নয়াদিল্লি: ফিনসেন ফাইলস, প্যারাডাইস পেপারস, পানামা পেপারস, লাক্সলিক্সের পর এ বার ‘প্যান্ডোরা পেপার্স’। ফাঁস হল আরও একটি আর্থিক কেলেঙ্কারি। যা নিয়ে তোলপাড় বিশ্ব। আতসকাচের তলায় বিশ্বের তাবড় নেতা-মন্ত্রী, সেলিব্রিটিদের সম্পত্তি। অভিযোগ, নিজের দেশের কর-ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে বিশ্বের প্রভাবশালীরা ভিনদেশে গোপন সম্পদ সঞ্চিত রেখেছেন। ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও তাঁর স্ত্রী, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, শচিন তেন্ডুলকর- কে নেই সেই তালিকায়।
বিশ্ব নেতা, রাজনীতিবিদ ও ধনকুবদের গোপন সম্পদ এবং লেনদেনের নথি নিয়ে তদন্তমূলক অনুসন্ধান চালিয়েছিল সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস’ (আইসিআইজে)। বিশ্বের নানা দেশের ৬০০-র বেশি সাংবাদিক এই বিরাট অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। বিশ্বের মোট ১৪টি আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থার থেকে এক কোটি ১৯ লক্ষ নথি প্রকাশ্যে আনেন তাঁরা। তাতেই খোঁজ মিলেছে কোটি কোটি টাকার বেনামি সম্পত্তির।
আরও পড়ুন: রা-হুল: দেশের মানুষের টাকায় তৈরি সত্তর বছরের সম্পদ বেচে দিচ্ছে মোদি সরকার
ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, পানামা, বেলিজ, সাইপ্রাস, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ডে মতো দেশে প্রভাবশালীরা যে অর্থ বা সম্পদের লেনদেন গোপনে করেছেন, সেই সব তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। কারও বিরুদ্ধে বেনামি সম্পত্তি, তো কারও নামে দুর্নীতি, আবার কারও বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ। কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগও এসেছে। এইসব সম্পত্তি কেনার পেছনে ৯৫,০০০ অফসোর ফার্মের মালিকদের নথি ফাঁস হয়েছে।
প্রথমেই বলতে হয়, জর্ডনের রাজার কথা। দেশের করব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে গোপনে ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মালিবুতে ১০ কোটি ডলারের সম্পদ তৈরি করেছেন তিনি। ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও তাঁর স্ত্রী লন্ডনে একটি অফিস কেনার সময় তিন লক্ষ ১২ হাজার পাউন্ড কর ফাঁকি দিয়েছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের গোপন সম্পত্তির হদিস মিলেছে মোনাকোয়। চেক প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেজ বাবিজ আবার বেনামে ১২ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করেছেন।
আরও পড়ুন: নেই নিজস্ব গাড়ি, এক বছরে সম্পত্তি বৃদ্ধি ২২ লক্ষ, মোদির সম্পত্তির পরিমাণ কত?
শুধু বিদেশ নয়, দেশের কিছু ধনকুবের ও প্রভাবশালীর নামও ফাঁস হয়েছে। নাম রয়েছেন অনিল আম্বানি, নীরব মোদি এবং শচীন তেন্ডুলকরের। ব্রিটেনের একটি আদালতে নিজেকে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করা অনিলের ১৮টি অ্যাসেট হোল্ডিং কোম্পানির খোঁজ মিলেছে। পঞ্জাব ন্যাশানাল ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত নীরব মোদির বোন ভারত থেকে পালানোর মাত্র এক মাস আগে একটি ট্রাস্ট স্থাপন করেছিলেন।
ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে একটি সংস্থার ডিরেক্টর পদে রয়েছেন শচীন এবং তাঁর স্ত্রী অঞ্জলি। সংস্থায় ৯টি শেয়ার রয়েছে শচীনের এবং ১৪টি শেয়ার রয়েছে অঞ্জলি তেণ্ডুলকরের। যার মোট মূল্য প্রায় ১৮ কোটি। ২০১৬ সাল থেকে এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তাঁরা। শচীনের অ্যাটর্নির দাবি, শচীনের যাবতীয় বিনিয়োগ বৈধ। আয়কর বিভাগের কাছে সমস্ত সম্পত্তির হিসেব রয়েছে।
আরও পড়ুন: মোদির আমলে আর্থিক কেলেঙ্কারির নয়া সংযোজন, ফের কোপ সাধারণের সঞ্চয়ে