কলকাতা: অতিমারি আবহে রাজ্যে আট দফায় বিধানসভা নির্বাচন (KMC Election 2021) করতে গিয়ে কী ভায়বহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা কারও অজানা নয়। তৃতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠেছিল, বাংলার করোনা (Corona) পরিস্থিতি সামাল দেওয়া। এ নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোর কম হয়নি। রাজ্যের বেলাগাম পরিস্থিতির জন্য জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে কাঠগড়ায় তুলেছিল শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। এ বার কলকাতায় পুরভোটের আগেও কিন্তু করোনার সিঁদুরে মেঘ দেখা দিয়েছে।
রাজ্যের পাঠানো রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে, নবান্নকে ইতিমধ্যে সতর্ক করেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। কেন্দ্রের এই উদ্বেগের কারণ কলকাতার পজিটিভি হার। দু-সপ্তাহের মধ্যে করোনার পজিটিভিটি হার বেড়ে হয়েছে ৫.৮ শতাংশ। কেন্দ্র মনে করছে, এটা অ্যালার্মিং। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার আগেই লাগাম পরাতে কী কী করণীয়, তা ফের মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ দু-বছরের অভিজ্ঞতায় রাজ্য প্রশাসনেরও তা অজানা নয়। কিন্তু, কলকাতা পুরভোট ঘিরে প্রচারের তুঙ্গ মুহূর্তে কোভিড বিধি কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তা নিয়ে কিন্তু নানা মহল থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। পুরভোট পরবর্তী মহানগরীতে করোনা সংক্রমণের রেখাচিত্র ফের ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আশঙ্কাও তারা উড়িয়ে দিতে পারছে না।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ কলকাতায় করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে ইতিমধ্যে চিঠি পাঠিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে। শুধু দ্বিবেদী নন, ১০ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যসচিব-সহ প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের কাছে তাঁর চিঠি গিয়েছে। কেন্দ্রের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১০ রাজ্যের ২৭টি জেলায় দু-সপ্তাহ কোভিড পজিটিভিটি রেট উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তাই কেন্দ্রের তরফে সতর্ক করতেই রাজেশ ভূষণের এই চিঠি।
চিঠিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব লিখেছেন, সামগ্রিক ভাবে দেশে কোভিড কেস নিম্নমুখী। কিন্তু, এখনও আমরা অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সংকটজনক অবস্থায় রয়েছি। তিন রাজ্যের আট জেলায় ১০ শতাংশের বেশি পজিটিভিটির হার। আবার ৭টি রাজ্যের ১৯টি জেলায় পজিটিভিটির হার ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে। তার মধ্যে রয়েছে কলকাতাও। কেন্দ্র মনে করছে, এই ২৭টি জেলায় পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখা উচিত।
কেন্দ্রের রিপোর্ট অনুসারে, ১০ শতাংশের উপর পজিটিভিটি হার রয়েছে মিজোরামের ৫টি জেলায়, কেরালার ২টি জেলায় ও সিকিমের একটি জেলায়।
৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে পজিটিভিটি রেট- কেরালায় এমন জেলার সংখ্যা ৯টি। বঙ্গে শুধুমাত্র কলকাতায় পজিটিভিটি হার ৫.৩৮ শতাংশ। মহানগরীতে গত দু-সপ্তাহে ২৮ হাজার ৫৩৮টি নমুনার কোভিড টেস্ট হয়েছে। তার মধ্যে পজিটিভিটির হার ৫.৩৮ শতাংশ।
পজিটিভিটি হারে লাগাম পরাতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক উল্লিখিত ২৭টি জেলায় আগের মতোই সংক্রমণ এলাকা চিহ্নিত করে কন্টেইমেন্ট জোন করার পরামর্শ দিয়েছে। নৈশকালীন কারফিউ জারি করার প্রস্তাবও রয়েছে। বিয়েবাড়ি ও শ্রাদ্ধবাড়িতে নিমন্ত্রিতের সংখ্যাও কড়া ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন একটাই, পুরভোটের আবহে আদৌ কি রাজ্য সরকারের পক্ষে কোভিড বিধি মেনে চলা সম্ভব? অতিমারির কারণে রাজ্য নির্বাচন কমিশন যদিও একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। কিন্তু পুরভোট শেষ হওয়ার আগে কন্টেনমেন্ট জোন চিহ্নিত করে সরকার কি পারবে কোভিডের শৃঙ্খল ভাঙতে। পুরভোট মেটার কিছু দিনের মধ্যেই ছবিটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।