কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক : ‘ইংরেজ তুমি ভারত ছাড়ো।’ মুখে এই শ্লোগানের সাথে একহাতে শঙ্খ ও অন্য হাতে তেরঙ্গা পতাকা। এভাবেই ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেছিলেন ‘গান্ধী বুড়ি’ অর্থাৎ বীরঙ্গনা স্বাধীনতা সংগ্রামী মাতঙ্গিনী হাজরা। তাঁর ১৫২ তম জন্ম দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
না জানা ইতিহাসের গল্প
গ্রামের নাম ‘পিছাবুনি’। গাড়িতে বা বাসে দীঘা যাওয়ার পথে খেয়াল করলে দেখা যাবে একটা অদ্ভুত নামের গ্রামের নাম ‘পিছাবুনি’। এই পিছাবুনির নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসের এক কাহানি।
গ্রামের এই অদ্ভূত নামের ইতিহাস জানতে পিছিয়ে যেতে হবে আজ থেকে ৭৯ বছর পিছনে (১৯৪২ সালের ২৯ শেষ সেপ্টেম্বর)। ঘড়ির কাঁটায় সময় ঠিক বিকাল ৩ টে। দেশকে পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত করতে স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে হাজার হাজার ভারতীয় মিছিল এগিয়ে চলেছে তমলুক থানা ও আদালতের দিকে।
মহত্মা গান্ধীর ডাকে সারা দেশজুড়ে চলছিল অহিংস আন্দোলন। এই আন্দোলনকে আখ্যা দেয়া হয়েছিল Quit India বা ভারত ছাড়ো আন্দোলন। ইংরেজ শাসকরা তমলুক শহরের প্রধান প্রবেশপথের চারদিকে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করেছিল। জনতার সেই প্রতিবাদের সেই মিছিল আটকানোর জন্য । মিছিলে জনতার মুখে স্লোগান ছিল ইংরেজ ভারত ছাড়ো’, ‘বন্দেমাতরম’।
আরও পড়ুন – হাল ছেড়ো না বন্ধু! পঁচাশিতে স্নাতক হলেন প্যলেস্তাইনের বৃদ্ধা
হাজার হাজার জনতার কন্ঠে ইংরেজ ভারত ছাড়ো শ্লোগানের সাথে র্নিরস্ত্র মিছিলটি প্রথমে বৃটিশ পুলিশের রাইফেল ও বেয়নেটের মুখোমুখি হয় । মিছিলে সবার আগে ছিলেন মাতঙ্গিনী হাজরা যাকে সম্মান করে গ্রামের লোকজন বলতো “গান্ধী বুড়ি” ।
হাজার হাজার মানুষের প্রতিবাদী শ্লোগান ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল ইংরেজ শাসকদের মনে। সেই সময় মিছিলকে এগোতে না দেওয়ার নির্দেশ ইংরেজ পুলিশ সুপারের ‘stop’ এবং ‘go back’ ঘোষণা শুনে ইংরাজী না জানা মাতঙ্গিনী হাজরা অন্তত এটুকু বুঝেছিলেন যে ইংরেজ সাহেব তাঁদের পিছিয়ে যেতে বলছে।
ইংরেজ সাহেবের সেই আদেশ অমান্য করে মিছিল এগিয়ে চলতেই চললো গুলি। মাতঙ্গিনীর দুহাতে গুলি লাগা অবস্থাতেও তেরঙ্গা ধরে চীৎকার করে বলেছিলেন ‘বন্দেমাতরম’, ইংরেজ ভারত ছাড়ো।
আরও পড়ুন – চিঠি’র স্মৃতিকে ফিরিয়ে দিতে ডাক-থিমেই মাতৃবন্দনা
ইংরেজ পুলিশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে স্থানীয় ভাষায় বলেছিলেন ‘পিছাবুনি’, যার অর্থ পিছিয়ে যাবো না । ‘পিছাবুনি’ এই কথা বলতে বলতে মাতঙ্গিনী এগোতে থাকেন যতক্ষণ না পর্যন্ত বৃটিশ পুলিশের বুলেট তাঁর কপাল ফুঁড়ে বেরিয়ে যায় । মাটিতে লুটিয়ে পড়েও দেশের তেরঙ্গা পতাকা তুলে রাখেন তিনি। মাটিতে পড়তে দেননি। শহীদ হন মেদিনীপুরের সেই গান্ধী বুড়ি মাতঙ্গিনী হাজরা।
গান্ধীবুড়ির মুখের এই শেষ উক্তি পিছাবুনি অনুসারে গ্রামের লোকেরা তাদের গ্রামের নাম বদলে রাখেন ‘পিছাবুনি’। স্থানীয়দের মুখে চালু থাকলেও এই ইতিহাস কোন পাঠ্য বইতে হয়তো পাওয়া যাবে না। গান্ধী বুড়ি মাতঙ্গিনী হাজরার ১৫২ তম জন্ম দিবসে রইলো আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি ।