ভোট আসছে। দেখতে দেখতে ফুরিয়ে গেল সময়। কড়া নাড়ছে ২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই বাঙালিয়ানা নিয়ে ঝড় তুলেছেন। বাংলা ভাষা ও বাঙালির অপমান নিয়ে, বাঙালি জাতিসত্ত্বার জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন গোটা দেশের সামনে। এছাড়াও, SIR ও CAA নিয়ে তৃণমূলের বিরোধী অবস্থান বাংলার মানুষের কাছে খুবই স্পষ্ট। আর কি বাকি রইল? মমতার উন্নয়ন। সব মিলিয়ে ২৬-এর বিধানসভা নিয়ে তৃণমূলের কপালে ভাঁজ পড়ছে না।
ভাঁজ না পড়ার আরও একটা বড় কারণ কিন্তু আছে। সেটা হল, পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দল। এরকমটা বলা হয়ে থাকে, গণতন্ত্রে বিরোধীরাই আসল শক্তি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী দলের অবস্থা ঠিক কী রকম? সেটা বলতে গেলে পুরনো একটা প্রবাদ বলতে হয় – ঋষিশ্রাদ্ধে, অজাযুদ্ধে, প্রভাতমেঘডম্বরে, দাম্পত্বকলহেচৈব, বহ্বারাম্ভে লঘুক্রিয়া। সোজা বাংলায় ঋষিদের শ্রাদ্ধে মন্ত্র পড়ার ধুম আছে, কিন্তু আর কিছু নেই। অজাযুদ্ধ মানে ২টো ছাগল লড়াই করার আগে অনেক লাফালাফি করে, তারপর ঠুক করে শিংয়ে একটু ঠোকা দেয়। সকালে মেঘ ডাকলে বৃষ্টি সেরকম হয়না। অর্থাত্ ঘটা করে শুরু হয়, কিন্তু ফলাফল খুবই নগণ্য। বঙ্গ বিজেপির এই দশা। শুভেন্দু আকাশ পাতাল এক করে চিত্কার করে চলেছেন। সুকান্ত মজুমদার রাস্তায় নেমে কাঁসর বাজাচ্ছেন, দুষ্টু লোকে যদিও বলছে ফাটা কাঁসি, কিন্তু বাজাচ্ছেন। বাকি ছিলেন রাজ্য সভাপতি শমীক। তা তিনিও শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা সরিয়ে রেখে শুভেন্দু অধিকারীর রাস্তায় হাঁটছেন। অর্থাত্ ব্যপক চিত্কার-চেঁচামেচি করছেন। এসআইআরে এক কোটি লোক বাদ যাবে, এসব আগাম ঘোষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তৃণমূল যে এসব চিকার চেচামেচি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না, তার কারণ হচ্ছে, বঙ্গ বিজেপির ফোঁপড়া চেহারাটা সবাই দেখতে পাচ্ছে। ঘরোয়া কোন্দলে ছিন্নভিন্ন একটা দল। তাকে নিয়ে কেই বা মাথা ঘামাবে?
এবার আসুন, কোন্দলের গল্পগুলো একটু ভালে করে নেড়েচেড়ে দেখা যাক। শমীক রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর ৪ মাস কেটে গেছে। কিন্তু এখনও নতুন রাজ্য কমিটির ঘোষণা হয়নি। এই ঘটনায় ক্ষোভ বাড়ছে, গিঁটের পর গিঁট লাগছে বঙ্গ বিজেপির কোর কমিটিতে। সেই জট কাটাতে এবার আরএসএসের দরজায় এসে দাড়িয়েছেন ইলেকশন কমিটির প্রধান ভূপেন্দ্র যাদব। সূত্রের খবর, শমীকের বাছাই করা নামের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না অনেকেই। অন্যদিকে সুকান্ত আর শুভেন্দু যে সব নাম পেশ করেছেন, সেই তালিকা কিন্তু সমর্থন পাচ্ছে দলের ভিতরেই। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে ভূপেন্দ্র যাদব খুব তাড়াতাড়ি নতুন কমিটি ঘোষণা করতে বলেছেন। এবার দেখার কারা বাদ যায়, আর শমীকের নেতৃত্বে কারাই বা লড়াই করে বিধানসভায়। শোনা যাচ্ছে, সত্তর থেকে আশি শতাংশ নতুন মুখ ঢুকবে কমিটিতে। কে কোন নেতার অনুগামী, সেটা কোনও কথাই নয়, যোগ্যতায় একমাত্র মাপকাঠি। কথা হিসেবে এসব শুনতে ভালই, কিন্তু এর ফলে বিজেপিতে নতুন করে ঝামেলা লাগবে না তো?
