দুর্গা পুজো মানেই যেমন ছিল কুমারটুলির ব্যস্ততা তেমনই শহরের ঢাকিদের আসার ব্যস্ততা। সেই উপলক্ষে অজয় নদীর পাড়ে কাশবনে বসেছিল ঢাকের আসর। ঢাকিদের নানান বোলে ভেসে উঠল নদীর চর, সেই সঙ্গে বিশেষ সম্মান প্রদান করা হলো ঢাকিদের। একটি বিশেষ ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের ৫০বছর পূর্তি উপলক্ষে গ্রাম বাংলার ঢাকিদের নিয়ে এমন এক মন ভরানো আসর হয়ে গেল অজয় নদীর পাড়ে।
আরও পড়ুন: অতিমারিতেও বোল তুলতে মরিয়া ঢাকিরা
পালক লাগানো ঢাকের সঙ্গে ছিল বাংলার ঢোল, কাঁসরঘন্টা আর শঙ্খধ্বনি। সব মিলিয়ে অজয়ের পারে তখন জমজমাট পুজোর আমেজ। ঢাকিদের দলে ছিলেন পরেশ দাস, অনিল দাস,রঞ্জিত দাস,সুনীল দাস এবং শ্যামল দাস। শঙ্খ বাজালেন জ্যোৎস্না খান্দার। সঙ্গে ছিল বীরভূমের ‘ছিনাথ বহুরূপী’ সংস্থার শিল্পীরা। শিবের বেশে ছিলেন শিল্পী সুবল দাস বৈরাগ্য। দুর্গা সেজেছিলেন ধনেশ্বর দাস বৈরাগ্য। ঢাকের তালে বহুরূপী শিল্পীদের নৃত্য গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য মনে করিয়ে দিয়েছিল। বিশেষ ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শিল্পীদের সম্মান জানান অরিত্র রায়চৌধুরী। পন্ডিত প্রদ্যুৎ মুখোপাধ্যায় সঙ্গীত পরিচালনায় ঢাকিদের নিয়ে একটি মিউজিক ভিডিও তৈরি করা হয়। এটি পরিকল্পনা করেন সুদীপ্ত চন্দ এবং নির্দেশনায় ছিলেন সৌম্যদীপ সরকার ও অরুণ হালদার। করোনাকালে ঢাকিদের কাজের অবস্থা অত্যন্ত সঙ্গিন। এই ভিডিও অ্যালবামের মাধ্যমে ঢাকি শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানোর এক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই বাদ্যযন্ত্রের ঐতিহ্যের ধারক এবং বাহক যাঁরা তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এই অনুষ্ঠান করা হয়েছিল।
অন্য একটি প্রজেক্টে দেশের নানা প্রান্তের লোক সঙ্গীতের মিশেলে তৈরি হয়েছে ‘আর্থ’। রাজস্থানি লোকগীতি থেকে বাংলার মেঠো সুর কিংবা কাশ্মীরি লোকসংগীত থেকে পাঞ্জাবের লোকসুর সবই রয়েছে এই মিশেল লোক সংগীতের অ্যালবামে। গানের অ্যালবাম প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পন্ডিত তন্ময় বোস, শিল্পী সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ও অন্যান্যরা।
আরও পড়ুন:‘পৃথিবী’ গাইবে ‘শহরের গান’
সোমলতা আচার্য্য চৌধুরীর কন্ঠে কাশ্মীরের লোকসংগীত ‘রোশেওল্লা মাইয়ানে দিলবারো’শ্রোতাদের কাছে যথেষ্ট আকর্ষণীয় হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে পৃথিবী বাংলা ব্যান্ড এর কৌশিকী চক্রবর্তীর গাওয়া লালনের গানে ‘কৃষ্ণ প্রেমে পোড়া দেহ’। রাজস্থানের লোকসংগীত চৌধুরী অনুষ্কা পাত্রের কন্ঠে যথেষ্ট মানানসই। অর্কদীপ মিশ্রের কন্ঠে বিহুর সুর বেশ শ্রুতিমধুর। এছাড়াও রয়েছে অনুশ্রী গুপ্তর পাঞ্জাবি লোকসংগীত। সৌম্য মুর্শিদাবাদের কন্ঠে নাইহারওয়া কবিরের দোঁহা। রয়েছে মারাঠি লোকসংগীত রিতা টিকাদারের কন্ঠে। তা ছাড়াও থাকছে শ্বেতা মোহন এর কন্ঠে কেরালার বিখ্যাত ফোক গান পল্লীভালু ভাদ্রভাত্তকম। বিবিধের মাঝে এই সুরের মিলন নিয়ে বেশ আশাবাদী পন্ডিত তনময় বোস জানালেন অভিনব এই প্রজেক্ট আশাকরি শ্রোতাদের ভাল লাগবে। গান গুলির মধ্যে দেশের নানা প্রান্তের স্বাদ রয়েছে ।