পুরুলিয়া: টানা লকডাউনে ঘরে বসে? হাফ ছেড়ে বাঁচতে কাছাকাছি কোথাও ঘুরতে যেতে মন চাইছে৷ তাহলে টুক করে ঘুরে আসুন পুরুলিয়া থেকে৷ কাছেপিঠে দু-তিনদিনের জন্য ঘুরতে যাওয়ার অন্যতম সেরা ডেস্টিনেশন৷ তার উপর এখন বর্ষাকাল৷ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পুরুলিয়ার রূপ এই সময় যেন ঠিকরে বেরিয়ে পড়ে৷ পুরুলিয়ায় গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয় কম৷ এই জেলায় সংক্রমণ এখন তলানিতে৷ তাই বলে মাস্ক ছাড়া ঘুরে বেড়ানোর বোকামি না করাই ভালো৷ করোনাবিধি মেনে চলা বাঞ্ছনীয়৷
পুরুলিয়া বলতে ভ্রমণপিপাসুদের মনে প্রথমেই বড়ন্তী, জয়চণ্ডী ভেসে ওঠে৷ চোখের সামনে ভাসে ছোটো ছোটো টিলা আর ঘন জঙ্গলে ঢেউ খেলানো পাহাড়৷ বৈচিত্র্যে ভরা পুরুলিয়ায় বর্ষা যেন এক অন্যরূপ মেলে ধরে৷ বৃষ্টির পর পুরুলিয়ার সৌন্দর্যে চোখ জুড়িয়ে যায়৷ চারিদিক সবুজ আর সবুজ৷ মনে হবে সবুজের আভা বাড়িয়ে দিয়েছে প্রকৃতি৷ আর সবুজ উপত্যকায় হাতছানি দেয় অ্যাডভেঞ্চারের নেশা৷
যেখানে জঙ্গল সেখানে বন্যপ্রাণী৷ গোল্ডেন জ্যাকেল, কাঁকর হরিণ, হায়না, বুনো হাতির দল ঘুরে বেড়ায় জঙ্গলের ভেতর৷ কপাল ভালো থাকলে বন্যপ্রাণীর সঙ্গে পর্যটকদের দেখা হয়ে যেতে পারে৷ অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় বাঙালি রাস্তার দু’পাশে থাকা শাল, শিমুল, পলাশের জঙ্গলের বুক চিড়ে লং ড্রাইভে চলে যেতে পারবেন৷ ট্রেকিং করা বারণ থাকলেও পাহাড় জঙ্গলের গ্রামীণ রাস্তায় গাইডকে সঙ্গী করে জঙ্গল ভ্রমণ হতেই পারে৷ আর তখন যদি পাহাড় থেকে ঝেপে বৃষ্টি নামে তাহলে ছাতা মাথায় কোনও মোড়ে এসে চায়ের চুমুক বা শালপাতায় তেলেভাজার রসনাও মেটাতে পারবেনl মিলবে গরম গরম জিলাপিও৷ তবে সঙ্গে বড় ছাতা বা রেনকোট রাখলেই ভালো৷ না হলে সবটাই মাটি৷ পাহাড়ের ওপর ভেসে বেড়ানো কালো মেঘে কখন যে ঝেপে বৃষ্টি নামবে বোঝা বড় মুশকিল৷
আরও পড়ুন: এখনই পিছু ছাড়ছে না, ফের ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রাজ্যজুড়ে
গত কয়েক বছর ধরেই ‘মনসুন ট্যুরিজম’কে তুলে ধরছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন৷ গতবছর কোভিড আবহে দীর্ঘ লকডাউন থাকায় পর্যটকদের আসা বন্ধ ছিল৷ কিন্তু এবার পুরুলিয়ার ছবিটা একেবারে আলাদা৷ বিধিনিষেধ থাকলেও কোভিড সংক্রমণের হার একেবারে নীচে নেমে এসেছে৷ বলা যেতে পারে, পুরুলিয়া এখন কোভিড ফ্রি৷ তাই পর্যটনশিল্পের উপর ভর করে আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পুরুলিয়া৷ জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় গড়পঞ্চকোট ইকো ট্যুরিজম পরিদর্শন করে বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী এই এলাকার পরিচিতির জন্য মন্দিরগুলিকে পুরনো মন্দিরের অবস্থায় নিয়ে যেতে হবে৷ মন্দিরের নাম লিখে পর্যটকদের পরিচয় করানোর দরকার। আমরা নিতুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতিকে বলেছি একটি সাজেশন খাতা রাখার ব্যবস্থা করতে৷ তাহলে সেই মতো আমাদের ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হবে৷’
পুরুলিয়ার এই প্রাকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে কলকাতা থেকে মোটর সাইকেলে করে উড়ান রাইডার নামে একটি ক্লাবের ১৬ জনের মহিলা সদস্যরা গড়পঞ্চকোট পাহাড়ের ইকো ট্যুরিজম এসেছেন৷ তাদেরই এক সদস্য সুকৃতি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আগের থেকে পুরুলিয়ার পরিবর্তন হয়েছে৷ বিশেষ করে রাস্তা খুব ভালো হয়েছে। তবে পর্যটকদের জন্যে থাকার ব্যবস্থা বাড়ানো দরকার৷ সারা বছরই পর্যটকরা পুরুলিয়ায় আসছে৷ ইচ্ছা থাকলেও তাঁরা থাকতে পারেন না৷’ কলকাতার বেহালার বাসিন্দা অশোক কান্তি ঘোষ বলেন, ‘বাড়িতে বসে বসে হাপিয়ে গিয়েছি৷ তাই ভাবলাম প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পুরুলিয়া থেকে ঘুরে আসি৷ খুব সুন্দর জায়গা৷ সবুজ প্রকৃতি দারুণ লাগছে। আগের থেকে অনেক উন্নয়ন হয়েছে, রিসোর্টগুলো দেখে ভালো লাগছে৷’
আরও পড়ুন: কীভাবে নেবেন বর্ষার জলে বেহাল জুতোর যত্ন?
পুরুলিয়ার সুখ-দুঃখ, জীবন কথা শোনা যায় ঝুমুর গানে৷ সঙ্গে ছৌ-র পদধ্বনি তো রয়েইছে৷ পাহাড় ছুঁয়ে থাকা কটেজের বারান্দায় বসেই দেখতে পারবেন ছৌ নাচ৷ লোকসংস্কৃতি, প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে আছে ইতিহাস রাজরাজাদের গল্পও৷ পঞ্চকোট রাজবংশের স্থাপত্য, জৈনদের পুরাকীর্তি৷ তাই বৈচিত্রে ভরা পুরুলিয়াতে হারিয়ে যান বর্ষাতেই৷