সত্যিটা হচ্ছে, ঘরোয়া কোন্দল নিয়ে বঙ্গ বিজেপি এতটাউ ব্যস্ত যে ভোটের কথাটা বোধহয় তারা ভুলেই গেছে। এই দেখুন না, ভোটের বাকি ছয়-সাত মাস। কিন্তু ক্ষমতা দখল নিয়ে, এসআইআর নিয়ে হুঙ্কার দেওয়া ছাড়া, বিজেপির আর কোনও কর্মসূচি কি চোখে পড়ছে? শুধু আপনি আমি নয়, চোখে পড়ছে না বাংলার ভোটের দায়িত্বে আসা কেন্দ্রীয় নেতাদেরও। রীতিমত বিরক্ত, হতাশ কেন্দ্রীয় নির্বচনী পর্যবেক্ষক ভূপেন্দ্র যাদব।
অন্যদিকে দেখুন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছেও কিন্তু বঙ্গ বিজেপির নেতাদের তেমন কোনও গুরত্ব নেই। বিহার ভোটে দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে বিজেপির নেতারা গিয়েছেন প্রচার করতে। কিন্তু বঙ্গ বিজেপির নেতাদের এখনও বিহারে ডাকা হয়নি, আদৌ হবে কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। ধরে নেওয়া যেতেই পারে, আর হবেও না ডাকা। কিন্তু কেন? হিন্দুহৃদয়সম্রাট শুভেন্দু অধিকারী, যিনি এত চিকার চেঁচামেচি করেন, তাকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কেন পাত্তা দিচ্ছে না? শমীক-সুকান্ত সব বাতিল? তবে কি সত্যিটা এই, মম্-তা দিদিকে গোটা ভারত চিনলেও, বঙ্গ বিজেপির এসব নেতাদের কেউই পাত্তা দেয়না। পশ্চিমবঙ্গের সীমানা পেরিয়ে ২০ কিলোমিটার এগোলেই এদের আর কোনও পরিচিতি নেই? এরা করবে ক্ষমতা দখল? আসুন দেখে নিই মানুষ কী বলছে?
তাহলে গল্পটা এই দাঁড়ালো, ঢাল নেই তরোয়াল নেই, নিধিরাম সর্দার হল বঙ্গ বিজেপি। তবু ছিল এসআইআর, কিন্তু ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন চালু হলে মতুয়া বাদ যাবে কত? তৃণমূলের উদয়ন গুহ তো সরাসরিই বলেছেন, বাংলাদেশের লোকেরা নাকি বলে আমাদের দেশের ছেলে নিশীথ ভারতে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছে। মন্ত্রী বওয়ার পর তাঁর বাংলাদেশের বাড়িতে নাকি বাজিও ফেটেছিল। পাশাপাশি, বিজেপির অসীম সরকারের মতো নেতারা বলছেন, একজন মতুয়ার নাম বাদ গেলেও দলকে ছেড়ে দেওয়া হবেনা। এরা করবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা? কাকে দিয়েছো রাজার থুড়ি বিরোধীর পার্ট? ঘর সামলাতেই পারেনা, গোটা রাজ্য সামলাবে?