কলকাতা: কলকাতা টিভি ডিজিটালের আইনি বিশ্লেষণ সঠিক হল। ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত বেকসুর খালাস পেল কলকাতা হাইকোর্টে। এই নির্দেশ দিলেন বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। তাঁর নির্দেশ, অযথা সাজা ভোগ করার জন্য তাঁর জীবনে যে দাগ পড়ল, তাতে তিনি ক্ষতিপূরণের অধিকারী। তিনি ইচ্ছা করলে রাজ্য সরকার বা নিম্ন আদালতের কাছে এই ক্ষতিপূরণের আবেদন জানাতে পারেন।
দক্ষিণ দিনাজপুরে গৃহশিক্ষকতার যুক্ত ছিলেন নিত্যানন্দ (কাল্পনিক নাম)। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি বহুবার শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন অনিন্দিতার (কাল্পনিক নাম) সঙ্গে। পরবর্তীকালে ওই নাবালিকা গর্ভবতী হয়ে পড়ে। ওই গৃহশিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। নাবালিকা এক সন্তানের জন্ম দেন। নিম্ন আদালত ওই ব্যক্তিকে সাত বছরের জেল হেফাজতের সাজা দেন। সেই সাজাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানান ওই ব্যক্তি।
মামলার শুনানি চলাকালীন ওই ব্যক্তির আইনজীবী নীলাদ্রি শেখর ঘোষ শিশু ও মহিলার ডিএনএ টেস্টের দাবি তোলেন। নিম্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন ডিএনএ টেস্ট করানো হয় না। কলকাতা হাইকোর্ট ওই মহিলাকে ব্যক্তিগত হাজিরা নির্দেশ দেয়। মহিলা আদালতে জানান, তিনি ইতিমধ্যে অন্য একজনকে বিবাহ করেছেন এবং সন্তানকে নিয়ে তার সঙ্গেই রয়েছেন। তিনি ডিএনএ টেস্ট করাতে রাজি নন।
আরও পড়ুন: ‘ধর্ষক’ বাবা চাইলেও মা চান না সন্তানের ডিএনএ টেস্ট, বিস্মিত আদালত
আবেদনকারীর আইনজীবী নীলাদ্রি শেখর ঘোষ আদালতকে জানান, ওই সন্তানের বাবা অভিযুক্ত ব্যক্তি নয়। তাহলে ডিএনএ টেস্টের আগে করা উচিত ছিল মহিলার। কিন্তু তিনি রাজি হননি। তাই আবেদনকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাঁকে খালাস করা হোক। সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা পর আদালত ওই ব্যক্তির সাজা মকুব করে বেকসুর খালাস করে দেয়।
প্রশ্ন উঠছে, ঠিক কী কারণে ডিএনএ টেস্টে রাজি হল না? ‘ধর্ষক’ বাবার পরিচয়ে সন্তানকে বাঁচতে হবে বলেই কি ডিএনএ টেস্টে রাজি হলেন না? না কি টেস্টের ফল কী আসবে তা নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না তিনি। বর্তমান স্বামীর সঙ্গে তাঁর আগে থেকেই আলাপ ছিল কি না, সেই প্রশ্নও উঠে আসছে।
এই মামলার আগের একটি শুনানিতে বিচারপতি অনিন্দিতাকে প্রশ্ন তোলেন, আপনি যদি আবার বিবাহ করলেন তাহলে উনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন কেন এইভাবে কেস করলেন কেন? সন্তানটি যদি অভিযুক্তের হয়ে থাকে আপনার তো উচিত ছিল উনাকে বিবাহ করার। কেন তা না করে আপনি অন্য জনকে বিবাহ করলেন?
আরও পড়ুন: সন্তান কার, আদালতে ডিএনএ রিপোর্ট চাইলেন বাবা
বিচারপতি বলেন, তাহলে আপনার সঙ্গে বর্তমান স্বামীর কি আগে থেকেই পরিচয় ছিল? একটা লোক দীর্ঘদিন ধরে জেলে বসে রয়েছে সে কষ্ট করছে আপনি অন্য একজনকে বিবাহ করে নিয়ে সুখে আছেন এটা কি ঠিক। আপনাকে খুব ব্যক্তিগতভাবে জিজ্ঞাসা করছি অভিযুক্তকে কি জেল থেকে ছেড়ে দেবো? মাথা নেড়ে সম্মতি দেন অনিন্দিতা। তাঁর বক্তব্য, আমার বর্তমান স্বামী চায় না ডিএনএ টেস্ট হোক।
উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ থানা এলাকার বাসিন্দা অনিন্দিতাকে (কাল্পনিক নাম) গৃহশিক্ষক হিসাবে পড়াতেন নিত্যানন্দ। তার সঙ্গে অনিন্দিতার ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৪ সালে অনিন্দিতার পরিবার হেমতাবাদ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ, অনিন্দিতার যখন ১৭ বছর বয়স, তখন গৃহশিক্ষক নিত্যানন্দ তাঁকে ১১ থেকে ১২ বার ধর্ষণ করে এবং তাতে অনিন্দিতা গর্ভবতী হয়ে পড়ে। নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে নিত্যানন্দর বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা শুরু হয়।
২০১৫ সালে অনিন্দিতা এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। রায়গঞ্জের স্পেশাল কোর্টে চলে বিচার প্রক্রিয়া। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন অনিন্দিতা স্বীকার করেন যে তাঁর সঙ্গে নিত্যানন্দের ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ২০১৭ সালের ২ অগস্ট রায়গঞ্জ স্পেশাল কোর্ট নিত্যানন্দকে ৭ বছরের জেলের নির্দেশ দেয়। পরবর্তীকালে অনিন্দিতার অন্যত্র বিবাহ হয়। সন্তানটি বর্তমানে অনিন্দিতার কাছেই রয়েছে। তার বয়স তিন বছর।