পুরুলিয়া : পুরুলিয়ার মনবাজার মহকুমার বরাবাজার থানার লটপদা অঞ্চল। এই অঞ্চলের প্রায় অধিকাংশ জমি পাথুরে। লটপদা অঞ্চলের ১০টি গ্রাম জুড়ে সরকারের কয়েকশো একর খাস জমি পড়ে রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে বনদফতরে জমি। প্রায় দুই দশক ধরে কিছু পাথর মাফিয়া বিস্ফোরণের মাধ্যমে পাথর ফাটিয়ে ক্রেসার তৈরি করছে। সেই অবৈধ ক্রেসার বাড়ি তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং জেলার বিভিন্ন প্রান্ত সহ ঝাড়খন্ডের বিভিন্ন জেলায় সরকারি চালান ছাড়াই চড়া দামে বিক্রি করছে মাফিয়ারা। এর ফলে সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন : পুরুলিয়ায়’সহজে টিকাকরণ’
বরাবাজার ব্লকের লটপদা গ্রাম পঞ্চায়েতের তালাডি, সরবেরিয়া, ধারগ্রাম, সহ একাধিক গ্রাম জুড়ে বেআইনী খাদানে ডিনামাইট ফাটিয়ে এই অবৈধ কারবার চলছে। অথচ ব্লক প্রশাসনের কাছে কোন খবর নেই। বাম আমল থেকেই এই পাথর মাফিয়ারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তখন স্থানীয় যুবকরা এইসব পাথর খাদানে কাজের সুযোগ পেতেন। কিন্তু এখন উন্নত মানের মেশিনের সাহায্যে পাথর মাফিয়ারা পাথর কাটার কাজ করছে। ফলে স্থানীয় যুবকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এছাড়াও এই পাথরের ধুলো থেকে তাঁরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
গত ২০১৯ সালে লটপদা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রীনা কিস্কু বলেন, “এলাকা ছাড়ার জন্য কিছু লোক চাপ দিচ্ছে। পাথর খাদান এর ফলে বাড়ির আশপাশে দূষণ ছড়াচ্ছে। আমার পঞ্চায়েত থেকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিডিও অনুমতি দিয়েছে। আমি লিখিত ভাবে বরাবাজার বিডিওকে এই বেআইনী খাদান বন্ধ করার জন্য জানিয়েছি। কিন্তু অভিযোগের ভিত্তিতে কোনও ব্যবস্থায় নেওয়া হয়নি। বরাবাজার বিডিও এই বিষয়ে কোনও কথা বলতে চাননি।”
আরও পড়ুন : অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ? বর্ষায় ঘুরে আসুন পুরুলিয়ায়
বরাবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রতুল মাহাতো স্থানীয় মানুষের কাজের দোহাই দিলেও বেআইনি খাদানের বিরূদ্ধে কোনও কথা বলতে অস্বীকার করেন। তিনি সরকারী অনুমতি নিয়ে খাদান চালানো সুকৃতি পেবেলসের বিরূদ্ধে অভিযোগ তোলেন যে, কী ভাবে জেলা থেকে তাঁকে এই এলাকায় খননকার্য চালানোর অনুমতি দেওয়া হল।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, আগে এইসব গ্রামের বেকার যুবকরা বেআইনি খাদানে কাজের সুযোগ পেতেন। কিন্তু এখন অত্যাধুনিক মেশিন ব্যবহার করে ক্রেসারের পাথর ভাঙ্গার কাজ চলছে। ফলে স্থানীয় যুবকরা তাঁদের কাজ হারিয়েছেন। ব্লক প্রশাসন এই বেআইনি কারবার বন্ধ করার কথা বললেও তা কেবল কথার কথাই হয়ে থেকেছে। ওই এলাকায় একমাত্র সরকারি অনুমতি প্রাপ্ত সুকৃতি পেবেলসের মালিক গৌরাঙ্গ মহাপাত্র বলেন, “আমি এখানে এক বছর আগে থাকতে কাজ শুরু করেছি। আশেপাশে বেআইনি খাদান থেকে যে ভাবে বিস্ফোর করে বাড়তি পাথর তোলা হচ্ছে, তাতে সরকারের প্রায় ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তেমন আমারও এই এক বছরে ১ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে।”
আরও পড়ুন : বালি খাদান দুর্নীতি নিয়ে রুষ্ট মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী
মুখ্যমন্ত্রী এইসব বেআইনি খাদান থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ করার জন্য একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ মতো জেলায় জেলায় টাস্কফোর্স গঠিত হয় কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এই এলাকায় এখনও পর্যন্ত টাস্ক ফোর্সের কোনও সদস্যই আসেননি। ডি এল এন্ড এল আর ও সুপ্রিয় দাস বলেন, টাক্স ফোর্স তৈরি হয়ে গেছে। জেলার এসডিওদের নিয়ে বৈঠকও হয়েছে। তাদের কাছে রিপোর্ট আকারে জানতে চাওয়া হয়েছে, কোথায় কত বেআইনি খাদান আছে। রিপোর্ট হাতে এলেই খুব তাড়াতাড়ি অভিযান চালিয়ে এইসব বেআইনি খাদান বন্ধ করা হবে। এর আগেও গত জুলাই মাসে এই সব বেআইনি খাদানের বিরুদ্ধে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও জেলা প্রশাসনের একটি দল অভিযান চালিয়ে ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সেই অভিযান বন্ধ হয়ে যায়।