নতুন বছরের শুরুতেই ওমিক্রনের হাতে ধরে যে ভাবে অতিমারির ভয়াবহতার কালো মেঘ ঢেকেছে শীতকালের সুখের মুহূর্তগুলিকে সেখানে আরও বেশি করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে বছরের এই সময়ের একের পর এক উত্সবের দিনগুলি। আজ যেমন লোহরি। প্রথা অনুযায়ী লোহরির এই দীর্ঘতম রাত দিয়েই শীতের শেষ। হিন্দু ক্যালেন্ডারের মতে এর পর শুরু হচ্ছে মাঘ মাস।
উত্তর ভারতের এই উত্সব পালন করা হয় মকর সংক্রান্তি ঠিক একদিন আগে। মূলত পঞ্জাবে আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হয় লোহরি বা নবান্ন উত্সব। তবে পঞ্জাবের পাশাপাশি হিমাচল প্রদেশ, হরিয়াণা, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ও জম্মুতে। শস্য উত্পাদনের বিভিন্ন পর্যায় যেসব অনুষ্ঠান ও উত্সব পালিত হয় তার অন্যতম এটি। শীতকালীন রবি শস্যের ফসল কাটার উত্সব লোহরির মূল আকর্ষণ হল নতুন শস্য দিয়ে তৈরি নানা রকমের ঐতিহ্যবাহী পদ। সঙ্গে অবশ্যই আত্মীয়স্বজন-বন্ধু বান্ধব নিয়ে নানা রকমের অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে এই দিনটি উদযাপন করা হয়।
উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে এদিন ফসল কাটার পরে উত্সবাগ্নি জ্বালিয়ে নতুন শস্যের পুজো করা হয়। এই পুজো উত্সর্গ করা হয় অগ্নিদেবতা ও সূর্য দেবতাকে। পুজো শেষে এই আগুনের চারপাশে নাচ গান করে উত্সবের উদযাপন করা হয়। লোহরি উপলক্ষ্যে আখের গুড় দিয়ে নানারকমের পদ বানানো হয়। মক্কে দি রোটি, সরসোন দা সাগ, মুলো, শাক, শর্ষের শাক দিয়ে রকমারি পদে রান্না হল এই উত্সবের মূল আকর্ষণ। এছাড়াও, তিল, গুঁড়, চাল ও বাদমের তৈরি নানা রকমের মিষ্টি খাবারও বানানো হয়। বাচ্চাদের জন্য রাখা হয় লোহরি লুট। এদিন বাড়ির কচি কাচাদের তিল, গুঁড়, চাল ও বাদমের তৈরি নানা রকমের মিষ্টি খাবার ও টাকা পয়সা উপহার হিসেবে দেন বাড়ির বড়রা।
ঐতিহ্যের পাশাপাশি বছরের এই সময়টা ঋতু পরিবর্তনের কারনে নানা রকম জীবানু সংক্রমণের শিকার হন অনেকেই। তাই প্রচণ্ড শীতে এই গুঁড় ও তিলের তৈরি খাবার শরীর গরম রাখে। এগুলিতে রয়েছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম সহ অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান। এগুলি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।