঢুকে যাওয়ার পরে আর ১৯৯০-এ বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহের মন্ত্রিসভায় বিজেপির সমর্থন এবং শেষমেশ বাবরি মসজিদ ভাঙা থেকেই এই সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান। তারাই আজ বাংলার দখল নিতে চায়, তারাই আজ দাঙ্গা লাগিয়ে হিন্দু খতরে মে হ্যায় বলে চিৎকার করছে, তাদেরকে চিনুন, তাদেরকে মানুষের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিন। আবার বলতেই হবে, দাঙ্গা হিন্দুরা করে না, দাঙ্গা মুসলমানেরাও করে না, দাঙ্গা করে দাঙ্গাবাজেরা, তাদের রুখতে হবে।